ক্রাইমবার্তা আন্তর্জাতিক ডেস্ক :নয় সপ্তাহের গর্ভাবস্থায় ফ্রাঙ্কলিন ডি সিলভা জাম্পোলি পেডিলহা ‘সেরিব্রাল হেমারেজে’ আক্রান্ত হয়েছিলেন।
এতে ২১ বছর বয়সী জাম্পোলি পেডিলহার মস্তিষ্কের মৃত্যু হয়। কিন্তু চিকিৎসকদের আপ্রাণ চেষ্টায় ১২৩ দিন মায়ের গর্ভেই বাঁচিয়ে রাখা হয় দুই সন্তানকে। পৃথিবীর আলোও দেখে ওই দুই শিশু। কল্পকাহিনীর মতো এ ঘটনা ঘটেছে ব্রাজিলে।
গত বছরের অক্টোবরে সেরিব্রাল হেমারেজ হয়ে মস্তিষ্কের মৃত্যু হয় ফ্রাঙ্কলিনের পেডিলার। সেই সময় গর্ভের যমজ সন্তানের বয়স মাত্র নয় সপ্তাহ (দুই মাস)। স্ত্রীকে হারালেও ফ্রাঙ্কলিনের স্বামী অদম্য মুরিয়েল পেডিলহা হার মানতে চাননি। দুই সন্তান যে তখনো বেড়ে উঠছে গর্ভে। মা হতে চলা স্ত্রীকে কৃত্রিমভাবে বাঁচিয়ে রাখতে চিকিৎসকদের অনুরোধ করেন ২৪ বছর বয়সী মুরিয়েল। চিকিৎসকেরাও নিরাশ করেননি।
এরপর ১২৩ দিন মায়ের গর্ভেই বেড়ে ওঠে শিশু দুটি। চিকিৎসক ডালটন রিভাবেমের নেতৃত্বে হাসপাতালের নিউরোলজিক্যাল নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চলতে থাকে ফ্রাঙ্কলিন পেডিলার চিকিৎসা, শুশ্রƒষা। গর্ভে নিশ্চিন্তে শিশু দুটি বেড়ে ওঠার জন্য যা যা করা দরকার নস্যে সেনহোরা ডি রোকিও হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, কর্তৃপক্ষ তাই করেছে।
বিশেষ প্রক্রিয়ায় শিশুদের সরবরাহ করা হয় খাবার ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে সাত মাসের গর্ভাবস্থায় অস্ত্রোপচারে জন্ম হয় শিশু দুটির। জন্মের সময় বোন অ্যানা ভিক্টোরিয়ার ওজন ছিল ১ কেজি ৪০০ গ্রাম আর ভাই আসাফের ১ কেজি ৩০০ গ্রাম। দুই মাসের চিকিৎসার পর মে মাসের দিকে সুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফিরে যায় অ্যানা ও আসাফ।
ভেন্টিলেশন থেকে বের করে ফ্রাঙ্কলিন পেডিলার কিডনি আর হৃৎপি- দান করা হয়। এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল প্রায় পুরো ব্রাজিল। ওই দম্পতির ইসা বিয়েট্রিস নামে দুই বছর বয়সী আরও একটি মেয়েশিশু রয়েছে।
গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মুরিয়েল বলেন, ‘পেডিলার যখন সেরিব্রাল হেমারেজে (মস্তিষ্কের মৃত্যু) আক্রান্ত হয়, তখন আমি বাগানে গাছের পরিচর্যা করছিলাম। পেডিলা ফোনে জানায়, ওর মাথা অসহ্য যন্ত্রণায় ছিঁড়ে যাচ্ছে। এখনই পড়ে যাবে। আমি যেন বাড়ি ফিরে আসি। দ্রুত বাড়ি ফিরে পেডিলাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসকেরা জানান, মস্তিষ্কে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। তিন দিন ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর অবশেষে জানানো হয়, আমার স্ত্রীর মস্তিষ্কের মৃত্যু হয়েছে। শিশু দুটির আশা চিকিৎসকেরা ছেড়েই দিয়েছিলেন। মুরিয়েলের কাতর অনুরোধে আল্ট্রাসনোগ্রাম করে চমকে ওঠেন চিকিৎসকেরা। কারণ, তখনো বেঁচে রয়েছে ভ্রূণ দুটি। মুরিয়েলের অনুরোধে তখনই চিকিৎসকেরা সিদ্ধান্ত নেন শিশুদের বাঁচাতে করণীয় সব করা হবে।’
বাবা মুরিয়েল এ ঘটনাকে ‘অলৌকিক ঘটনা’ বলে বর্ণনা করেছেন।
চিকিৎসক ডালটন রিভাবেম এর আগেও পর্তুগালে ১০৭ দিন গর্ভাবস্থায় বাচ্চার জন্মদানে সহায়তা করেছিলেন।