ক্রাইমবার্তা রিপোট:লন্ডনে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে যাওয়ার আগে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে নেতাদেরকে দিক নির্দেশনা দিয়ে গেলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বৃহস্পতিবার রাতে সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এই নিদের্শনা দেন।
যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে শনিবার রাতে ঢাকা ছাড়ার আগে গুরুত্বপূর্ণ এই বৈঠকে উপস্থিত নেতাদের খালেদা জিয়া বলেন তার অনুপস্থিতিতে দলের মধ্যে কোনো ধরণের ভুলবোঝাবুঝি, বিভেদ ও অনৈক্য যেন না হয়। এছাড়া দলের সদস্য সংগ্রহ অভিযানে এক কোটি সদস্য সংগ্রহ করার যে টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে তা যেন সকলে মিলে করেন সে বিষয়ে তাগিদ দেন এবং নিয়মিত যেন এই কর্মসুচি মনিটরিং করা হয় সেব্যাপারেও বৈঠকে নেতাদের নির্দেশনা দেন। এছাড়া বৈঠকে দলের সাংগঠনিক অবস্থা, আন্দোলনের প্রস্তুতি, নিবার্চন কালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা ও ইসির সঙ্গে সংলাপের বিষয়টি বৈঠকে আলোচনা হয়। তবে এসব বিষয়ে লন্ডনে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে পরার্মশ করে প্রয়োজনী করনীয় নির্ধারণ করা হবে। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসভবন ফিরোজায় এ বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকটি শেষ হয় রাত পৌনে বারোটার দিকে। বৈঠক থেকে বের হয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অপেক্ষমান সাংবাদিকদের জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আগামী ১৫ জুলাই যুক্তরাজ্য সফর করবেন। আমি আপনাদেরকে অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে তিনি চোখে ও পায়ের চিকিৎসার জন্য লন্ডন যাচ্ছেন।
কবে নাগাদ তিনি ফিরবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা নির্ভর করবে তার চিকিৎসার উপর। বৈঠকে কী কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, বন্যা পরিস্থিতি, চিকুনগুনিয়া জ্বরের প্রাদুর্ভাব, চালসহ দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া, বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণের অপ্রতুলতার কথা তুলে ধরে অবিলম্বে সেখানে পর্যাপ্ত ত্রাণ পাঠানোর দাবি করেন তিনি। দলের সদস্য সংগ্রহ অভিযান সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা ও সারাদেশে মিথ্যা মামলা দিয়ে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের সরকার গ্রেপ্তার করছে, হয়রানি ও নির্যাতন চালাচ্ছে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
সরকার নির্বাচনের হাওয়া তুলে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, তারা একা হেলিকপ্টারে চড়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। আর বিরোধী দলকে প্রচার-প্রচারণার কোনো সুযোগ দিচ্ছে না। আমরা এহেন নীতির নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা বলতে চাই, অবশ্যই সরকারকে ডেমোক্রেটিক স্পেস তৈরি করতে হবে, সব দলের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন খালেদা জিয়া। উপস্থিত ছিলেন ড.খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, তরিকুল ইসলাম, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সর্বশেষ ২০১৫ সালে ১৬ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়া লন্ডন গিয়েছিলেন। সেবার তারেক রহমানসহ পরিবারের সবার সঙ্গে ঈদ করেই দেড় মাস পর ফিরেছিলেন খালেদা জিয়া। তারেক ও তার স্ত্রী-সন্তানরা ছাড়াও প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী ও দুই সন্তানও সেসময় লন্ডনে ছিলেন।