ক্রাইমবার্তা রিপোট:শ্রমিক অধিকার নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমদ বলেছেন, শ্রমজীবী মানুষের প্রতি অবজ্ঞা, উদাসীনতা এবং শ্রমিক নিরাপত্তার পুরো বিষয়কে হালকাভাবে দেখার যে প্রবণতা দীর্ঘদিন যাবৎ চলে এসেছে, ছাড়পত্র ছাড়া বয়লার চালানোর দায়ে মাল্টি ফ্যাবস কোম্পানিকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা সেই অবজ্ঞা এবং উদাসীনতারই প্রতিফলন।
গত সোমবার (৩ জুলাই) গাজীপুরের কাশিমপুরের নয়াপাড়া এলাকার ওই পোশাক কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে ১৩ জন শ্রমিক নিহত হন। আহত হন প্রায় অর্ধশতাধিক পোশাক শ্রমিক। ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে কারখানা কর্তৃপক্ষকে মাত্র ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে শিল্পমন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রধান বয়লার পরিদর্শকের কার্যালয়। সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলছেন, যদিও কর্তৃপক্ষ বলছে, আইন অনুযায়ীই তারা কারখানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে কিন্তু আমি বলবো, এ কাজটি তারা অবচেতন মনেই করেছে।
বয়লার সংক্রান্ত নিয়মকানুন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইনটি ১৯২৩ সালে প্রণীত হয়। আইনটির ছোট খাটো সংশোধন হলেও ব্যাপক কোন সংশোধন হয়নি। মূলত বাংলাদেশে শিল্প কারখানা যে গতিতে গড়ে উঠেছে সে তুলনায় কারখানা ও শ্রমিক নিরাপত্তা, শ্রমব্যাবস্থাপনা, শ্রমিক-মালিক সম্পর্কের যথাযথ নীতিমালা গড়ে ওঠেনি। সেগুলো বয়লার সংক্রান্ত আইনের মতোই পুরনো, আংশিক এবং সীমাবদ্ধ।
পোশাক খাতে নিরাপত্তার ইস্যু বর্তমানে বেশ আলোচিত। অথচ ১৯২৩ সালে প্রণীত ও বলবৎ থাকা বয়লার আইনটি দৃষ্টির বাইরে থেকে গেছে কেন?
প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, শুধু বয়লার আইন নয়, এমন অনেক কিছুই আছে যা আমাদের দৃষ্টির বাইরে থেকে গেছে।শিল্প বিস্তারের গতির সাথে তাল মিলিয়ে অনেক পদক্ষেপই গ্রহণ করা হয়নি। আসলে এগুলো ইচ্ছে করেই করা হচ্ছে না। যাতে মালিকরা সবসময় এধরনের ছাড়পত্র পায়। তারা বিনিয়োগ করবে, ব্যবসা করবে এবং সেখানে খুব বেশি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হবে না। বাজার অর্থনীতি মানেই হচ্ছে মালিকদেরকে নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে ব্যবসা করতে দেয়া হবে, এরকম একটি ভুল দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হচ্ছে। এধরনের দৃষ্টিভঙ্গি সব যায়গায় প্রতিফলন হচ্ছে এবং প্রাণ হারাচ্ছে শ্রমজীবী মানুষ। এ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বেরিয়ে এসে প্রত্যেক শিল্প কারখানায় সামগ্রিক ব্যাবস্থাপনা তৈরি করতে হবে।
বাংলাদেশে তাজরিন গার্মেন্টস ও রানা প্লাজায় বড় ধরনের দুইটি দুর্ঘনার পর কারখানা পরিদর্শনের ব্যাবস্থা করা হয়েছে। দেশে ও বিদেশে আলোচনা-সমালোচনার প্রেক্ষিতে তৈরি করা সে ব্যবস্থাপনা কেন কাজে আসছে না?
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, খণ্ডিত দৃষ্টিভঙ্গির জন্য এগুলো কাজে আসছে না। কেবল তৈরি পোশাক শিল্পেই সমস্ত পরিদর্শন ব্যাবস্থার কথা বলা হচ্ছে, তাহলে বাকিগুলোর কী হবে ? মাত্র দুই মাস আগে এরচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে দিনাজপুরের বয়লার বিস্ফোরণে। যেহেতু সেটি প্রত্যন্ত এলাকা তাই সেটি নিয়ে কথা নেই। আন্তর্জাতিক উদ্যোগে বলা হচ্ছে ভবন অবকাঠামো, বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা। নিরাপত্তা কখনো একক ঘটনাকে কেন্দ্র করে হতে পারে না। নিরাপত্তা হতে হবে সামগ্রিক। বয়লার দুর্ঘটনায় পথচারিও মারা যাচ্ছে, প্রতিবেশি মারা যাচ্ছে। এর আগে মারা গেছে স্কুল শিক্ষিকা, রিকশা চালক। সুতরাং যতদিন নিরাপত্তাকে খণ্ডিতভাবে দেখা হবে, জীবনের নিরাপত্তা না দিয়ে ব্যবসার নিরাপত্তা দেব, ততদিন বিষয়গুলো জোড়াতালির মতো চলবে। বিবিসি বাংলা