ক্রাইমবার্তা রিপোট:রহিম রেজা, রাজাপুর (ঝালকাঠি) থেকে:ঝালকাঠির রাজাপুরের বড়ইয়া ইউনিয়নের আরুয়া সোনারগাঁও গ্রামে টাকা চুরির অপবাদে মোঃ রাজু হাওলাদার (১২) নামে এক শিশু স্কুল ছাত্রকে ৩ দফায় মারধর এবং হাত-পা ও চোখ বেঁধে নির্জন ভিটার পরিত্যক্ত ঘরের আড়ার সাথে গরুর রশিা¥ দিয়ে উল্টো করে ঝুলিয়ে নির্মম নিষ্ঠুর অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে। এসময় পাষাণ ওই ৩ বখাটে যুবক শিশুটির হাতের আঙ্গুলে দিয়াশলাইটের আগুনের ছ্যাঁকাও দেয়। শনিবার বিকেলের এ ঘটনায় সমস্ত শরীরের আঘাতে যন্ত্রনায় কাতরানো শিশুর পরিবার শিশুটিকে ভয়ে চিকিৎসাও দিতে পারেনি পরে রোববার দুপুরে ওই শিশুকে রাজাপুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করেছেন। রাজু আরুয়া সোনারগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণি ছাত্র এবং দিনমজুর মোতালেব হাওলাদারের ছেলে। নির্যাতনের শিকার রাজু হাওলাদার রোববার বিকেলে রাজাপুর সাংবাদিক কøাব’র সাংবাদিকদের জানান, প্রতিবেশী শরীফবাড়ির নাসির হাওলাদারের ছেলে জাকির হাওলাদারের ঘর থেকে ৮ হাজার টাকা চুরি হয় দাবি করে স্কুল ছাত্র শিশু মোঃ রাজু হাওলাদারকে বাড়ির সামনের স্কুল এলাকার ইমাম গাজির চায়ের দোকান থেকে ধরে মারধর করতে করতে স্থানীয় জাকির হোসেনের নির্জন ভিটার পরিত্যক্ত ঘরে নিয়ে যায় ওই এলাকার হানিফের ছেলে বখাটে মাদক ব্যবসায় ও মাদকসেবী সজীব হোসেন, হাকিমের ছেলে সাইদুল ও গৌরার ছেলে লিটন। সেখানে নিয়ে প্রথমে কাপড়ের টুকরো দিয়ে ওই শিশুর মুখ ও চোখ বাঁধা হয়। এরপর গরুর রশ্মি দিয়ে হাত-পা বেঁধে মাথা নিচের দিকে রেখে পা উপরের দিকে রেখে ঘরের আড়ার সাথে ঝুলিয়ে শিশুটির হাতের আঙ্গুলে দিয়াশলাইটের আগুনের ছ্যাঁকাও দেয়। দাও, লাঠি, কঞ্চি ও কাঠের টুকরো দিয়ে ঘণ্টাব্যাপি চলে ওই শিশুর ওপর এমন নির্মম নিষ্ঠুর অমানুষিক নির্যাতন। পরে শিশুটিকে মারা গেছে ভেবে টান দিয়ে রশ্মি ছিড়ে মাটিতে ফেলে দিয়ে শিশুটির সব বাঁধন খুলে দেয়। পরে শিশুটি নির্বাক হয়ে কান্নায় করে প্রান ভিক্ষায় চায় এবং তাদের হাত পা ধরে আকুতি মিনতি করলে ওখান থেকে রাজুকে ওই এলাকার একটি নদীর তীরে নিয়ে সেখানেও মারধর করা হয় এবং দোকানের সামনে এনেও মারধর করে। নির্যাতনের শিকার রাজু হাওলাদার আরও জানান, প্রতিবেশী জাকির হাওলাদারের কাছে দুপুরে গাব দেওয়ার কথা বলে রাজু রাজু ১০ টাকা দাবি করে। কিন্তু জাকিরের কাছে খুচরা টাকা না থাকায় তাকে দিতে পারেনি, পরে রাজু ওই বাড়ি থেকে চলে যায়। রাজু কোন টাকা নেয়নি বা দেখেওনি। শিশুটির মা জানান, রাজুকে যে পরিমান মারধর করা হয়েছে, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। এমনভাবে কোন মানুষ কোন মানুষকে মারতে পারেন, আর রাজু তো ছোট শিশু। তিনি রাজুর ওপর এমন অমানুষিক নির্যাতনের বিচার দাবি করেছেন। রাজাপুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আবুল খায়ের রাসেল হানান, শিশু রাজুর পুরো শরীর আঘাতে কালচে হয়ে গেছে, কোমড়ের নিচে বেশি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। শরীরের ব্যাথায় স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বেডে কাতরাচ্ছে। টাকা চুরি যাওয়া জাকির হাওলাদার জানান, ঢাকা থেকে বাড়িতে এলে রাজুকে প্রায় টাকা দিতাম, কিন্তু ওই দিন খুচরা ছিল না বিদায় দিতে পারি নাই, পরে গোসল করে এসে টাকা না পেয়ে ওকে জিজ্ঞাস করেছি মাত্র। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল তিনি কারও কাছে নালিশ বা অভিযোগও করেনি। অযথা শিশুটিকে অমানুষিকভাবে মেরেছে, তিনি নিজেই মারধরের খবর শুনে নিয়ে শিশুটিকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনিও শিশু নির্যাতনকারীদের বিচার চেয়ে এলাকায় সুধীজনের কাছে নালিশও দিয়েছেন। প্রধান অভিযুক্ত সজীব হোসেন মোবাইলে (০১৭৫৯৬৪৭৭৭৫) সাংবাদিকের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরন করে জানান, এ বিষয়ে ফোনে কিছুই বলা যাবে না, শুনতে হলে পুটিয়াখালি আসেন। নইলে ফোন রাখেন বলে লাইন কেটে দেয়। এ বিষয়ে বড়ইয়া ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য নাসির উদ্দিন জানান, রাজু ওই শিশুটি একেবারেই ছোট ও নিরীহ। তাছাড়া যার (জাকিরের) টাকা গেছে সেও শিশুটিকে মারেনি বরং শিশুটি মারধর করেছি শুনে তিনিও অনুতপ্ত। এলাকায় ফাউল (বখাটে) হিসেবে পরিচিত সজীবের নেতৃত্বে শিশুটিকে যে পরিমান মারধর করা হয়েছে, তা সহ্য করা যায় না। রাজাপুর থানার ওসি/তদন্ত হারুন অর রশিদ শিশুটিকে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে স্বীকার করে জানান, ওই শিশুকে নিয়ে তার পরিবার থানায় এসে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে, জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Check Also
সাতক্ষীরায় উগ্রবাদী সাদপন্থীদের বিরুদ্ধে তৌহিদি জনতার মানববন্ধন
নিজস্ব প্রতিনিধি ; উগ্রবাদী সন্ত্রাসী সাদপন্থীদের কর্মকান্ডের প্রতিবাদে সাতক্ষীরায় প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষের উপস্থিতিতে মানববন্ধন …