লাল ব্যাগ নিয়ে স্কুলে যেতে ইচ্ছা করে মুক্তার

লাল ব্যাগ নিয়ে স্কুলে যেতে ইচ্ছা করে মুক্তার

বিরল চর্মরোগে আক্রান্ত সাতক্ষীরার মুক্তামণি মুক্তার সময় কাটছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের কেবিনে শুয়ে।

কখনও বাবা-মা আর বোনের সঙ্গে কথা বলে সময় কাটে মুক্তার। তবে বেশিরভাগ সময় কাটে জমজ বোন হিরামণির সঙ্গে গল্প করে। সুস্থ হলে তারা কীভাবে খেলবে, কী করবে, কখন স্কুলে যাবে। সুস্থ হওয়ার পরবর্তী সময় কেমন হবে জীবন। এমনই সুখকল্পনার গল্প করেই সময় কাটছে মুক্তার।

মুক্তামণি লিমফেটিক ম্যালফরমেশন (লসিকানালী/রসবাহী নালীর বিকলাঙ্গতা) রোগে আক্রান্ত বলে ধারণা করছেন চিকিৎসকরা।

মঙ্গলবার ঢামেকের বার্ন ইউনিটের ৬০৮ (এ-বি) কেবিনে গিয়ে দেখা যায়, মুক্তামণিকে ভাত খাওয়াচ্ছেন তার মা। খাওয়া শেষে মুক্তার সঙ্গে আলাপকালে সে বলে, ‘আমার আব্বা-আম্মা আমার জন্য সারাদিন দোয়া করে, আপনারাও আমার জন্য দোয়া করবেন, যেন খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে পারি।’

কিছুটা অশ্রুসিক্ত নয়নে ভাঙা গলায় মুক্তা বলে, ডাক্তার বলেছে আমি ভালো হয়ে যাব, ভালো হলে আবার স্কুলে ভর্তি হব, লাল ব্যাগ নিয়ে আমার বোন হিরামণির সঙ্গে স্কুলে যেতে পারব। হাতের অসুখের জন্য আল-আমিনকে (ছোট ভাই) কোলে নিতেও পারি না। ওকে বোন (হিরামণি) যেমন কোলে নিয়ে আদর করে, হাতটা ঠিক হলে তাকে আমিও কোলে নিয়ে অনেক আদর করব, আমার আম্মার সঙ্গে কাজে সাহায্যও করব।

মুক্তামণি মুক্তা যখন এভাবে নিজের কথা বলছিল ঠিক তখন পাশে বসা মা আসমা খাতুন চোখে পানি আর ধরে রাখতে পারছিলেন না।

মুক্তা জানায়, মির্জানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস ওয়ান পর্যন্ত পড়ার পর হাতের অসুখের জন্য আর স্কুলে যাওয়া হয়নি, অন্যদের মতো আমারও লাল ব্যাগ নিয়ে স্কুলে যেতে খুব ইচ্ছে করে। হাত ভালো হলে আবার গিয়ে ক্লাস টু-তে ভর্তি হব। লাল ব্যাগ নিয়ে আপুর সঙ্গে স্কুলে যাব….।

muktha

এসময় মুক্তার বাবা ইব্রাহীম হোসেন বলেন, সারাদিন মেয়েটা আমার মন খারাপ করে থাকে, তেমন কিছুই খেতে চায় না।

কেন খেতে চাওনা, কী খেতে ভালো লাগে- এমন প্রশ্নের জবাবে মুক্তা বলে, শুধু মাংস আর বিরিয়ানি খেতে ভালো লাগে। আব্বা যখন এগুলো এনে দেয় তখন খাই।

হাসপাতালে মুক্তার সঙ্গে তার বাবা-মা ছাড়াও জমজ বোন হিরামণি এবং দেড় বছরের ছোট ভাই আল-আমিন রয়েছে। হিরামণি জানায়, তাড়াতাড়ি তার বোন সুস্থ হলেই তারা বাড়ি ফিরে যাবে, বোনকে নিয়ে একসঙ্গে স্কুলে যাবে প্রতিদিন। বোন ছাড়া তার একা স্কুলে যেতে ভালো লাগে না।

মুক্তার চিকিৎসার বিষয়ে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন  বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আসার পর মুক্তার যে শারীরিক অবস্থা ছিল, তা এখন অনেকটাই ভালো। সে এখন খুব ভালো বোধ করছে। মুক্তার অনেকগুলো টেস্ট ইতোমধ্যে করানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) টেস্টের রিপোর্টগুলো নিয়ে মেডিকেল বোর্ড বসবে, তখনই পরবর্তী করণীয় নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

তিনি বলেন, আমরা আশা করছি অল্প কয়েকদিনের মধ্যে সে অপারেশনের জন্য প্রস্তুত হবে। আমরা তার সুচিকিৎসার বিষয়ে আশাবাদী।

ইতোমধ্যে মুক্তার চিকিৎসার জন্য আট সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বোর্ডের সদস্যরা হলেন- ঢামেক বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন, ইউনিটের বর্তমান পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, একই ইউনিটের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. সাজ্জাদ খন্দকার, ঢামেক হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশিদ আলম, মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. টিটু মিয়া, বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক বিভাগের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. রায়হানা আউয়াল ও ঢামেক হাসপাতালের চর্মরোগ বিভাগের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. রাশেদ মোহাম্মদ খান।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিরল রোগে আক্রান্ত মুক্তার সংবাদটি প্রকাশিত হয়। গত ৯ জুলাই জাগো নিউজেও ‘লুকিয়ে রাখতে হয় মুক্তাকে’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর মুক্তার চিকিৎসা দেয়ার দায়িত্ব নেন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম। পরে প্রধানমন্ত্রী তার যাবতীয় চিকিৎসার দায়িত্ব নেন/জাগো নিউজ

Check Also

আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি 

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।