অসামাজিক কার্যকলাপ, বঙ্গবন্ধু যুব উন্নয়ন ক্লাবে তালা

Tangail-Bongobondhu-Club-20170718183049অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে টাঙ্গাইল পৌর এলাকার কাগমারা বঙ্গবন্ধু ক্লাবে তালা দিয়েছে ডিবি পুলিশ। সোমবার রাতে ডিবি পুলিশের একটি দল অভিযান চালিয়ে ক্লাবটি বন্ধ করে দেয়।

ক্লাব কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অবাধে মাদক ও সুদের ব্যবসা পরিচালনা, সাধারণ মানুষের অর্থ আত্মসাৎ ও মাদক ব্যবসা পরিচালনার মামলা রয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগে জানা যায়, ২০১৬ সালে টাঙ্গাইল পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের কাগমারায় স্থাপিত হয় বঙ্গবন্ধু যুব উন্নয়ন ক্লাব। ক্লাবের সাধারণ সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে এর সভাপতি হন উজ্জ্বল হোসেন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল।

২০০৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর বেশ কয়েকটি বিক্রয় নিষিদ্ধ ভারতীয় ফেনসিডিলসহ বর্তমান কাগমারা বঙ্গবন্ধু যুব উন্নয়ন ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল হোসেন মোল্লাকে গ্রেফতার করে টাঙ্গাইল মডেল থানা পুলিশ।

বর্তমানে মামলাটি চলমান। সেই সঙ্গে চাকরিচ্যুত সেনাসদস্য ও ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে রয়েছে সেনাসদস্য পদে নিয়োগের প্রলোভন ও ভুয়া কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমে নিরীহ মানুষের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ এবং প্রতারণার অভিযোগ।

এসব অভিযোগের কয়েকটি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা হলেও অধিকাংশই অমীমাংসিত।  এসব অপরাধ সত্ত্বেও অভিযুক্ত দুই ব্যক্তির নেতৃত্বে গড়ে তোলা হয় বঙ্গবন্ধু যুব উন্নয়ন ক্লাব।

২০১৬ সালে ক্লাবের কার্যক্রম ও সদস্য সংগ্রহ শুরু করে তারা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু নামকরণে স্থাপিত ক্লাবটি পরিচালনার নামে জাতির জনকের নামকে কলঙ্কিত করে ওই দুই ব্যক্তির নেতৃত্বে শুরু হয় মাদক ও সুদের ব্যবসাসহ নানা অপকর্ম।

ধীরে ধীরে ও ধারাবাহিকভাবে তাদের অপকর্মের পরিধি বাড়তে থাকে। এরপর থেকেই বেশ কয়েকবার ক্লাবের কয়েকজন সদস্যকে মাদকসহ গ্রেফতার করে জেলা পুলিশ।

এসব মাদক বিক্রেতা ও ক্লাব সদস্যকে নানা অজুহাতে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনার মূলহোতাও এই ক্লাবের সভাপতি আর সাধারণ সম্পাদক।

এ কারণে টাঙ্গাইল পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের মাদকমুক্ত কাগমারা, চরকাগমারা ও পশ্চিম আকুর টাকুর এলাকা হয়ে উঠেছে মাদকের অভয়ারণ্য।

ফলে এলাকায় বৃদ্ধি পায় চুরি, ছিনতাইসহ নানা ধরনের অপরাধ। দিন দিন এলাকায় মাদক ব্যবসা ও অপরাধ বৃদ্ধির পাওয়ায় বঙ্গবন্ধু ক্লাব কর্তৃপক্ষের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এলাকাবাসী।

তবে এসব অপকর্ম নিয়ে যে ব্যক্তিই প্রতিবাদ করে তাকেই হতে হয়েছে ক্লাব সদস্যদের হাতে নির্যাতিত। ক্লাব সদস্যদের নির্যাতনের শিকার হয়ে স্থানীয় মালেক মিয়া বর্তমানে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন।

বঙ্গবন্ধু ক্লাব নিয়ে এলাকাবাসীর কোনো প্রশ্ন বা বিতর্ক না থাকলেও ক্লাব কর্তৃপক্ষের এ ধরনের অপরাধে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এলাকাবাসী। সেই সঙ্গে ক্লাব বন্ধে মিছিল, সমাবেশসহ নানা ধরনের আন্দোলন শুরু করেন তারা। এ আন্দোলনের ফলেই ক্লাবটির কার্যক্রম বন্ধ করতে জেলা পুলিশের পক্ষে থেকে তালা ঝুলিয়ে দেয় ডিবি পুলিশ।

কাগমারা বঙ্গবন্ধু যুব উন্নয়ন ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল হোসেন মোল্লা মাদক মামলার কথা অস্বীকার করে বলেন, ক্লাবের বিরুদ্ধে কতিপয় ব্যক্তি ষড়যন্ত্র করছে। এ ষড়যন্ত্রের শিকার আমরা। এ কারণে টাঙ্গাইল পুলিশ ক্লাবের কার্যক্রম বন্ধের জন্য তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে।

টাঙ্গাইল ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এস.আই) মো. আশরাফ হোসেন বলেন, কাগমারা বঙ্গবন্ধু যুব উন্নয়ন ক্লাবে নানা ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ পরিচালিত হচ্ছে- এমন অভিযোগ ও পত্রিকার সংবাদ পরিবেশনের অভিযোগে এবং পুলিশ সুপারের নির্দেশে ক্লাবের কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। অভিযানকালে বঙ্গবন্ধু নামে ক্লাবটি পরিচালিত হলেও ক্লাবে পাওয়া যায়নি বঙ্গবন্ধু বা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। নেই রেজিস্ট্রেশন বা বৈধ কোনো কাগজপত্র। ক্লাবটির রেজিস্ট্রেশন, বৈধ কাগজপত্র উপস্থাপন ও অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধের অঙ্গীকারনামা প্রদান করতে পারলে পুনরায় ক্লাবটির কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হেলাল ফকির বলেন, অবাধে মাদক ব্যবসা পরিচালনার জন্য নিলফামারী থেকে আগত মোস্তফা কামাল চরকাগমারার কতিপয় ব্যক্তিকে নিয়ে সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু যুব সংঘ নামে একটি ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। ক্লাবটিতে দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসাসহ নানা অসামাজিক কার্যকলাপ পরিচালিত হচ্ছে। টাঙ্গাইল ডিবি পুলিশ এ কারণে অভিযান চালিয়ে ক্লাবটি বন্ধ করে দেয়ায় এলাকাবাসী সন্তুষ্ট।

Check Also

সাতক্ষীরা রেঞ্জ থেকে দুবলার চরে গেলেন ৪০১জন পূণ্যার্থী

উপকূলীয় অঞ্চল (শ্যামনগর): পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জ থেকে অনুমতি নিয়ে বঙ্গোপসাগরের দুবলার চরে রাস মেলায় গেছেন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।