মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন।
তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক ডা. জুলফিকার লেনিন আমাকে ফোন করে জানান যে, প্রধানমন্ত্রী মুক্তামনির বিষয়ে খোঁজ নিয়েছেন। তিনি শিশুটির চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করবেন।’
তিনি জানিয়েছেন, ডা. জুলফিকার লেনিন বুধবার ঢামেকে মুক্তামনিকে দেখতে আসবেন।
এদিকে, সংবাদ জানার পর প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কতৃজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন মুক্তামনির বাবা ইব্রাহীম হোসেন।
আনন্দিত হয়ে ইব্রাহীম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমার মেয়ের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করায় আমি খুশি। আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ।’
এর আগে মঙ্গলবার সকালে সাতক্ষীরা থেকে ১২ বছরের শিশু মুক্তামনিকে ঢামেক হাসপাতালে আনা হয়। সে ঢামেকের বার্ন ইউনিটে এখন চিকিৎসাধীন রয়েছে। এর পরপরই বার্ন ইউনিটের সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন তার চিকিৎসার সব দায়ভার গ্রহণ করেন।
তিনি শিশুটির রোগের এই অবস্থা দেখে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের খুবই কষ্ট লাগে যখন দেখি এসব রোগীকে অবহেলা করা হয়। সকালে মেয়েটিকে আমাদের কাছে নিয়ে আসা হয়েছে। যদি আরও আগে তাকে নিয়ে আসা হতো তাহলে আরও ভালো হতো। আমরা তাকে ভর্তির ব্যবস্থা করেছি। শিশুটিকে পর্যবেক্ষণ করে তার প্রয়োজনীয় সব চিকিৎসা দেওয়া হবে।’
ডা. সামন্ত লাল সেন আরও বলেন, ‘বার্ন ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক ডা. আবুল কালামকে প্রধান করে ৮ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি আলসার। মুক্তা রক্তশূন্যতা ও অপুষ্টিতে ভুগছে। ওর শরীরে ইনফেকশন আছে। ফিট হতে আরও ২ সপ্তাহ সময় লাগবে।
মুক্তামনি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কামারবাইসা গ্রামের মুদি দোকানি ইব্রাহীম হোসেনের মেয়ে। ইব্রাহীম হোসেন দাম্পত্য জীবনে দুই যমজ কন্যা ও এক পুত্রসন্তানের জনক। তার দুই যমজ সন্তানের মধ্যে হীরামনি বড় ও মুক্তামনি ছোট। আর ছোট ছেলে আল-আমিনের বয়স এক বছর তিন মাস।
মুক্তামনির বাবা ইব্রাহীম হোসেন জানিয়েছেন, জন্মের প্রথম দেড় বছর ভালোই ছিল হীরামনি ও মুক্তামনি। তার কিছুদিন পর মুক্তামনির ডানহাতে একটি ছোট মার্বেলের মতো গোটা দেখা দেয়। এরপর থেকে তা বাড়তে থাকে। সাথে চলে স্থানীয় চিকিৎসাও। দেখলে মনে হবে গাছের বাকলের (ছালের) মতো ছেয়ে গেছে পুরো হাতটি। আক্রান্ত ডান হাত তার দেহের সব অঙ্গের চেয়েও ভারি হয়ে উঠেছে। ভেতরে পোকা জন্মেছে। যন্ত্রণায় মুক্তামনি সব সময় অস্থির। ডাক্তার বলছেন এ ব্যাধি তার দেহের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে।
ইব্রাহীম হোসেন আরও জানিয়েছেন, মুক্তার সারাদেহে রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। তার শরীর শুকিয়ে যাচ্ছে। শুধু হাতের ভার বাড়ছে। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে দেখানো হয়েছে মুক্তামনিকে। কেউ কোনো সঠিক চিকিৎসা দিতে পারেননি। রোগের মাত্রা শুধু বেড়েই চলেছে। অর্থাভাবেহতাশ বাবা ইব্রাহীম গত ছয় মাস যাবত চিকিৎসাবিহীন অবস্থায় মুক্তাকে বাড়িতে রেখে কেবল ড্রেসিং করছে।
তবে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়। শেষ পর্যন্ত মেয়েকে নিয়ে ঢামেকে আসেন ইব্রাহীম। এখন প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়ায় বেশ খানিকটা খুশি ইব্রাহীমসহ পরিবারের সবাই। যদিও চিকিৎসায় শেষ পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবনে ফেরতে পারবে কিনা মুক্তামনি, তা এখনও বলতে পারছেন না চিকিৎসকরা।