ক্রাইমবার্তা রিপোট:ঢাকা: চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন (শুক্রবার) পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে ও ক্রসফায়ারে ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ক্রসফায়ারে গত ছয় মাসে অন্যান্য বাহিনীর চেয়ে পুলিশ এগিয়ে রয়েছে।
শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মানবাধিকার সংগঠন—আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এই তথ্য জানিয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, গত ছ’মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় দেশে মারা গেছেন ৩৭ জন। গণপিটুনিতে মারা গেছেন ২২ জন।
আসক জানায়, দেশের প্রধান গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, গত ছয় মাসে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সঙ্গে ক্রসফায়ারে ১৩ জন, পুলিশের সঙ্গে ক্রসফায়ারে ৪৬ জন, গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সঙ্গে ক্রসফায়ারে ৮ জন, র্যাব ও পুলিশের সঙ্গে ক্রসফায়ারে একজন, র্যাব ও পুলিশের গুলিতে একজন ও বান্দরবানের লামায় সেনাবাহিনীর গুলিতে একজন মারা গেছেন।
এছাড়া পুলিশ হেফাজতে অসুস্থ হয়ে একজন, পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর একজনের মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়। হানিফ মৃধা নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয় র্যাবের হেফাজতে।
সেনাবাহিনীর হাতে আটকের পর পুলিশ হেফাজতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতা রমেল চাকমা।
আসক বলছে, পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গত ছয় মাসে আটক ৪৪ জনের মধ্যে মাত্র ৭ জন পরিবারের কাছে ফিরে এসেছেন। ২ জনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। ৩ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়। এখনও খোঁজ নেই ৩২ জনের। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো আটকের এসব অভিযোগ অস্বীকার করছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ছয় মাসে দেশে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ১৮৫টি। এসব ঘটনায় নিহত হন ৩৭ জন। আহত হয়েছেন ২ হাজার ৫৭০ জন। এ সময়ে কারা হেফাজতে মারা গেছেন ২৫ জন। এরমধ্যে কয়েদি ৮ জন ও হাজতি ১৭ জন রয়েছেন।
যৌন হয়রানির শিকার ৫৮ জন নারী
নারী ও শিশু নির্যাতনের বিষয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্র জানায়, গত ছয় মাসে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ৫৮ জন নারী। যৌন হয়রানির কারণে ৩ জন আত্মহত্যা করেছেন। যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে একজন নারী ও চারজন পুরুষ নিহত হয়েছেন। হয়রানি ও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন ৯৫ জন নারী-পুরুষ। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২৮০ নারী। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ১৬ নারীকে। ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন ৫জন। ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছে আরও ৩৯ জন নারীর ওপর।
পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২০১ নারী। এর মধ্যে ১৪৪ নারীকে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে। নির্যাতন সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন ২৩ নারী। যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১৪৩ নারী। তাদের মধ্যে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৫৮ নারী। যৌতুকের জন্য নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে ৬৮ নারীকে। একই কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৬ নারী। স্বামীর ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে ১১ নারীকে। এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন ১৮ নারী। সালিশ ও ফতোয়ার মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৪ নারী।
একই সময়ে ২২ জন গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছে আসক। তাদের মধ্যে নির্যাতনে মারা গেছেন ৪ জন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে একজনকে। ৭ জনের মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়।
৬২৯ শিশু নির্যাতন ও হত্যার শিকার
দেশে শিশু নির্যাতন ও হত্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় মানবাধিকার বিষয়ক এই সংগঠনটি উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছে, গত ছয় মাসে দেশে ৬২৯ শিশু বিভিন্নভাবে নির্যাতন ও হত্যার শিকার হয়েছে। এরমধ্যে ১৩২ শিশুকে হত্যা করা হয়। ৩৭ শিশু আত্মহত্যা করেছে। নিখোঁজের পর উদ্ধার করা হয়েছে ১৮ শিশুকে। লাশ উদ্ধার করা হয়েছে ৪৪ শিশুর। রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে ১৫ শিশুর।
সীমান্তে নিহত ১০
সীমান্তে গত ছয় মাসে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে ৭ জন ও নির্যাতনে ৪ জন বাংলাদেশি মারা গেছেন। আহত হয়েছেন আরও ১৩ জন। অপহরণের শিকার হয়েছেন ২৫ জন। অপহরণের পর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মধ্যস্থতায় ফিরে এসেছেন ৪ জন বাংলাদেশি।
৯৮টি প্রতিমা ভাঙচুর
গত ছয় মাসে হিন্দু সম্প্রদায়ের ২৫টি বাসস্থানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, ৯৮টি প্রতিমা ভাঙচুর ছাড়াও মন্দির ও পূজামণ্ডপে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এসব ঘটনায় একজন নিহত ও ৫১ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আসক।
৫৩ সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার
একই সময়ে দেশের বিভিন্নস্থানে ৫৩ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হয়রানি, হুমকি ও পেশাগত কাজ করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। এ সময় সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে মেয়রের গুলিতে আহত স্থানীয় সমকালের প্রতিনিধি আব্দুল হাকিম শিমুল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।