সবিধান সম্মতভাবে বিএনপিকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ থাকলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবার তা দেবে। একাদশ নির্বাচনে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো ‘নো রিটার্ন পজিশন’-এ থাকবে না ক্ষমতাসীনরা। সংবিধানের মধ্য থেকে ছাড় দেওয়ার আভাস মিলছে অনেক নেতার মুখ থেকেই। অনেক সুযোগ রয়েছে বলেও স্বীকার করেছেন একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা। সেই ছাড় কী ধরনের হতে পারে, তা এখনও পরিষ্কার করেননি তারা। তবে নো রিটার্ন পজিশনে না থাকার কারণ ব্যাখ্যা করে নেতারা বলেন, প্রতিবেশী রাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা বাংলাদেশে এবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। বিভিন্ন উপায়ে সেই বার্তাও ইতোমধ্যে পেতে শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচন ঘনিয়ে আসলে আন্তর্জাতিক দেনদরবার আরও বাড়বে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরাও আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৎপর থাকবে। এর ফলে ‘নো রিটার্ন পজিশন’ গ্রহণ থেকে বিরত থাকবে আওয়ামী লীগ সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে সরকার ও দলের এ অবস্থানের কথা প্রকাশ্যে নেতারা বলতে অপারগতা প্রকাশ করলেও নানাভাবে আভাস দিয়ে যাচ্ছেন। দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নীতি-নির্ধারকরা আরও জানিয়েছেন, নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, পাল্টাচ্ছে পরিবেশ-পরিস্থিতিও।
সংবিধান সম্মতভাবে এগিয়ে আসলে বিএনপিকে ছাড় দেওয়া হবে, মাঠে-ঘাটে এমন বার্তাও দিচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। বিএনপি নির্বাচনের বাইরে যে থাকবে না, এটা ক্ষমতাসীনরা নিশ্চিত। দলীয় ফোরামে শেখ হাসিনা নেতাদের অবহিত করেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে। ফলে প্রস্তুতিতে যাতে কোনও ঘাটতি না থাকে তার নির্দেশনা দিচ্ছেন তিনি।
দলীয় ফোরামের বিভিন্ন সভায় উপস্থিত থাকা একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী দলের প্রায় সবগুলো সভাতেই নেতাদের অবহিত করেন যে, বিএনপি আগামী নির্বাচনে আসবে। ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন এবার হবে না।তাই সবাইকে চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে আসতে হবে। নাম প্রকাশ না করে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে সংবিধানের ভেতরে কোনও ফাঁকফোকর থেকে থাকলে সেটুকু পাবে বিএনপি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে সংবিধানের ভেতরে থাকা সকল সুযোগ-সুবিধা সব রাজনৈতিক দলই পাবে। আওয়ামী লীগ সংবিধান সমুন্নত রেখে কাজ করবে।’
নীতি-নির্ধারকরা জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সর্বত্র প্রস্তাব থাকবে সংবিধানের বাইরে যাওয়া যাবে না। সংবিধানই হবে অন্যতম প্রস্তাব।
জানা গেছে, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সংলাপ করার যে কথা শোনা যাচ্ছে, সেখানেও আওয়ামী লীগ সংবিধানের বিষয়টি তুলে ধরবে। তারা মনে করে, রাষ্ট্রপতিও যদি এমন কোনও আয়োজন করেন সেখানেও তারা সংবিধান অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়ার কথাই বলবেন। আর সংবিধানের ভেতরে থেকে নির্বাচন হওয়া মানেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে।
নীতি-নির্ধারকরা বলছেন, সংবিধানের মধ্যে থেকে যদি সমঝোতার সুযোগ থাকে, সেক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা আওয়ামী লীগের ভেতরে রয়েছে। আর এটা মেনে নিয়ে বিএনপি নির্বাচনে আসলে অন্য বিষয়গুলোও সমাঝোতার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সহায়ক সরকারের নামে সংবিধান ও শেখ হাসিনার প্রস্তাবের বাইরে গিয়ে বিএনপি অনড় থাকলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে সরকার কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করবে না।
একই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ। তিনি বলেন, ‘সংবিধান অনুসরণ করেই নির্বাচন হবে। এর বাইরে যাওয়ার কোনও সুযোগ নাই। ফলে সংবিধান অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা সব রাজনৈতিক দলই পাবে।’
দলটির আরেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মনে করে আগামী নির্বাচন অবশ্যিই অংশগ্রহণমূলক হবে। আর সেই নির্বাচন হবে সংবিধান সম্মতভাবে। নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে সংবিধানই হবে একমাত্র সমাধান। সেখানে যার যে অধিকার, তা নিশ্চয়ই নিশ্চিত করবে বর্তমান সরকার। বাংলা ট্রিবিউন