হলি আর্টিজান কেন বেছে নিয়েছিল জঙ্গিরা?

হলি আর্টিজান কেন বেছে নিয়েছিল জঙ্গিরা?

জঙ্গি হামলার পর হলি আর্টিজানের অবস্থাজঙ্গি হামলার পর হলি আর্টিজানের অবস্থা

একসঙ্গে বেশি সংখ্যক বিদেশি নাগরিককে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল নব্য জেএমবির জঙ্গিরা। তারা এমন একটি জায়গা খুঁজছিল, যেখানে একই সময় একইসঙ্গে অনেক বিদেশি অবস্থান করেন এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থাও দুর্বল। হামলার দুইমাস আগে থেকেই রেকি করে এমন জায়গা খুঁজে পায় জঙ্গিরা। সেটি হলো গুলশানের কূটনৈতিক পাড়ার ‘হলি আর্টিজান বেকারি’। পরিকল্পনা অনুযায়ী, হামলার আগে তামিম চৌধুরীসহ শীর্ষ জঙ্গি নেতারা রেকি করে হলি আর্টিজান। সবকিছু দেখেশুনে ২০১৬ সালের ১ জুলাই হামলা চালায় তারা।হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা তদন্তের দায়িত্বে থাকা পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের কর্মকর্তা ও কয়েকজন জঙ্গির জবানবন্দি থেকে এমন তথ্য ওঠে এসেছে।

১৩ জানুয়ারি নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা ও হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী (৩৩) কে গ্রেফতার করে সিটিটিসি। গুলশান হামলা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। দুই দফায় রিমান্ড শেষে আদালতের কাছে দোষ ও হামলায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে সে। তার জবানবন্দিতে গুলশান হামলার পুরো পরিকল্পনা ও হামলার তথ্য পেয়েছে পুলিশ।রাজীব গান্ধী তার জবানবন্দিতে বলেন, ‘২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা থানাধীন বোনারপাড়া বাজারস্থ কলেজ মোড় সংলগ্ন সাখাওয়াত হোসেন শফিক ও বাইক হাসানের ভাড়াটিয়া বাসায় তামিম চৌধুরী, মেজর জাহিদ, সারোয়ার জাহান মানিক, তারেক, মারজান, শরিফুল ইসলাম খালিদ ও আমি মিলে হলি আর্টিজান বেকারিতে আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা করি। ওই মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয় যে, এই সন্ত্রাসী হামলায় দেশি-বিদেশি হত্যার মূল সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবে তামিম চৌধুরী ওরফে তালহা।’

তিনি আরও জানান, ‘বিদেশি হত্যার জন্য একাধিক স্পটের মধ্য থেকে হলি আর্টিজান বেকারিকে নির্বাচন করা হয়। এর নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ছিল দুর্বল।’এ বিষয়ে পুলিশের সিটিটিসির প্রধান মনিরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জঙ্গিরা রেকি করার সময় জানতে পারে হলি আর্টিজানে প্রতিদিন অনেক বিদেশির সমাগম হয়। সেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও দুর্বল। এ রেস্টুরেন্টটির অবস্থান এমন এক জায়গায় যেখানে হামলা চালানো জঙ্গিদের জন্য সুবিধাজনক ছিল। বেকারির একপাশে লেক হওয়ায় পুলিশ সহজে সেখানে যেতে পারতো না। তাই জঙ্গিরা হামলার জন্য এই স্পটটিকে বেছে নেয়।’

প্রসঙ্গত, গত বছরের ১ জুলাই রাতে গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালায় জঙ্গিরা। এতে ২ পুলিশ সদস্য, ১৭ বিদেশি নাগরিক ও তিন বাংলাদেশি নিহত হন। নিহত বিদেশিদের মধ্যে ৯ জন ইতালি, ৭ জন জাপানি ও একজন ভারতের নাগরিক। বাকি তিনজন বাংলাদেশি। এর মধ্যে একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক। নিহত ৭ জাপানির মধ্যে ৬ জন মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। ২ জুলাই সকালে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে পরিচালিত অপারেশন থান্ডার বোল্ট-এ পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়। তারা হলো, মালয়েশিয়ার মোনাশ  ইউনির্ভাসিটির ছাত্র নিবরাস ইসলাম, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, স্কলাসটিকার সাবেক ছাত্র মীর সামিহ মোবাশ্বের, বগুড়ার বিগিগ্রাম ডিইউ সেন্ট্রাল ফাজিল মাদ্রাসার সাবেক ছাত্র খায়রুল ইসলাম পায়েল, বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজের ছাত্র শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল। এছাড়া, হলি আর্টিজানের কর্মচারী সাইফুল ইসলাম চৌকিদারও নিহত হয়।এরই মধ্যে এ হামলার সঙ্গে জড়িত শীর্ষ জঙ্গি নেতা তামিম চৌধুরী, মারজানসহ অনেকেই পুলিশের অভিযানে নিহত হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে অনেকে।

Check Also

ট্রাইব্যুনালে আ.লীগ নেতাদের বিচার দেখতে এসে যা বললেন সাঈদী পুত্র

জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া সাবেক ৯ মন্ত্রীসহ ১৩ জনকে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।