ক্রাইমবার্তা বিনোদন ডেস্ক:বাঙালির বিদেশপ্রীতি একটু বেশিই। মানহীন হলেও একই পণ্য বিদেশ থেকে এনে দিলেই সেটি হয়ে যায় মানসম্মত। শুধু পণ্যের ক্ষেত্রেই নয়, সব ক্ষেত্রেই বিদেশপ্রীতি লক্ষণীয়।
অপরদিকে যৌথ প্রযোজনার ছবির মাধ্যমে ভারতীয় আর্টিস্টদের আধিক্য রেখে বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে কাজের সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে কলকাতার শিল্পীদের।
শুধু চলচ্চিত্রেই নয়, ভারতীয় তারকাদের আনাগোনা বাড়ছে দেশের বিজ্ঞাপন জগতেও। বর্তমানে দেশীয় টিভি চ্যানেলগুলোতে যে বিজ্ঞাপন দেখা যাচ্ছে তার মধ্যে আন্তর্জাতিক মানের পণ্যগুলোর বিজ্ঞাপনের অধিকাংশই বিদেশি মডেল দিয়ে তৈরি। যদিও বিষয়টি নতুন কিছু নয়। অনেক আগে থেকেই চলে আসছে এ ধারা।
অ্যাম্বাসেডর হওয়ার দরুন অনেক পণ্যের বিজ্ঞাপনেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনের বিখ্যাত তারকাদের দিয়ে বিজ্ঞাপন নির্মাণ করা হতো। দেশভেদে ভাষান্তর করে প্রচার করা হতো সে বিজ্ঞাপন। এ ধারা চলছে এখনও।
এর বাইরেও চলছে আরও অনেক কিছু। এমনকি খাঁটি দেশি পণ্যের জন্য ভারতীয় মডেলদের নেয়া হচ্ছে। এতে করে আমরা যতই ভারতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে দেশকে রক্ষা করতে চাইছি গোড়ায় গণ্ডগোল থাকায় বিষয়টি আরও জেঁকে বসছে।
মনে হচ্ছে বহুজাতিক কোম্পানির পণ্যের প্রচারের আড়ালে ভারতীয় নায়ক-নায়িকা ও মডেলের বিজ্ঞাপনই চালানো হচ্ছে এ দেশের গণমাধ্যমে।
বিশেষ করে প্রসাধনসামগ্রীর ভোক্তা বাংলাদেশের মানুষ হলেও শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডগুলোর বিজ্ঞাপনে রহস্যজনক কারণে বাংলাদেশি মডেল কাস্টিং অঘোষিতভাবেই যেন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টিকে দেশের বোদ্ধামহল মুক্তবাজার অর্থনীতির নামে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের আরেক রূপ বলেই অভিহিত করেছেন।
কয়েক বছর আগেও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন একটি প্রসাধনী পণ্যের বিজ্ঞাপনে অপি করিম, বিপাশা হায়াত, জয়া আহসানকে নিয়মিত দেখা যেত। এ পণ্যটির বিজ্ঞাপন থেকে এখন উধাও হয়েছেন বাংলাদেশি মডেল। ভারতীয় শিল্পী নিয়ে তৈরি বিজ্ঞাপনই এখন প্রচার হচ্ছে বেশি।
শুধু টিভি বিজ্ঞাপনেই নয়, দেশের রেডিও, সংবাদপত্র, বিলবোর্ডসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত, প্রকাশিত ও ব্যবহৃত সাবানের বিজ্ঞাপনের মডেল ভারতের জনপ্রিয় নায়ক-নায়িকাদের নিয়ে তৈরি বিজ্ঞাপনই প্রচার ও প্রকাশ হচ্ছে। সাইনবোর্ড-বিলবোর্ডেও প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে পণ্য প্রচারে ভারতীয়দের ছবি ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি সরাসরি দেশে নির্মিত বিজ্ঞাপনেও নেয়া হচ্ছে তাদের।
বিজ্ঞাপনের লক্ষ্য বাংলাদেশের বাজার হলেও ভিনদেশি মডেলের উপস্থিতি এ দেশের সংস্কৃতির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিজ্ঞাপনগুলোতে আগে যখন বাংলাদেশি মডেল কাজ করতেন তখন প্রবাসে বাংলাদেশের সংস্কৃতি জগৎ সম্পর্কে যেমন অন্যরা জানতে পারতেন, তেমনি দেশীয় সংস্কৃতি কর্মীদের অর্থ উপার্জন হতো। এখন সেটি হচ্ছে না। বিজ্ঞাপনে বিদেশি শিল্পীদের এ দৌরাত্ম্যে সব ক্ষেত্রেই লোকসান হচ্ছে।
কিছু দিন আগে আইন করেই বিদেশি চ্যানেলে দেশীয় বিজ্ঞাপন বন্ধ করেছে সরকার। এরপর থেকেই যেন দেশের বিজ্ঞাপনে ভারতীয় শিল্পীদের নিয়ে আসার পরিমাণ বেড়ে গেছে। বর্তমানে টিভিতে প্রচার হচ্ছে নতুন নতুন বিজ্ঞাপন। বিশেষ করে সিনেমার মতো কলকাতার নায়ক-নায়িকারাই বাংলাদেশি বিজ্ঞাপনে কাজ করছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন অঙ্কুশ, সায়ন্তিকা, নুসরাত, কৌশানী, শ্রাবন্তী, শুভশ্রী, ইন্দ্রানী হালদার ও রাইমা সেন ও তিথি দাশ।
এ ছাড়া দেশের একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানির বিজ্ঞাপনে ভারতীয় ক্রিকেটার সৌরভ গাঙ্গুলীকেও দেখা গেছে।
ভারতীয় মডেলদের চেয়ে জনপ্রিয়তার দিক থেকে বহুগুণে এগিয়ে বাংলাদেশের বিজ্ঞাপনের মডেলরা। বাংলাদেশের প্রথম সারির তারকারা বিজ্ঞাপন করলে শুধু যে জনপ্রিয়তা পায় তা নয়। প্রিন্ট মিডিয়া কাভারেজও পেয়ে থাকে।
এর আগে শাকিব খান, মৌসুমী, রিয়াজ, পূর্ণিমা, নিপুণ, চঞ্চল কিংবা জয়া আহসানকে নিয়ে যে বিজ্ঞাপন করা হয়েছে তা ভারতীয় মডেলদের চেয়ে অনেক সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে।
বাংলাদেশের বিজ্ঞাপনের জুটি হিসেবে নোবেল-মৌ এখনও জনপ্রিয়তার শীর্ষে। ভারতেও শুধু বিজ্ঞাপনের এমন জুটি তৈরি হয়নি আজও।
তবুও ভারতীয় তারকাদের নিয়ে বিজ্ঞাপন বানানোর চেষ্টা কেবল বাড়ছেই। বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের এখনই নজর দেয়া উচিত। অন্যথায় বিজ্ঞাপনেও ভারতীয় আর্টিস্টরা প্রভাব বিস্তার করে ফেলবে।