সাতক্ষীরায় সাপ আতংকঃ একসপ্তাহে ৮৬টি সাপ হত্যাঃ বাণিজ্যিকভাবে সাপ চাষকরে কোটি টাকা আয় করা সম্ভব দাবী সংশ্লিষ্টদের

ক্রাইমবার্তা রিপোট: সাতক্ষীরা সংবাদদাতাঃ সাতক্ষীরায় সাপ আতংক দেখাদিয়েছে। বসতবাড়ি থেকে ফাস্টফুডের দোকান পর্যন্ত। সবখানে যেন সাপ আর সাপ। গত ৮জুলাই ৮০ টি সাপ ধরার পর গতকাল আবার ফাস্টফুডের দোকানে মিলল ১২টি বিষাক্ত গোখরা সাপ। শুধু সাতক্ষীরা নয় দেশের বিভিন্ন স্থানে সাপ ধরা পড়ছে এবং সে গুলো মেরে ফেলছে স্থানীয়রা। সংশ্লিষ্টরা বলছে, সাপ হত্যা না করে বাণিজ্যিকভাবে সাপ চাষ করে এর বিষ রফতানি করে বছরে কয়েক কোটি টাকা আয় করা সম্ভব ।3
সূত্রমতে বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে সাতক্ষীরায় কলারোয়া উপজেলার একটি ফাস্টফুডের দোকান থেকে ১২টি বিষাক্ত গোখরা সাপ ধরা পড়েছে। উপজেলার কাজীরহাট বাজারের নিজাম স্টোর থেকে সাপগুলো ধরা পড়ে। পরে স্থানীরা সেগুলো পিটিয়ে মেরে ফেলেছে।
কাজীরহাট বাজারের নিজাম স্টোরের স্বত্ত্বাধিকারী নিজাম আলী জানান, রাত সাড়ে ৯টার দিকে তার দোকানের একটি বিস্কুটের বাক্সে মধ্যে একটি বিষাক্ত পদ্মগোখরা সাপ দেখতে পান। পরে একে একে দোকানের বিভিন্ন জায়গা থেকে ১২টি সাপ বেরিয়ে আসে। এসময় ভয়ে তিনিসহ ক্রেতারা মিলে সাপগুলো পিটিয়ে মেরে ফেলেন। এ নিয়ে সেখানে সাপ আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এদিতে, গত ৮ জুলাই সাতক্ষীরার সদর উপজেলার ধুলিহর ইউনিয়নের বালুইগাছা গ্রামের সাত্তার খানদারের বাড়িতে একই গর্ত থেকে ৫৬টি সাপ ধরার দুই দিন পর আরও ৪টি সাপ ধরা পড়ে।
উল্লেখ্য, গত ৮জুলাই সাতক্ষীরার দুই উপজেলার দুইটি বাড়ি থেকে ৭৬টি সাপ ধরা পড়েছে। সদর উপজেলার ধুলিহর ইউনিয়নের বালুইগাছা গ্রামের সাত্তার খানদারের বাড়ি থেকে দুই দফায় ৬০টি সাপ ও ৫০টি ডিম উদ্ধার করা হয়। পরে আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা ইউনিয়নে বেউলা গ্রামের মকবুল সরদার ওরফে খোকনের বসতঘরের একটি গর্ত থেকে ২০টি গোখরা সাপ ধরা হয়।
সাতক্ষীরা ধুলিহর ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাবু সানা বলেন, ‘ধুলিহর ইউনিয়নের বালুইগাছা গ্রামের সাত্তার খানদারের বাড়িতে পুরাতন মাটির ঘরের গর্ত থেকে ৫৬টি সাপ ও ৫০টি ডিম উদ্ধার হয়েছে।
(৫ জুলাই) রাত ১২টার দিকে আব্দুস ছাত্তার খানদারের মায়ের হাতের ওপর একটি পদ্মগোখরা সাপ উঠলে সাপটিকে মেরে ফেলা হয়। পরের দিন সকালে তার ছেলে ইসমাইল হোসেন (১৬) ঘরের মেঝেতে আরও একটি সাপ দেখতে পায় এবং সেটিও মেরে ফেলে। পরে আব্দুস সাত্তার ঘরের মেঝের মাটি খুড়লে একাধারে ৫৬টি সাপ বেরিয়ে আসে এবং ৫০টি ডিম সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার পর একজন সাপুড়েকে আনা হয়। তবে বড় ধরনের কোনও সাপ পাওয়া যায়নি। বর্তমানে বাড়িটির চারপাশে জাল দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে।
সাত্তারের ছেলে ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘আমাদের বাড়িতে এতগুলো সাপ। অথচ আমরা জানতাম না। গোটা বাড়ির ওপর যেন সাপের রাজত্ব চলছিল।’
এদিকে বুধবার (৫ জুলাই) বিকালে আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা ইউনিয়নে বেউলা গ্রামের মকবুল সরদার ওরফে খোকনের বসতঘরের একটি গর্ত থেকে একে একে ২০টি গোখরা সাপ ধরা হয়েছে।
মৃত মুজির সরদারের ছেলে মকবুল সরদার জানান, বুধবার বিকাল ৫টায় বাড়ির বসত ঘরের মেঝের নিচ থেকে একটি গোখরা সাপ বের হয়ে আসে। বাড়ির মালিক সাপটি লাঠি দিয়ে মেরে ফেলেন। বিষাক্ত সাপটি প্রায় দেড় ফুট লম্বা। পরে ঘরের মেঝের একটি ছোট ছিদ্র দিয়ে একে একে ১৯টি একই মাপের সাপ বের হয়ে আসে। তিনটি উপজেলার পৃথক স্থান থেকে সাপ উদ্ধারের ঘটনায় গোটা জেলা ব্যাপি সাপ আতংক বিরাজ করছে। সাপবিশেজ্ঞরা বলছে,সাপের নিরাপদ আবাস স্থল না থাকা এবং সাপের প্রজন্মন না থাকায় এমন অবস্থার সৃষ্টি। যদি এসব সাপ না মারা হত তাহলে সাপচাষ করে অনেক টাকা আয় করা সম্ভব হত।
সাপ না মেরে বাণিজ্যিক চাষ ও সাপের বিষ রফতানির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশে। রফতানি উন্নয়ন্ন ব্যুরোর (ইপিবি) রফতানি তালিকায় এ পণ্যের নাম না থাকলেও প্রতি বছর দেশি-বিদেশি চোরাচালান চক্রের মাধ্যমে পাচার হচ্ছে কয়েক কোটি টাকার সাপের বিষ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাণিজ্যিকভাবে সাপের বিষ রফতানি করে বছরে আয় করা সম্ভব প্রায় ১৫০ কোটি টাকা।
ইপিবি ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সূত্র জানায়, দেশি ও বিদেশি চোরাচালানি চক্র প্রতি বছর কয়েক কোটি টাকার কোবরা (গোখরা) সাপের বিষ পাচার করছে। রফতানির সুযোগ না থাকায় এখন এগুলো পাচার হচ্ছে। পার্র্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও ইউরোপের ফ্রান্সে সাপের বিষ পাচার হয়। সাপ ও সাপের বিষ মানুষের জন্য ক্ষতিকর হলেও একে বাণিজ্যিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে দেশের জন্য আশীর্বাদ হতে পারে। সাপের খামার প্রতিষ্ঠা করে সাপ ও সাপের বিষ রফতানি করে দেশের জন্য বছরে ১৫০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কোবরা সাপের বিষ ফার্মাসিউটিক্যালস ও গবেষণাগারের একটি মূল্যবান উপাদান। বিদেশে এর ব্যাপক চাহিদা আছে।
২০০৮ সালের জুন মাসে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) দেশের এই নতুন সম্ভাবনাময় খাতকে কাজে লাগানোর উদ্যোগ গ্রহণ করে।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোতে সাপের বিষ একটি মূল্যবান কাঁচামাল। তাই এ দেশে সাপের বিষ উৎপাদন করে তা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর কাছে রফতানি করে শতাধিক কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

Check Also

আশাশুনি সদর ইউনিয়ন জামায়াতের ৮টি ওয়ার্ডে আংশিক কমিটি গঠন

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি প্রতিনিধি।।বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আশাশুনি সদর ইউনিয়নের ৮টি ওয়ার্ডে আংশিক কমিটি গঠন করা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।