ক্রাইমবার্তা রিপোট:সুপ্রিম কোর্টের বিচারক অপসারণের ক্ষমতায় সংসদের হাত থেকে চলে যাওয়ায় সরকারের মাঝে এক বিমর্ষ ভাব তৈরি হয়েছে এবং হতাশা জন্ম হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
ফাইল ছবি
তিনি বলেন, এখন তারা ভাবছে আবার সামনে কোনো বিপদের মুখে না পড়ি! যে সরকার জীবন এবং চলাচলকে আদালতের বারান্দার মধ্যে জেলখানার মধ্যে বন্দি করে রেখেছে তাদের হাতে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা গেলে ওই সংসদ হবে নেকড়েদের খোয়াড়। বিরোধী দলের লাশের ওপর তারা সংসদের ইমারত নির্মাণ করবে।
আজ সোমবার সকালে এক প্রতিবাদ সভায় অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী এসব বলেন।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব কারাবন্দী আসলাম চৌধুরীর (এফসিএ) মুক্তি দাবিতে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর রুনি মিলনায়তনে এই প্রতিবাদ সভা হয়। একই দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনের আয়োজন করে আসলাম চৌধুরী মুক্তি পরিষদ। কিন্তু মানববন্ধনে পুলিশ বাধা দেয়ায় ডিআরইউতে তাৎক্ষণিকভাবে এই প্রতিবাদ সভা হয়।
সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক জসীম উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভায় অন্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নেতা কাদের গনি চৌধুরী, শফিউল বারী বাবু, আব্দুল কাদের ভুইয়া জুয়েল, সুশীল বড়–য়াসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী বলেন, আজকে এই সরকার শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাসনকালকে অন্যায় এবং অন্যায্য বলছে। আরে ভাই, জিয়াউর রহমানের জন্ম না হলে তো বাংলাদেশের স্বাধীনতার বাঁশিতে ফুঁ দেয়ার লোক মিলতো না। একদলীয় শাসনের পরিবর্তে বহুদলীয় গণতন্ত্রের রাজনীতি বাংলাদেশে থাকতো না। শুধু তাই নয়, আজকে যে শেখ হাসিনা ভারতকে ট্রানজিট দিয়েছেন, আমাদের স্বাধীনতাকে বিপন্ন করেছেন পার্শ্ববর্তী একটি রাষ্ট্রের কাছে। আমাদের জীবন-জীবিকা এবং বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করেছেন ভারতের আগ্রাসনের কাছে। সেখান থেকে মুক্ত করেছেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। আর আপনারা তো ভারতে পালিয়ে গেছেন। নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়েছিলেন। অথচ যিনি স্বাধীনতার মন্ত্র শোনালেন তার শাসনকাল অন্যায্য হয়ে গেল!’
তিনি সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ‘এই সরকার জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসেনি। তাদের জনগণের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা নেই। আসলে সরকার ভোটারবিহীন এবং ভোটাধিকারবিহীন ভাবেই ক্ষমতায় থাকতে চায়। ভোটবিহীন সরকার ক্ষমতার মজার কারণেই ভোটারবিহীন থাকতে চায়। এভাবে চলতে পারে না। চলতে দেয়া যায় না।
আসলাম চৌধুরীর মুক্তি প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র এই নেতা বলেন, আজকে আসলাম চৌধুরীকে বন্দি করা হয়েছে। যে অপরাধের কথা বলা হচ্ছে যে ইসরাইলের একজন কর্মকর্তার সাথে তিনি কথা বলেছেন। সেটা ফেসবুকে এসেছে। কিন্তু অন্যায় কি হয়েছে? পৃথিবীর বহু আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের লোক আসে। তাহলে অন্যায়টা কি? আসলাম চৌধুরী কি বলেছেন সেটা তো বলেননি।
তিনি সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ‘আপনি এবং আপনার যারা সমর্থক, বাংলাদেশ সরকারকে যারা টিকিয়ে রেখেছে তাদের প্রধানমন্ত্রী (নরেন্দ্র মোদি) তো ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর সাথে গলা মেলাচ্ছেন। কিন্তু ভারতের ঘোষিত নীতি ছিল ফিলিস্তিনের পক্ষে। কই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তো একটারও প্রতিবাদ করলেন না। অথচ এখনো বাংলাদেশের পাসপোর্টে আছে ইসরাইলের সাথে কোনো সম্পর্ক রাখা যাবে না। আসলে ক্ষমতায় থাকার জন্য সরকার নিজের দেশকে বিক্রিও করে দিতে পারে। সুতরাং সময় এসেছে লায়ন আসলাম চৌধুরীকে আর বেশিদিন কারাগারের লৌহকপাটে আটকে রাখা যাবে না। সময় এসেছে আপনাদেরকেই আদালতের বারান্দায় ঘুরতে হবে। জনগণের বিজয় হবে এবং আসলাম চৌধুরীরা মুক্তি পাবে।’
প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনে পুলিশী বাধার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে রিজভী বলেন, ‘এই সরকারের পুলিশ বলছে মানববন্ধন করলে নাকি প্রধানমন্ত্রীর চলাচলে বিঘœ হবে। এখানে প্রধানমন্ত্রীর অসুবিধা কি হবে? আরে ভাই, বিএনপির একটু ক্ষীণ কথা শুনেও যদি আপনাদের শঙ্কা হয় তাহলে প্রধানমন্ত্রীত্ব করার দরকার কি? কিন্তু শেখ হাসিনার দরকার আছে। কারণ তিনি ক্ষমতা চলে গেলে কি পরিস্থিতি হয় সেই আশঙ্কায় তিনি পুলিশ বাহিনী নিজের মতো করে সাজিয়েছেন। আইন শৃঙ্খলার অন্যান্য সংগঠন নিজের মতো করে সাজিয়েছেন। নিজের নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। কিন্তু নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হলে তার এই আশঙ্কা ও ভয় থাকতো না।’