ক্রাইমবার্তা রিপোট:গুম হওয়া মানুষের পরিবারগুলোর নীরব কান্না থেমে নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রীদের চোখের পানি না আসলেও গুম হওয়া, খুন হওয়া, নির্যাতনের শিকার হওয়া স্বজন ও সহকর্মীদের চোখের পানিতে এখন বাংলাদেশ ভাসছে। এগুলোর বিষয়ে কী কোনো জবাব দিতে পারবেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক? এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের তালিকা চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানীতে নিখোঁজ হওয়া নেতাকর্মীর সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশ করেছে বিএনপি। মঙ্গলবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী এই তালিকা প্রকাশ করেন।
তারা হলেন-সাবেক এমপি এম ইলিয়াস আলী, সাইফুল ইসলাম হীরু, দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য চৌধুরী আলম, বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবির পারভেজ, তেজগাঁও ছাত্রদল সভাপতি আমিনুল ইসলাম জাকির, তেজগাঁও বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমন, তার খালাতো ভাই জাহিদুল করিম (তানভীর), পূর্ব নাখালপাড়ার আবদুল কাদের ভুঁইয়া (মাসুম), পশ্চিম নাখালপাড়ার মাজহারুল ইসলাম (রাসেল), মুগদাপাড়ার আসাদুজ্জামান (রানা), উত্তর বাড্ডার আল আমিন, বিমানবন্দর থানা ছাত্রদল নেতা এ এম আদনান চৌধুরী ও কাওসার আহমেদ, সবুজবাগ থানা ছাত্রদলের সভাপতি মাহাবুব হাসান, খালিদ হাসান (সোহেল) ও সম্রাট মোল্লা, জহিরুল ইসলাম (হাবিবুল বাশার জহির), পারভেজ হোসেন, মো. সোহেল ও মো: সোহেল চঞ্চল, নিজামউদ্দিন মুন্না, তরিকুল ইসলাম ঝন্টু, কাজী ফরহাদ, সেলিম রেজা পিন্টু, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন কুসুম।
রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গুম ও নিখোঁজ হওয়া মানুষের খোঁজ পান না। নির্বিচারে কালবৈশাখীর গর্জনের মতো আওয়ামী নেতারা যখন অবলীলায় মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছেন এবং বলছেন তালিকার কথা। আমি একটা অতিসংক্ষিপ্ত তালিকা শুধু ঢাকা শহরের তার কাছে উপস্থাপন করলাম। আরো অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও পেশার মানুষের কথা না-ই বললাম। এর সাথে অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থা যে তালিকা দিয়েছেন তা প্রকাশ করতে অনেক সময় লাগবে বলে তা আর দিলাম না।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে কেবল ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন স্থান ও পাশ্বর্বতী জেলা থেকে কমপক্ষে ৫০ জনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ধরে নিয়ে যায়। গুম হওয়ার ব্যক্তিদের বেশিরভাগই বিএনপি বা ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের থেকে পাওয়া তথ্য মতে শুধু ২০১৩ সাল থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ৪৩৫ জন ব্যক্তি গুম হয়েছেন। দেশব্যাপী একের পর এই ধরনের গুম-অপহরণ ও বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সর্বত্র আতঙ্ক বিরাজ করছে।
রিজভীর এরকম অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ৭ জুলাই ময়মনসিংহে সাংবাদিকদের কাছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপির কাছে গুম হওয়া নেতাকর্মীদের তালিকা চান।
মঙ্গলবার বিকেলে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এসময় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিবউন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জু, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আজিজুল বারী হেলাল, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, আবদুল আউয়াল খান, আমিনুল ইসলাম, গাজীপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, গুম হওয়া মানুষের পরিবারগুলোর নীরব কান্না থেমে নেই। স্বজনের বেদনার্ত আওয়াজ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কানে ঢুকে না। এমনকি সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কারো কর্ণকুহরে যেন এদের কান্নার শব্দ প্রবেশ করে না। হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলোর স্বজনেরা জানতেও পারেননি তারা এখন জীবিত না মৃত? এগুলোর বিষয়ে কী জবাব দিতে পারবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। আওয়ামী মন্ত্রী-নেতাদের চোখে পানি না আসলেও গুম হওয়া, খুন হওয়া, নির্যাতনের শিকার নেতাকর্মীদের স্বজন ও সহকর্মীদের চোখের পানিতে এখন বাংলাদেশ ভাসছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, বুকভরা বেদনা নিয়ে অপেক্ষায় আছে নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনেরা। সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্রমেই বাড়ছে নিরাপত্তাজনিত আতঙ্ক। শুধু গুম আর অপহরণই নয়, বরং তাদের পেটুয়া বাহিনীর হাতে নির্যাতিত লাখ লাখ মানুষ এখন কাঁদছে। এদের রোদনভরা অপেক্ষার খবরে তো ওবায়দুল সাহেবদের চোখের পানি ঝরবে না। কারণ ক্ষমতার জৌলুসে রক্তাক্ত অনাচারগুলো না দেখারই কথা। আর আওয়ামী নেতারা নিখোঁজ মানুষদের স্বজনদের দুঃখ-বেদনা ও কান্না নিয়ে উপহাস করছেন। তারা হায়েনার হাসি হাসছেন।
রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন যে, বিএনপি নেতারা এখন প্রেস ব্রিফিং করে এবং কাঁদে। আর কাঁদতে কাঁদতে আমাদের পানি শুকিয়ে গেছে। মানুষের মৃত্যু নিয়ে, গুম নিয়ে, স্বজনকে আহজারি নিয়ে কত ভয়ঙ্কর মশকরা, কত ভয়ঙ্কর উপহাস, কত ভয়ঙ্কর তাচ্ছিল্য করতে পারে আওয়ামী নেতারা। কারণ নেকড়ে যখন রক্ত পান করে তখন নেকড়ের কোনো অনুশোচনা থাকে না, হায়নার যখন রক্ত পান করে তখন অনুশোচনা থাকে না। হায়নার হাসি বলে একটা কথা আছে। আমরা আওয়ামী নেতাদের মুখ থেকে হায়নারের হাসি দেখতে পাচ্ছি। কয়েকদিন আগে হবিগঞ্জ যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরব আলীকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও অদ্যাবধি আদালতে হাজির না করায় উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে তাকে আদালতে হাজির করার দাবি জানান রিজভী। একইসাথে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত কমিশনার বিএনপি নেতা হান্নান মিয়া হান্নু, ফয়সল সরকার, সফিউদ্দিন শফি, তানভীর আহম্মেদ, মো. শহীদ ও অলোককে মিথ্যা মামলায় কারাগারে প্রেরণের নিন্দা জানান তিনি।
কবি ফরহাদ মজহার অপহরণের ঘটনাকে নাটক বানানোর ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, সরকারের সর্বশেষ আক্রোশের শিকার হয়েছেন বিশিষ্ট কলামিস্ট, কবি, লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফরহাদ মজহার। তিনি এখন এতোটাই মানসিক আঘাতপ্রাপ্ত যে শোনা যাচ্ছে যে মানুষজন ও আত্বীয় স্বজনদেরও চিনতে পারতে নাকী কষ্ট হচ্ছে তার। অথচ তার অপহরণের ঘটনাকে এখন নাটক বানাতে নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরু করেছে সরকার। কিন্তু তাদের কোনো চক্রান্ত ফরহাদ মজহারের অপহরণ ঘটনাকে সাজানো নাটক বলে মানুষকে বিশ্বাস করাতে পারবে না। মানুষ যা বুঝার তা ইতিমধ্যে উপলব্ধি করেছেন, বুঝে গেছেন।
এছাড়া আগামীকাল দেশের বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ঘিরে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রাথী এবং সমর্থকদেরকে সরকারী দলের লোকজন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হুমকি প্রদর্শন করছে বলে রিজভী অভিযোগ করেন। এছাড়া অনেকের বাড়িতেও হামলা চালানো হচ্ছে বলে তিনি জানান। এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান রিজভী।