চীনের সঙ্গে দ্বন্দ্বে বড় ঝুঁকি নিচ্ছে আমেরিকা

ক্রাইমবার্তা আন্তর্জাতিক ডেস্ক :চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তার মূল পররাষ্ট্রনীতি ও কৌশলকে ‘উইন-উইন’ হিসেবে দেখতে পছন্দ করেন। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর উল্টো। তিনি শুধু জিততেই পছন্দ করেন।
উইন-উইন পররাষ্ট্রনীতির উদাহরণ হিসেবে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে গরুর মাংস আমদানির ওপর যে নিষেধাজ্ঞা ছিল তা তুলে নিয়েছে চীন। ফলে ১৪ বছর পর আবার চীনের বাজারগুলোতে পাওয়া যাবে যুক্তরাষ্ট্রের মাংস।

চীনের হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলোতে এরই মধ্যে একটা উৎসবের আমেজ লক্ষ্য করা গেছে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প ক্ষমতা নেয়ার পর একটা গঠনমূলক ও অর্থপূর্ণ সম্পর্কের নতুন যুগের যে প্রতিশ্রুতি চীনা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে করেছেন, মাংস আমদানির নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া তার অন্যতম উদাহরণ। উইন-উইন কৌশলের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার প্রয়োজন, কোনো প্রতিশোধ নয়।

তবে ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকাণ্ড দেখে মনে হয়, সে কথা তারা বেমালুম ভুলে গেছে।

বৃহস্পতিবারেই চীনের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে একসঙ্গে দুটো ঘোষণা এলো। একটি হচ্ছে, তাইওয়ানের কাছে ১৪২ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রি করার সিদ্ধান্ত এবং অপরটি হচ্ছে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগে চীনের একটি ব্যাংক, একটি কোম্পানি ও দু’জন চীনা নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ।

একই দিনে দুটো ঘোষণা চীনজুড়ে যে উৎসবের আমেজ ছিল তাকে ম্লান করে দেয়। প্রতিক্রিয়ায় চীনা সরকারের পক্ষ থেকে এর কড়া জবাব দেয়া হয়।

বৃহস্পতিবার পিপল’স ডেইলিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত কুই তিয়ানকাই বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ সব সিদ্ধান্তে চীন শক্ত প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘তাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রির সিদ্ধান্ত ও চীনা কোম্পানির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ গত এপ্রিলে ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোতে ট্রাম্প ও জিনপিংয়ের যে বৈঠক হয়েছিল সে বৈঠকের চেতনাবিরোধী।’

তিনি আরও বলেন, তাইওয়ানের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির সিদ্ধান্ত ‘এক চীন নীতি’কেও লঙ্ঘন করেছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লু ক্যাংও একই কথা বলেন।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এসব কর্মকাণ্ড ট্রাম্পের সঙ্গে জিনপিংয়ের বৈঠকে যে সব চুক্তি হয়েছিল তার পরিপন্থী। উল্লেখ্য, ওই চুক্তিগুলোর মধ্যে ২০০৩ সাল থেকে গরুর মাংস আমদানির ওপর যে নিষেধাজ্ঞা ছিল তা তুলে নেয়ার সিদ্ধান্তও ছিল।

ক্যাং বলেন, ‘চীনের ওপর থেকে যদি এসব নিষেধাজ্ঞা তুলে না নেয়া হয়, তাহলে এর পরিণতি অন্য রকম হতে পারে।’

ক্যাং বলেন, তাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রি আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। এটা ‘চীনের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার প্রতি আঘাত করেছে। তাইওয়ানকে চীন তাদের ভূখণ্ড বলে দাবি করে থাকে।

মার্কিন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচি ও ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়নের ব্যাপারে চীনের চাপ না দেয়ার কারণে ট্রাম্প বেশ হতাশ হয়েছেন। আর সে কারণেই কোরীয় উপদ্বীপে নতুন নীতির অংশ হিসেবে ট্রাম্পের এই কৌশল।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিকতম এই পদক্ষেপগুলোকে প্রতিশোধপরায়ণ বলেই মনে হচ্ছে। তবে ট্রাম্পের জন্য এই কৌশল বুমেরাং হয়ে দেখা দিতে পারে। চীনের প্রতি প্রতিশোধমূলক এ সব পদক্ষেপের মাধ্যমে ট্রাম্প অনেক কিছুই হারানোর ঝুঁকি নিচ্ছেন।

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সহযোগী অধ্যাপক ওয়াং ডং বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আমাদের পিঠে ছুরি মেরেছে।’

Check Also

ঢাকা প্রসঙ্গে বদলাতে পারে ভারতের পররাষ্ট্রনীতি

পাঁচ দশকের বিরতির পর গত মাসে বাংলাদেশের বন্দর নগরী চট্টগ্রামে একটি পাকিস্তানি পণ্যবাহী জাহাজ ডক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।