আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ২০১৩ সাল থেকে বিরোধী দলের কর্মীসহ কয়েক শ ব্যক্তিকে অবৈধভাবে আটক করেছে। তাঁদের গোপন স্থানে লুকিয়ে রেখেছে।
আজ বুধবার প্রকাশিত ‘“তিনি আমাদের কাছে নেই”: বাংলাদেশে গোপনে আটক ও গুম’ শিরোনামের ৮২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালেই কমপক্ষে ৯০ ব্যক্তি গুমের শিকার হয়েছেন। যদিও গোপনে আটকে রাখার কয়েক সপ্তাহ বা মাসের মধ্যে তাঁদের আদালতে হাজির করা হয়। কিন্তু এইচআরডব্লিউর কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, আটক হওয়া ২১ জনকে পরে হত্যা করা হয়েছে। আর নয়জনের অবস্থা অজানা।
এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদন বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা আছে। তারা এসব নিয়ে কিছু বলে না। তারা (এইচআরডব্লিউ) এত গায়ে পড়ে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে আসে কেন?’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে আপনি কাকে গুম বা নিখোঁজ বলবেন? এখানে পাওনাদারের দাবি না মেটাতে পেরে ব্যবসায়ী নিখোঁজ হয়। বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক করে কেউ কেউ নিখোঁজ হয়ে যায়। আমরা এদের উদ্ধার করে নিয়ে আসি।’
আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘কাউকে আটক করলে আমরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে আদালতের সামনে হাজির করি। তাই প্রতিবেদনটির তীব্র প্রতিবাদ করছি।’
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা দেওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এমনভাবে কাউকে ক্ষমতা দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এসব কথা অমূলক। আমাদের একটি গুলি ফুটলেও ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করে তার তদন্ত করতে হয়। সময় নিয়ে এর তদন্ত হয়। কোনো ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে তাকে বিচারের মুখোমুখি করার নজির অবশ্যই আছে।’
এইচআরডব্লিউ তালিকা দিক: কাজী রিয়াজুল
গুমের ঘটনা বেড়েছে—এ কথা অবশ্য স্বীকার করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক। তবে তাঁর কথা, গুম এবং নিখোঁজের ঘটনার বিষয়গুলো সুনির্দিষ্ট করা দরকার। রিয়াজুল হক বলেন, ‘গুমের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। রাষ্ট্রের উচিত সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। প্রথম কথা, গুম কখনোই কাম্য নয়। তবে কেউ এর শিকার হলে সরকারের উচিত এর বিচার করা। এ ঘটনা জনসমক্ষে প্রকাশ করা।’
কাউকে বাঁচিয়ে রাখা বা না রাখার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে— এইচআরডব্লিউর এশিয়া-বিষয়ক পরিচালক এ ব্র্যাড অ্যাডামসের এ মন্তব্যের সঙ্গে অবশ্য দ্বিমত প্রকাশ করেছেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘এখানে ঢালাও মন্তব্য করা হয়েছে। কাউকে এমন সুযোগ দেওয়া হয়নি। এটা অসত্য কথা।’
কাজী রিয়াজুল হক বলেন, ‘গুমের শিকার ব্যক্তিদের তালিকা যদি এইচআরডব্লিউর হাতে থাকে, তবে তা আমাদের দিক। আমরা এসব ঘটনার তদন্ত করব। এবং সরকারের কাছে জবাব চাইব।’
নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক: শীপা হাফিজা
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরাও বলছি গুমের ঘটনা বাড়ছে। এটা অত্যন্ত উদ্বেগের ব্যাপার।’ তিনি বলেন, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরাই যদি বেশি গুমের শিকার হন তবে নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। কোনো মানুষেরই এমন পরিণতি হওয়া মোটেও গ্রাহ্য করা যায় না। শীপা হাফিজা বলেন, গুম মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এ বিষয়ে এইচআরডব্লিউর মতো তারাও সরকারের প্রতি আবেদন জানাচ্ছেন, যেন প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হয়।
অধিকারের উদ্বেগ
আরেক মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের পরিচালক নাসিরউদ্দিন এলান বলেন, ধরে নিয়ে যাওয়ার অনেক পরে অনেক ব্যক্তির লাশ মেলে। অনেককে আবার অনেক দিন পর হঠাৎ কোনো জায়গায় উদভ্রান্তের মতো চলাফেরা করতে দেখা যায়। উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘ভুক্তভোগীদের পরিবারের কাছে আমরা শুনেছি, তাদের স্বজনকে তুলে নেওয়ার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়পত্রও দেখানো হয়েছে। এসব বিষয়ে থানায় জিডি করতে গেলে চরম অবহেলার শিকার হতে হয় স্বজনদের। শুধু জিডি গ্রহণেই শেষ হয়ে যায় তাদের কাজ। এরপর নিখোঁজদের ফিরিয়ে আনার কোনো তাগিদ দেখা যায় না বলেই স্বজনেরা আমাদের জানিয়েছেন।’
প্রথম আলো
এদিকে