সাবেক মন্ত্রী এবং জাসদের একাংশের নেতা আ স ম রবের বাড়িতে গত সন্ধ্যায় যে রাজনীতিকরা জড়ো হয়েছিলেন, তারা আসলে কি করতে চাইছিলেন?
আ স ম রব বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রথমে এটিকে নিছক ঈদ উত্তর সৌজন্য সাক্ষাতের অনুষ্ঠান বলে বর্ণনা করেন।
কিন্তু পরে তিনি স্বীকার করেন যে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির বাইরে একটি তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তির জোট গড়ার জন্য তারা চেষ্টা চালাচ্ছেন।
পুলিশ যেভাবে তাঁর বাসায় গতরাতের এই সভা ভন্ডুল করে দেয়, তা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
“আমরা আসলে কোন দেশে আছি? নিজের বাড়িতে বসেও কথা বলতে পারবো না?”
“রাজনীতি করছি আজকে ৬০ বছর। আমার বাসায় প্রতিদিন দু-চার-দশজন নেতা কর্মী আসেন্, আমি ঈদের পর চা চক্রের ব্যবস্থা করেছি। আমার স্ত্রী বললো, শুধু চা খাওয়াবা? আমি ডিনারের ব্যবস্থা করি।”
আ স ম রব জানান, গতকালের এই অনুষ্ঠানে তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট বদরুদ্দোজা চৌধুরি, গণফোরামের ডঃ কামাল হোসেন, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, বাসদের খালেকুজ্জামান ভূইয়া, ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, কাদের সিদ্দিকী সহ অনেককে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
কিন্তু পরে পুলিশের হস্তক্ষেপের তাদের বৈঠকটি ভন্ডুল হয়ে যায়।
“আটটার মধ্যে অর্ধেক লোক চলে আসে। তখন আমার অফিস থেকে একজন এসে বললো, পুলিশ আমার সঙ্গে কথা বলতে চায়। আমাকে পুলিশ অফিসার বললো, আমাদের কাছে ইনফরমেশন আছে, আপনার বাসায় মিটিং হচ্ছে।আপনি মিটিং করতে পারবেন না। আমি বললাম মিটিং শব্দের অর্থ কী। আমি আমার বাসায় সৌজন্যমূলক সাক্ষাতের ব্যবস্থা করতে পারবো না? ইনফরমাল কোন বৈঠক আমি করতে পারবো না? পুলিশ বললো তার জন্য পারমিশন লাগবে।”
আ স ম রব বলেন, একটি পর্যায়ে পুলিশ, এসবি, এনএসাআই, ডিজিএফআই মিলে তাঁর বাসার সামনে একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। পুরো অনুষ্ঠান পন্ড করে দেয়।
এই বৈঠকে তারা কি একটি নতুন রাজনৈতিক জোট গঠনের চেষ্টা করছিলেন? এ প্রশ্নের উত্তরে আ স ম রব বলেন, “এটা তো গত দু বছর থেকে চেষ্টা করছি। আমরা দুই জোটের বাইরে আরেকটা তৃতীয় রাজনৈতিক জোট গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীলদের নিয়ে।”
এ ক্ষেত্রে কতটা অগ্রগতি হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “অগ্রগতি অবশ্যই আছে। তবে বলার মতো কিছু নয়। বলার মতো হলে অবশ্যই বিবিসিকে বলবো।”
বাসদের নেতা খালেকুজ্জামানও স্বীকার করেছেন যে, তারা একটি রাজনৈতিক জোট গঠনের জন্য আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
“এখানে দুটি রাজনৈতিক শক্তি। একটা বামপন্থী। একটা উদারপন্থী। বামপন্থীরা এক জায়গায় ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন। উদারপন্থীরা আরেকটা জায়গায়। যার যার অবস্থান থেকে একই কর্মসূচী নিয়ে, একই লক্ষ্য নিয়ে তারা অগ্রসর হবেন। এভাবে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এটি এক সময় নির্বাচনী ঐক্য হিসেবেও দাঁড়াতে পারে।”
খালেকুজ্জামান বলেন, এই জোটে কোন চরম ডানপন্থী, সাম্প্রদায়িক বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী কাউকে নেয়া হবে না।
নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্নাও জানিয়েছেন, একটি তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তির জোট করার লক্ষ্যে তাদের আলোচনা কিছুদূর অগ্রসর হয়েছে।
“আমরা যারা বসেছিলাম, আমরা সবাই মনে করি, আসলে বিএনপি-আওয়ামী লীগ, দুটি দলই গণতন্ত্রের সঙ্গে সুবিচার করেনি। কাজেই সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে একটা বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি দাঁড় করানো যায় কীনা, সেই আলোচনাই করেছি আমরা ।”
খুব শীঘ্র্ই না হলেও নিকট ভবিষ্যতে এই আলোচনার একটা ফল পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন মাহমুদুর রহমান মান্না।বিবিসি বাংলা