নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা নিয়ে সরকারের কোর্টে বল ঠেলে দিতে চায় মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। জনমত পক্ষে রেখে বিএনপি এমন প্রস্তাব দেবে, যা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মানতে বাধ্য হবে। দলের হাইকমান্ড মনে করেন, ক্ষমতাসীনরা সহজেই তাদের দাবি মেনে নেবে না। এজন্য সরকারের ওপর স্থানীয় জনগণসহ দেশি-বিদেশি চাপ তৈরি করতে হবে। ধীরে ধীরে পরিস্থিতিকে ওই পর্যায়ে নিতে হবে। এ লক্ষ্যে সহায়ক সরকারের প্রস্তাব তৈরির পাশাপাশি আন্দোলনের রোডম্যাপও চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। সব দিক মাথায় রেখে নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখার খসড়া নিয়ে দ্বিতীয় দফা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এর আগে ১৯ জুন প্রথমবারের মতো সহায়ক সরকারে রূপরেখা নিয়ে বৈঠক করেন তিনি।
শনিবার রাতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে রূপরেখা তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ‘থিঙ্কট্যাংক’ ছাড়াও দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতা উপস্থিত ছিলেন। দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে রূপরেখার খসড়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ সময় খসড়ায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। সংবিধানের ভেতর থেকে কীভাবে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের প্রস্তাব দেয়া যায়, সে ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়া হয়। এছাড়া সংবিধানের বাইরে থেকেও দুটি ফর্মুলা তৈরি করা হয়েছে। এ তিন রূপরেখার কোনটিতেই কে সরকারপ্রধান হবেন, সে ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হবে না। আলোচনার টেবিলে তা চূড়ান্ত করা হবে।
এদিকে চূড়ান্ত রূপরেখা নিয়ে ১৫ জুলাই লন্ডন সফরে যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সন্ধ্যা ৭টায় এমিরাটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তার ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে। সেখানে বড় ছেলে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর পরিবারের সঙ্গে প্রায় এক মাস সময় কাটাতে পারেন বলে জানা গেছে। তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনকালীন রূপরেখা এবং প্রয়োজনে আন্দোলনের রোডম্যাপ চূড়ান্ত করবেন খালেদা জিয়া। লন্ডন থেকে ফিরে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হবে। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে নির্বাচনকালীন সহায়ক সররকারের রূপরেখা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা প্রত্যাশা করি নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার নিয়ে সৃষ্ট সংকটের একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান হবে। আমাদের নেত্রী শিগগিরই জাতির সামনে সহায়ক সরকারের প্রস্তাব দেবেন। এটুকু বলা যায়, অযৌক্তিক কোনো প্রস্তাবনা এতে থাকবে না, যা থাকবে তাতে দেশের জনগণ বুঝবে যে, বিএনপি শুধু সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনই চায়।
শনিবার বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুর রশীদ সরকার, আবদুল হালিম, ক্যাপ্টেন (অব.) সুজাউদ্দিন, ইসমাইল জবিউল্লাহ ও দলের থিঙ্কট্যাংক হিসেবে পরিচিত ড. মাহবুবউল্লাহ।
চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এমন একটি রূপরেখা দিতে চান, যা ভবিষ্যতে নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়টি স্থায়ী রূপ পায়। দুই নেত্রী একই টেবিলে আলোচনায় বসলে একটি যৌক্তিক সমাধান আসবে। অতীতে এমন উদাহরণও আছে। সংবিধানের বাইরে থেকে দেয়া রূপেরেখা ক্ষমতাসীনরা মেনে নেয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ ক্ষমতাসীনরা বারবার বলে বেড়াচ্ছেন, সংবিধানের বাইরে তারা কিছুই করবেন না। তাই সরকারি দলের এমন মনোভাব গুরুত্ব পেয়েছে তৃতীয় রূপরেখার খসড়ায়।
এছাড়াও বৈঠকে সংবিধানের বাইরে থেকে আরও দুটি প্রস্তারের খসড়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ দুইটিতে অন্য কাউকে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের প্রধান করার প্রস্তাব দেয়া হবে। সেক্ষেত্রে সুশীল সমাজের বিশিষ্ট কাউকে এ পদে ভাবা হতে পারে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাশাপাশি বড় দলগুলোকে নিয়ে ওই সরকারের মন্ত্রিসভা গঠনের কথা বলা হবে। পাশাপাশি দুই দলের সমঝোতার ভিত্তিতে ’৯১ সালের মতো নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে একটি সরকার গঠনের প্রস্তাব থাকবে।
জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, প্রস্তাবে কী থাকবে, সেটি শিগগিরই জনগণের সামনে তুলে ধরবেন আমাদের চেয়ারপারসন। আমাদের লক্ষ্য, সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। আশা করি, সরকারও এ ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসবে।যুগান্তর।