টাকা দিতে দেরি করায় ভাড়াটিয়াকে গুলি

ক্রাইমবার্তা রিপোট:ঢাকা: রামপুরা থানায় ফোন এল ১৯৯/এ, উলন রোডের চারতলার বাসার নিচতলায় পরপর পাঁচ থেকে ছয়টি গুলির ঘটনা ঘটেছে।

ঘটনা ঘটে গত মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায়।

টাকা দিতে দেরি করায় ভাড়াটিয়াকে গুলি

ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) টহল দলসহ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান।

তারা জানতে পারেন, ওই বাড়ির মালিক এস এম আবদুর রহমান (৮৫) তার লাইসেন্সকৃত রিভলবার থেকে পাঁচ থেকে ছয়টি গুলি করেছেন। এস এম আবদুর রহমান বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য। একটি গুলি বাড়ির নিচতলার পশ্চিম পাশের ভাড়াটে দ্বীপ দীপ্তি লন্ড্রি অ্যান্ড সেলুনের মালিক নারায়ণ চন্দ্র দাসের (৪৭) ডান কাঁধের পেছনের চামড়ায় লাগে। এতে তিনি আহত হয়েছেন।

তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ, আবদুর রহমানের স্ত্রী ও অন্য স্বজনেরা বিভিন্ন কৌশলে তাকে বাইরে আসার জন্য অনুরোধ করলে তিনি দরজা বরাবর আরও একবার গুলি করেন। ওই গুলি দরজা ভেদ করে তার স্ত্রীর গলার পাশ দিয়ে চলে যায়। এতে স্ত্রী সামান্য জখম হন।

এরপর পুলিশসহ অন্যরা নিরাপদ দূরত্বে সরে যান। পরে ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসে পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেন।

আত্মীয়রা বলেন, এস এম আবদুর রহমানের তিন মেয়ের মধ্যে রতœা ও ছবি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এবং রুবি যুক্তরাজ্য থাকেন। দুই ছেলের মধ্যে শাহীন বাংলাদেশে লাইট ফ্রিজের ব্যবসা করে এবং মাসুদ অষ্ট্রেলিয়াপ্রবাসী। তিনি স্ত্রীর বাড়ির তৃতীয় তলায় থাকেন।

গত এক মাস একাকী নিচতলার একটি কক্ষে থাকেন। সম্প্রতি তার আচরণে পরিবর্তন এসেছে। তিনি তার স্ত্রী-সন্তানকে সহ্য করতে পারছিলেন না। তিনি যা ইচ্ছা তাই করতেন। কিছুদিন আগে বাসায় আইনজীবী ডেকে এ বাড়িটি তার নিজের নামে লিখে দেওয়ার জন্য স্ত্রীকে চাপ প্রয়োগ করেন। কিন্তু স্ত্রী দলিলে সই না করায় স্ত্রীর প্রতি ক্ষিপ্ত হন এস এম আবদুর রহমান।

এস এম আবদুর রহমান নারায়ণ চন্দ্র দাসের কাছ থেকে প্রতিদিন এক হাজার টাকা নিয়ে ইচ্ছেমতো খাওয়াদাওয়া করতেন। ডায়াবেটিক রোগ থাকা সত্ত্বেও খাওয়ার কোনো নিয়ম মানতেন না। ঘটনার দিন সকালবেলা বিমানবাহিনীর এই অবসরপ্রাপ্ত সদস্য ফোনে নারায়ণের কাছে এক হাজার টাকা চান। নারায়ণ জানান, দোকান খোলার পর টাকা দেবেন। চাওয়ামাত্র টাকা না পেয়ে তিনি নিজের কক্ষের মধ্যে ঢুকে তার লাইসেন্স করা রিভলবার দিয়ে কক্ষের ভেতরে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকেন।

এস এম আবদুর রহমানের মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ও সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে পুলিশ উদ্ধার অভিযান থেকে বিরত থাকে এবং তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। এভাবেই কেটে যায় একটি দিন। পরের দিন, বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আবদুর রহমান হাতে ধারালো দা নিয়ে দরজায় কোপাতে শুরু করেন এবং চিৎকার করতে থাকেন। একপর্যায়ে তিনি কিছুটা ক্লান্ত হয়ে ধারালো দা হাতে চেয়ারে বসে পড়লে পুলিশ পশ্চিম পাশের প্লাইউড ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে তাকে জাপটে ধরে। হাত থেকে দা কেড়ে নিয়ে রিভলবার হেফাজতে নেয় পুলিশ।

এস এম আবদুর রহমানের রিভলবার পরীক্ষা করে দেখা যায়, রিভলবারে থাকা সব গুলি খরচ করা হয়েছে। তার সঙ্গে থাকা ব্যাগের ভেতর ৩৩টি গুলির খোসা পাওয়া গেছে। আবদুর রহমানকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

আহত ব্যক্তিদেরও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে রামপুরা থানার পুলিশ। তবে ৮৫ বছরের বৃদ্ধের এমন কর্মকা-ের ব্যাখ্যা এখন পর্যন্ত মেলেনি।

Check Also

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের কম্বল বিতরণ

গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের উদ্যোগে অসহায় ও দুস্থ শীতার্ত মানুষের মধ্যে কর্কশিট ও ২০০ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।