মীর খায়রুল আলম,সাতক্ষীরা:
মহান স্বাধীনতার অন্যতম সংগঠক ৯নং সেক্টরের প্রতিষ্ঠাতা ও সাব-সেক্টর কমান্ডার কমান্ডার ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাস্টারের ২৪২তম মৃত্যু বার্ষিকী আজ রবিবার। প্রতিবছর ২৩ জুলাই সাতক্ষীরার কৃতি সন্তান, মহান স্বাধীনতা গ্রামের বীর সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধে ৯নং সেক্টরের প্রতিষ্ঠাতা, সাব-সেক্টর কমান্ডার, জেলা জাসদের প্রতিষ্ঠাতা, দেবহাটা উপজেলা পরিষদের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, টাউনশ্রীপুর শরৎচন্দ্র মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও সখিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক প্রয়াত ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাস্টারের ২৪তম মৃত্যুবাষির্কী অনুষ্ঠিত হবে আজ। প্রয়াত এই নেতার স্বরণে দেবহাটা টাউনশ্রীপুর শরৎচন্দ্র মাধ্যমিক বিদ্যালয় চত্বরে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আলোচনা সভা, কুরআন তেলাওয়াত ও মিলাদ মাহফিল, মরহুমের কবর জিয়ারত, তাবারক বিতরণ ও মোনাজাত।
উল্লেখ্য যে, তিনি ১৯৩৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী টাউন শ্রীপুরের বিখ্যাত মিস্ত্রি বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তৎকালীন বৃটিশ শাসন আমলে সাত জমিদারের বসতি ও বাংলাদেশের প্রথম পৌরসভা টাউনশ্রীপুর গ্রামের মুন্সী খিজির মিস্ত্রির পুত্র। তের ভাই-বোনের মধ্যে একমাত্র তিনিই বেঁচে ছিলেন। তার পিতা অত্যন্ত সহজ-সরল প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। ধর্ম পরায়ন ব্যক্তি হিসাবে এলাকায় বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। হিন্দু জমিদার শাসিত টাউনশ্রীপুর প্রাইমারী স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন। প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার পর টাউনশ্রীপুর শরৎচ্চন্দ্র হাই স্কুলে ভর্তি হন। তিনি নবম শ্রেণির ছাত্র থাকা অবস্থায় মাতৃভাষা রক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষা আন্দোলন শুরু হয়। তিনি তাদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভাষার প্রতি সম্মান জানিয়ে নিজ বিদ্যালয়ে ৪০জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করেন। সেখানে জ্বালাময়ী বক্ততা দেওয়ার পর তিনি সকলের নজর কাড়েন। ১৯৫৪ সালে তিনি উক্ত বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন। পরে সাতক্ষীরা মহাকুমার একমাত্র কলেজে আইকম ক্লাসে শাহজাহান মাস্টার ভর্তি হন। ১৯৫৬ সালে তিনি আই.কম পাশ করেন। পরবর্তীতে ১৯৫৮ সালে কুষ্টিয়া ডিগ্রী কলেজ থেকে বি.কম পাশ করেন। একই বছরে সাতক্ষীরা পদ্মশাখরা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরে ১৯৫৯সালে শ্যামনগর থানার ভেটখালী হাইস্কুলে একই পদে যোগদান করেন। সাথে সাথে ১৯৬২ সালে রাজশাহী টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বিএড পাশ করেন এবং শিক্ষা জীবন সমাপ্ত করেন। পরবর্তীতে টাউনশ্রীপুর ও সখিপুর হাইস্কুলের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পদ্মশাখরা স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বকালীন সময়ে হাড়োদ্দাহ নিবাসী মো. আজিজুর রহমানের কন্যা রাবেয়া খাতুন কে বিবাহ করেন। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধে দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে পাকিস্তানী মিলিটারী পরিচালিত মুজাহীদ বাহিনীতে যোগদান করেন। তার দক্ষতার ফলে পাকিস্তান সরকার তাকে সাতক্ষীরা মহাকুমা মুজাহীদ বাহিনীর দায়িত্ব দেন। পরবর্তীতে পাকিস্তান সরকার তাকে ক্যাপ্টেন উপাধীতে ভূষিত করেন। একারণেই তিনি ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাস্টার নামে পরিচিত হন। ১৯৭১ সালে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে দেশ রক্ষার্থে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। তিনি স্থানীয় যুবকদের নিয়ে নিজ এলাকায় মুক্তি বাহিনী গঠন করেন। দেবহাটা থানায় পাকিস্তানী পতাকা নামিয়ে জয় বাংলা পতাকা উত্তোলনের নির্দেশ দেন। বিওপির ৬ জন পাকিস্তানী ইপিআরদের বন্দী করে তাদের কাছ থেকে চায়না রাইফেল ছিনিয়ে নেন। যুদ্ধকালীন সময়ে ৯নম্বর সেক্টরের মুক্তিবাহিনীর ট্রেনিং ক্যাম্প টাউনশ্রীপুর হাইস্কুলে স্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাস্টার ভরতের টাকীতে মুক্তি বাহিনীর প্রথম ক্যাম্প স্থাপন করেন। যেটি শেষ পর্যন্ত নয় নম্বর সেক্টরের মর্যাদা পায়। একারণে তাকে নয় নম্বর সেক্টরের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়। দীর্ঘ নয় মাসে যুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলার নিজ এলাকায় ফিরে এসে পুনরায় শিক্ষাকতায় যোগদেন। তিনি ইংরেজী ১৯৮৫ সালে তৎকালনি রাষ্ট্রপতি হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদের শাসনামলে বাংলা দেশে প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং তিনি দেবহাটার প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে তিনি নিজের শরিরের মূল্যবান অংশ দুইটি চক্ষু রেজিষ্ট্রীর মাধ্যমে আই ব্যাংকে দান করেন। ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই সখিপুর হাইস্কুলে ক্লাস নেওয়ার সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। সাথে সাথে তাকে সখিপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে দুপুর ১২.৩০ মিনিটে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। পর দিন ২৪ জুলাই টাউনশ্রীপুর হাইস্কুল প্রাঙ্গনে বিকাল ৫টায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়।
তারই স্মরণে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও নিজ মাজার সংলগ্ন যথাযত ভাবে পালন করতে ক্যাপ্টেন শাজাহান মাষ্টার স্মৃতি সংসদের পক্ষ থেকে সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। টাউন শ্রীপুর শরৎচ্চন্দ্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অবস্থিত তার মাজার চত্তরে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে শনিবার সন্ধ্যা ৭.৩০মিনিট থেকে পবিত্র কোরআন থেকে তেলওয়াত, ২৩জুলাই সকাল ১০টায় আলোচনা সভা, দুপুর ১২.৩০ মিনিটে মিলাদ মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠান, বেলা ১টায় মোনাজাত এবং দুপুর ১.৩০মিনিটে তবারক বিতরণ অনুষ্ঠিত হবে। স্মরণ সভায় শাহজাহান মাস্টার স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি সাবেক অধ্যক্ষ আনিছুর রহিমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের প্রশাসক ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সাতক্ষীরা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোশারফ হোসেন মশু, জেলা জজকোর্টের পিপি এ্যাড. ওসমান গনি, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি এ্যাড.আবুল কালাম আজাদ, জেলা জাসদের সভাপতি কাজী রিয়াজ, জেলা জেএসডির সাধারণ সম্পাদক সুধাংশু শেখরসহ বিভিন্ন পর্যয়ের সুধীজন। অনুষ্ঠানে সকলকে অংশগ্রহণের জন্য ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাস্টার স্মৃতি সংসদের পক্ষ থেকে আহবান জানানো হয়েছে।
খানবাহাদুর আহ্ছান উল্লা কলেজে রোভার গ্রুপের উদ্বোধনীয় ক্লাস অনুষ্ঠিত
মীর খায়রুল আলম, সাতক্ষীরা:
উপজেলার ঐতিহ্যবাহী সুনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খানবাহাদুর আহ্ছান উল্লা কলেজ রোভার গ্রুপের উদ্বোধনীয় ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকাল ১০টায় কলেজের আইসিটি রুমে পরিচিত পর্ব ও উদ্বোধনীয় ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়। কলেজের রোভার ক গ্রুপের সম্পাদক ও জেলা রোভারের যুগ্ন-সম্পাদক আবু তালেবের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা রোভারের সহ-সভাপতি ও কলেজ রোভার গ্রুপের সভাপতি অধ্যক্ষ রিয়াজুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন কলেজের উপাধ্যক্ষ আলহাজ্ব আব্দুল মজিদ। উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান পিযুষ কান্তি মল্লিক, রসায়ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান স্বপন কুমার মন্ডল, হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান আকবর আলী, দর্শন বিভাগের প্রভাষক রিতা রানী, সিনিয়র রোভার মেট সুব্রত বিশ্বাস ও আব্দুল কাদের। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আলহাজ্ব এসএম হারুন অর রশীদ, কৃষি বিভাগের আব্দুর রহমান, বিএম শাখার প্রধান জাফর হোসেন, হিসাববিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক শাহজাহান কবির, দেবহাটা রিপোর্টাস ক্লাবের সভাপতি ও সাবেক সিনিয়র রোভার মেট মীর খায়রুল আলমসহ কলেজের সকল রোভার ও গার্লস ইন রোভারবৃন্দরা। অনুষ্ঠান শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলওয়াত করেন রোভার মাসুম বিল্লাহ, গীতা পাঠ করেন রোভার বিজয় ঘোষ এবং হামদ-নাত পরিবেশন করে রোভার মেহেদী হাসান। এসময় বক্তরা বলেন, সঠিক মানুষ হতে হলে রোভার স্কাউটের বিকল্প নেই। লর্ড ব্যাডেন পাওয়েলের রেখে যাওয়া আর্দশ বাস্তবায়ন করে দেশ সেবাই কাজ করার অনুরোধ জানান। উদ্বোধনী ক্লাসে কলেজের বিগত দিনের রোভার স্কাউটের অর্জন নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবছর কলেজ রোভার গ্রুপে ৪০জন রোভার সহচর এবং ৪১জন গার্লস ইন রোভার ভর্তি হয়েছে। তাছাড়া গত ২০১৬ সালে জেলার শ্রেষ্ট কলেজে, শ্রেষ্ট অধ্যাক্ষ, শ্রেষ্ট রোভার লিডার, শ্রেষ্ট সিনিয়র রোভার মেট, শ্রেষ্ট গ্রপ হিসাবে নির্বাচিত হওয়ায় ভূয়াষী প্রশাংসা করেন বক্তরা। পড়া-লেখা ঠিক রেখে প্রেসিডেন্ট এ্যাওয়ার্ড অর্জন করতে রোভার দের কাজ করার পরামর্শ প্রদান করা হয়। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চলনা করেন কলেজ রোভার খ গ্রুপ লিডার ও সাচিবিক বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধাপক মনিরুজ্জামান মহসিন।