দলে অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রক্রিয়া জানিয়েছেন খোদ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিভিন্ন দল থেকে আসা নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়াসহ পদ-পদবি পাওয়ার ঘটনায় তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। শুক্রবার দলের স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের সভায় তিনি এই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন। বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, অনুপ্রবেশের ঘটনা নিয়ে দলীয় নেতাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘যারা বিভিন্ন দল থেকে আওয়ামী লীগে ঢোকেন, তারা বিশেষ একটি উদ্দেশ্য নিয়ে এসে নানা অপকর্ম করেন। আর দোষ পড়ে দলের ওপরে।’ তিনি বলেন, ‘কোথায় কারা ঢুকেছেন, কাদের মাধ্যমে ঢুকেছেন, কী অপকর্ম করছেন, এসব তথ্য আমার কাছে আছে। আরও তথ্য আসছে।’ কারা, কোথায় অনুপ্রবেশ করেছেন, কার মাধ্যমে দলে ঢুকেছেন, দলীয় পদ পেয়েছেন, তাদের একটি তালিকা করে জমা দেওয়ার জন্য দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘দল ভারী করে বদনাম কেনার দরকার নেই। এমন এলাকা আছে, শুধু দলেই নেওয়া হয়নি, দলের গুরুত্বপূর্ণ পদও দিয়ে দেওয়া হয়েছে এই অনুপ্রবেশকারীদের।’
ইউএনও সালমানের বিরুদ্ধে মামলার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওবায়েদ উল্লাহ সাজু কে? দলে তার অবদান কী? আজ অতি উৎসাহী হয়ে যে ঘটনা ঘটিয়েছেন তিনি, তাতে কী হয়েছে? দল ও সরকারকে তিনি বিব্রত করেছেন।’
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) রাতেও দলের কয়েকজন নেতার সঙ্গে অনুপ্রবেশকারীদের ব্যাপারে কথা বলে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলেছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে। সবাইকে চোখ-কান খোলা রাখতে হবে।’
দলের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা বলেন, ‘দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও অন্য সম্পাদকমণ্ডলীর নেতাদের সঙ্গে দলের ভেতরে এসব বিশৃঙ্খলা নিয়ে শিগগিরই কথা বলবেন দলীয় সভাপতি। এসব বিশৃঙ্খলা নিয়ে তিনি বিশেষ কিছু নির্দেশনা দেবেন বলেও জানা গেছে। অন্য দল থেকে কাউকে দলে না নিতেও প্রাথমিক নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। এ ব্যাপারে শিগগিরই বৈঠক ডেকে সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে দলীয় সভাপতি কঠোর নির্দেশনা দেবেন বলেও সূত্র জানায়।
গত ২০ মে গণভবনে আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায়ও অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে বক্তব্য রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী। ওই সভায় তিনি বলেছেন, ‘নিজস্ব গ্রুপ ও দল ভারী করার স্বার্থে আবর্জনা দলে টেনে আনবেন না। আমার কাছে তথ্য আছে, দল ভারীর জন্য অন্য দল থেকে সুবিধাবাদীদের দলে টানা হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মনে রাখবেন, তারা দলে ঢোকেন কমিশন খাওয়ার লোভে। দলে ঢুকে এরা এত বেশি শক্তিশালী হয়ে যান যে, তাদের কনুয়ের গুঁতায় আমার দলের নিবেদিতরা টিকতে পারেন না।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক ও ফারুক খান বলেন, ‘দলের অনেক বিষয় নিয়ে বৈঠকে কথা হয়েছে। অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের সাধারণ সম্পাদককে একটি তালিকা করার নির্দেশ দিয়েছেন।’বাংলা ট্রিবিউন