স্টাফ রিপোর্টার ::
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতির ও সাধারণ সম্পাদকের ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটামের পরও সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের অধিকাংশ নেতারা বিবাহিত হলেও একজন ছাড়া কেউ পদত্যাগ করেননি। এর মধ্যে অনেকের ছাত্রজীবন শেষ হয়ে গেলেও তারা ছাত্রলীগের পদ বহাল রেখেছেন। এ নিয়ে ত্যাগী পোড় খাওয়া নেতারা মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নেতা বলেন, ছাত্রলীগ বাংলাদেশের একটি প্রধান রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন। শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির পতাকাবাহী সংগঠন, জাতীর মুক্তির স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া সংগঠন, সোনার বাংলা বিনির্মানের কর্মী গড়ার পাঠশালা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। বিদ্যার সঙ্গে বিনয়, শিক্ষার সঙ্গে দীক্ষা, কর্মের সঙ্গে নিষ্ঠা, জীবনের সঙ্গে দেশপ্রেম এবং মানবীয় গুনাবলির সংমিশ্রন ঘটিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ অতিক্রম করেছে পথচলার ৬৮ বছর। এসংগঠনটি দেশের ক্রান্তিকালে আন্দোলন সংগ্রামে ব্যাপক ভুমিকা রেখেছেনে। রাজপথে নেতৃত্ব দিয়েছে ঢেলে দিয়েছেন বুকের তাজা রক্ত।
আর সেই স্বু-সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে মেয়াদোত্তীর্ণ ও বিবাহিতদের দিয়ে চলছে সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠন সাতক্ষীরা জেলা ও উপজেলার ছাত্রলীগের কার্যক্রম। সাতক্ষীরায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ কয়েক ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এতে করে প্রকৃত ত্যাগী ও নির্জাতিত নেতাকর্মীরা সক্রিয়ভাবে ছাত্রলীগ করার পরেও নেত্বত্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এদিকে মেয়াদোত্তীর্ন কমিটি সরকারি চাকরীজীবি, ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, মাদকসেবনকারী, অছাত্র ও বিবাহিতদের দিয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে কার্যক্রম। এতে করে ভেঙে পড়েছে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম। এমন অভিযোগ উঠে এসেছে সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। এনিয়ে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমার্থকদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
দলীয় সূত্রে জানাযায়, ২০১২ সালের ১৫ ডিসেম্বরে এস.এম. মারুফ তানভীর হুসাইন সুজনকে সভাপতি ও এহসান হাবীব অয়নকে সাধারণ সম্পাদক করে ৯ জনের একটি আংশিক কমিটির অনুমোদন দেয় এবং ১ বছর পরে ৬১ সদস্য বিশিষ্ট এক বছরের মেয়াদে পূর্নাাঙ্গ কমিটি ঘোষনা করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির তৎকালিন সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম। এক বছরের এই কমিটি সিদ্দিক কমিটির অনুমোদন দেয়। এক বছরের এই কমিটি বর্তমান সাড়ে চার বছরের অধিক সময় পার করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের একাধিক নেতা-কর্মী জানান, বর্তমানে জেলা ছাত্রলীগরে সভাপতির ভোমরা স্থলবন্দরে মেসার্স জেবা এন্টারপ্রাইজ নামের ভোমরা কাস্টমস্ সি এন্ড এফ এর এজেন্ট ব্যবসা রয়েছে। যেটা নিয়ে তিনি সব সময় ব্যস্ত সময় পার করেন এদিকে তার দলীয় কাজের প্রতি কোন মনোযোগী থাকেনা ফলে দিনে দিনে ভেঙে পড়েছে জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম। এছাড়া তিনি জেলা যুবলীগের সভাপতি আব্দুল মান্নানের মেয়েকে বিয়ে করেছেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
বর্তমান কমিটির মেয়াদ প্রায় সাড়ে চার বছর । এর মধ্যে অনেকের ছাত্র জীবন শেষ হয়ে গেছ। বর্তমান জেলা কমিটির অধিকাংশ নেতা বিবাহিত দাম্পত্য জীবন যাপন করছে। এরমধ্যে- সভাপতি তানভীর হুসাইন সুজন, সহ-সভাপতি নাছিম হায়দার রিপন, সহ-সভাপতি জাহিদ হাসান, সাইফুল আযম জিমি, মারুফ হাসান রিঙ্কু, খন্দকার আরঙ্গজেব নয়ন, সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের রাজু, তালা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সরদার মশিয়ার, আশাশুনি উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হুমায়ুন কবির সমুন, দেবহাটা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান সবুজ, সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান, কালিগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নাজিরসহ আরো বেশ কয়েকজন নেতা দাম্পত্য জীবন যাপন করছেন। তবে কেন্দ্রীয় ঘোষনার পর অনেকে বিয়ের বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন।
এছাড়া জেলার ৭জেলা ছাত্রলীগের হাল বিবাহিতদের হাতে ! টি উপজেলার মধ্যে ৪ উপজেলার সভাপতিই বিবাহিত। তার মধ্যে তালা উপজেলা সভাপতি সরদার মশিয়ার (৩৪) বিবাহিত, আশাশুনি উপজেলা সভাপতি হুমায়ুন কবির সুমন (৩৩) বিবাহিত, দেবহাটা উপজেলা সভাপতি হাবিবুর রহমান সবুজ (৩৫) বিবাহিত এবং কালিগঞ্জ উপজেলা সভাপতি গৌতম লস্কর সদ্য বিবাহিত এবং সাধারাণ সম্পাদক আবু নাসির বিভিন্ন কারণে বর্তমান বহিস্কৃত। এদের সবার বয়স ২৯ এর উর্দ্ধে এবং তারা সন্তানের জনক ও ব্যবসায়ী।
জেলা ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি নাছিম হায়দার রিপন একাডেমিক শিক্ষা শেষ করে কর্মজীবনে গিয়ে বিবাহিত হলেও রয়েছেন ছাত্রলীগে।
সভাপতি মিঠুন ব্যানার্জিও ছাত্র জীবন শেষ হলেও রাজনীতি করার জন্য তিনি আবারও ডিগ্রীতে ভর্তি হয়েছেন। এদিকে আবু তাহের রাজুর ২০১৬ সালের এইচএসসি পরীক্ষা অসাদুপায় অবলম্বন করার দায়ে দুই বছর বহিস্কার করা হয়।
জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নাছিম হায়দার রিপনের কাছে বক্তব্য জানতে তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলেও কল রিসিভ করেননি।
জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি জাহিদ হোসেন বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষণা শুনেই আমি নিজেই পদত্যাগ করেছি।
এব্যাপারে কথা বলতে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এহসান হাবীব অয়নের বক্তব্য জানতে তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযেগ করলে একবার রিসিভ করে বলেন, আমি মিটিংয়ে আছে। পরে একাধিকবার তার ব্যবহৃত ০১৭১১১৯৫৭২৭ নাম্বারে ফোন করলেও তিনি আর রিসিভ করেনিন। খুদে বার্তা পাঠালেও তার কোন উত্তর পাওয়া যায়নি।
এব্যাপারে কথা বলতে জেলা ছাত্রলীগের জানভীর হুসাইন সুজনের বক্তব্য জানতে তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি বর্তমান ঢাকায় রয়েছি। কেন্দ্রীয় সভাপতির আল্টিমেটারে পর অনেকে পদত্যাগ করেছে। যারা বিবাহিতদের আমি পদত্যাগ করতে বলেছি।
তিনি আরো বলেন, প্রমাণসহ বিবাহিতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তার বিয়ের বিষয়ে চানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বিবাহিত কিনা আপনারা তদন্ত করে দেখতে পারেন.voiceofsatkhira.com