রাজাপুরে জাল সনদ দিয়ে স্কুলে চাকুরির চেষ্টা, তদন্তে সত্যতা মিলেছে

রহিম রেজা, রাজাপুর (ঝালকাঠি) থেকে
ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার সাকরাইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম নৈশ প্রহরী পদে ৫ম শ্রেণি পাশ না করেই ৮ম শ্রেণির জাল সনদের মাধ্যমে চাকুরি নেয়ার চেষ্টার অভিযোগ তদন্তে সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। রোববার রাজাপুর উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান সরেজমিন তদন্ত করেন। জানা গেছে, সাকরাইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরী কাম নৈশ প্রহরী পদে মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ১ টি পদের বিপরীতে আবেদন করেছে ১০ জন। আওয়ামীলীগের এক প্রভাবশালী নেতার সুপারিশ নিয়ে এসেছে স্কুল সংলগ্ন বাসিন্দা হায়দার আলীর ছেলে আল আমিন। সে প্রাথমিক সমাপনী পাশও না করে ৮ম শ্রেণির জাল সনদ দিয়ে চাকুরি গ্রহণের চেষ্টা করছে। আল আমিন জানান, আমি এ বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছি। বার্ষিক পরীক্ষার আগে ঢাকায় গিয়ে একটি কেজি স্কুলে ৪র্থ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছি। সেখানে ৩ বছর পড়াশোনা করে চর কেওতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে পাশ করেছি। পরে আবার শেখেরহাট ইউনিয়নের শেওতা নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে সেখান থেকে অষ্টম শ্রেণি পাশ করেছি। কত সনে এবং তখনকার প্রধান শিক্ষক কে কে ছিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে আল আমিন বলেন, তা আমার মনে নেই, সার্টিফিকেট দেখে বলতে হবে। চর কেওতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক আঃ বারেক বলেন, সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে ১৮ বছর এবং প্রধান শিক্ষক পদে ১২ বছর চাকুরি করেছি। সাকরাইলের হায়দার আলীর ছেলে আল আমিন নামের কেউ আমার ছাত্র ছিল না। কিভাবে সে সনদ পেল এমন প্রশ্নের উত্তরে সাবেক ওই প্রধান শিক্ষক বলেন, বাহিরের কম্পিউটার থেকে জাল সনদ তৈরি করে এবং স্বাক্ষর জাল করে জমা দিতে পারে। আমি তাকে কোন সনদপত্র দেইনি। এর পূর্বে জাল সনদ প্রদানের বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৫ সালের ২৯ মার্চ ওই বিদ্যালয়ের দপ্তরী কাম নৈশপ্রহরী পদের নিয়োগ স্থগিত হয়ে যায়। আগামী মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) পুনরায় নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। নিয়োগ পেতে শেওতা নি¤œমাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ৮ম শ্রেণি পাশের সনদপত্র দিয়ে পুনরায় আবেদন করে। এবিষয়ে এলাকাবাসী রাজাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবরে জাল সনদের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিলে ইউএনও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আলমগীর হোসেনকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার প্রতিনিধি হিসেবে উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান রোববার শেওতা নি¤œমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিন তদন্ত করেছেন। এসময় শেওতা নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু সুফিয়ান জানান, রোববার সকালে দিকে শিক্ষা কর্মকর্তা এসে তদন্ত করেছেন। সাকরাইল গ্রামের হায়দার আলী’র ছেলে আল-আমিন নামে আমাদের বিদ্যালয়ে কোন শিক্ষার্থী ছিলো না। আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে এ নামের কাউকে ৮ম শ্রেণি পাশের সনদপত্র দেয়া হয়নি। যদি কেউ ব্যবহার করে থাকে তা জাল সনদ। উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান প্রধান শিক্ষকের বক্তব্যের সত্যতা স্বীকার করে জানান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আল আমিন নামের কোন ছাত্রের হাজিরা খাতায় নাম দেখাতে পারেননি। সে ওখানের ছাত্র ছিলো না বলেও স্বীকার করেন তিনি।

দ্বিতীয় বিয়ে নিয়ে কলহ
রাজাপুরে ঘুমের মধ্যে শ^াসরোধ করে স্ত্রী হত্যার অভিযোগে স্বামী গ্রেফতার
রহিম রেজা, রাজাপুর (ঝালকাঠি) প্রতিনিধি
ঝালকাঠির রাজাপুরের দক্ষিণ চারাখালি গ্রামে দ্বিতীয় বিয়ে করা নিয়ে কলহের ঘটনায় প্রথম স্ত্রী মিলু বেগমকে (৩৫) কে শ^াসরোধ করে হত্যার অভিযোগে স্বামী আলমগীর হোসেনকে (৪৫) পুলিশ গ্রেফতার করেছে। সোমবার ভোররাতে নিজঘরে এ ঘটনা ঘটে। আলমগীর মৃত মান্নান শরীফের ছেলে ও চট্টগ্রামে দিনমজুরের কাজ করেন। এ ঘটনায় নিহত গৃহবধূর ২ সন্তানের জনক মিলুর বাবা দক্ষিণ তারাবুনিয়া গ্রামের মান্নান হাওলাদার বাদি হয়ে হত্যার ধারায় আলমগীরের বিরুদ্ধে রাজাপুর থানায় সোমবার দুপুরে মামলা (নং১১) করেছেন। রাজাপুর থানার ওসি শেখ মুনীর উল গীয়াস ও এসআই চাঁন মিয়া জানান, আলমগীর চট্টগ্রামে নিমজুরের কাজ করার সুবাদে সেখানে বসবাস অবস্থায় গোপনে ২য় বিয়ে করে এবং সেই ঘরে ২ মাসের একটি সন্তান রয়েছে। ১৯ জুলাই স্বামী আলমগীর বাড়িতে এলে দ্বিতীয় বিয়ে ও সন্তানের বিষয়টি জানাজানি হলে প্রথম স্ত্রীর সাথে পারিবারিক কলহ শুরু হয়। এক পর্যায়ে সোমবার ভোররাত ৩টার দিকে পরিকল্পিতভাবে ঘুমের মধ্যে শ^াসরোধ করে হত্যা করে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করে এবং ঘাতক স্বামীকে গ্রেফতার করে ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে ঝালকাঠি আদালতে প্রেরণ করে বলে জানান মামলার তদন্তকর্মকর্তা এসআই চাঁন মিয়া।

রাজাপুরে ইলেক্ট্রনিক এমআইএস চালু বিষয়ে অবহিতকরণ সভা এবং মাছের পোনা অবমুক্ত
রহিম রেজা, রাজাপুর (ঝালকাঠি) প্রতিনিধি
ঝালকাঠির রাজাপুর সভাকক্ষে সোমবার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের আয়োজনে ইলেক্ট্রনিক এমআইএস চালু বিষয়ে অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মামনী এইচএসএস প্রজেক্টের ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিত এ অবহিতকরণ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মনিরউজ্জামান। ইউএনও আফরোজা বেগম পারুলের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ডা. মাহাবুবুর রহমান, এবিএম মুসা, মজিবুল হক কামাল, শাহ আলম মন্টু, আব্দুর রহমান, মোঃ আব্দুর রউফ, সিদ্দিকুর রহমান, সৈয়দ হোসাইন আহম্মেদ কামাল, সিমা আক্তার প্রমুখ। এর আগে উপজেলা মৎস্য অফিসের উদ্যোগে উপজেলা পুকুরে মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সমন্বয় সভাও অনুষ্ঠিত হয়।

শতাধিক পরিবার পানিবন্দী
রাজাপুর সদর ইউপি চেয়ারম্যান মজিবরের বিরুদ্ধে এবার দুই খাল ভরাট করে দখলের অভিযো
রহিম রেজা, রাজাপুর (ঝালকাঠি) থেকে
ঝালকাঠির রাজাপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আ’লীগের সহ সভাপতি আনোয়ার হোসেন মজিবর মৃধার বিরুদ্ধে সদরের বাজারের উত্তর পাশের খাল বরাট এবং রাজাপুর ডিগ্রি কলেজ রোডের মন্দির এলাকার একটি ভারানী খাল বালু ফেলে পুরোপুরি ভরাট করে প্লোট করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কলেজ রোডের মন্দির এলাকার ভারানী খাল বালু ফেলে পুরোপুরি ভরাট করে প্লোট তৈরি করায় কলেজ রোড ও পুরাতন জেল খানা এলাকার সামনের এলাকার শতাধিক পরিবার পানি বন্দী হয়ে পড়েছে। কলেজ রোড ও পুরাতন জেলা থানার সামনের বাসিন্দা আব্দুল বারেক, মুসা হোসেন ও মনিরুজ্জামানসহ ক্ষতিগ্রস্থরা অভিযোগ করে জানান, কলেজ রোডের সার্বজনিন বারোয়ারী শ্রীশ্রী কালিমন্দির থেকে পূর্ব দিকের সুশীলদাসের বাড়ির দিকের ইটের রাস্তা রয়েছে। মন্দির এলাকার সেই রাস্তার ডান পাশে স্থানীয় জাকারিয়ার কাছ থেকে পরিত্যক্ত একটি ডোবার ১৫ শতাংশ জমি ক্রয় করে সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আ’লীগ নেতা মো. আনোয়ার হোসেন মজিবর মৃধা। ওই জমির পূর্ব পাশে ক্রয় করেছে। ওই জমির পূর্বপাশে খাল ছিল কিন্তু ক্রয়কৃত ওই ডোবার জমি ভরাট করায় সময় খালটিও ভরাট করে বিক্রির জন্য প্লট তৈরি করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান মজিবর মৃধা। তখন স্থানীয়রা এলাকার পানি নিষ্কাশনের একমাত্র খালটি ভরাটের প্রতিবাদ করলে তিনি তাদের ওপর চড়াও হয়। পানিবন্দী এলাকায় বসবাসকারী সদর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মো. শাহজাহান হাওলাদার জানান, এলাকার মানুষদেরকে পানি বন্ধির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ২০১৪ সালে ইউনিয়ন পরিষদের অর্থায়নে সদর চেয়ারম্যানের বালু দিয়ে ভরাট করা ওই স্থানের রাস্তা কেটে একটি বক্স ড্রেন নির্মান করে দিয়েছিলাম। অন্য কোন জায়গা থেকে কেউ পানি নিষ্কাশনের জন্য জমি দিতে রাজি না হওয়ায় ওই খালের জমি খসরকারি বলে শোনা কথায় ড্রেন নির্মান করি। তবে জমিটা সঠিক কার সেটা কাগজ না দেখে বলা যাবে না। ওই স্থানে বালু দিয়ে ভরাট করায় আমি নিজেসহ এলাকার শতাধিক পরিবার পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। বৃষ্টির সময় পুরো এলাকা পানিতে ডুবে ময়লা আবর্জনায় একাকার হয়ে যায়। শিশুদের পানিতে পড়া নিয়েও চিন্তাগ্রস্থ এবং সাপসহ নানা আক্রমাত্ম প্রানীর ভয়েও রয়েছে ওই এলাকার বাসিন্দারা। অপরদিকে রাজাপুর সদরের মূল বাজারের উত্তর পাশের মাছ বাজারের জাঙ্গালিয়া নদীর শাখা খালটির দক্ষিণপাশ রাজাপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবন ভাঙা ইটের খোয়া পলেস্তরারা টুকরো ও পরিত্যক্ত বালু মাটি দিয়ে ভরাট করে জমি দখলে করেছে সদর ইউপি চেয়ারম্যান মজিবর। এতে খালটি সরু হয়ে গেছে। ওই খালটি দিয়ে এখনও ভান্ডারিয়া ও কাউখালিতে যাতায়াত করছে নৌকা ও বিভিন্ন ছোট নৌ যান। বিভিন্ন সময়ে ভূমিদস্যুরা বিভিন্ন কায়দায় খালটির বিভিন্ন অংশষ দখল করে নিচ্ছে, তার মধ্যে একজন জরনপ্রতিনিধি এমন খালদখলে লিপ্ত হওয়ায় ওইসব ভূুিমদস্যুরা বেশি উৎসাহী হয়ে দখলে মেতেছে বলে সুশীলসমাজ মনে করছেন। ইতোমধ্যে এর পূর্বে সাবেক আইনপ্রতিমন্ত্রী শাহজাহান ওমর বীর উত্তমের একটি জমি দখলে নিতে গিয়ে সমালোচনায় পড়েন সদর ইউপি চেয়ারম্যান মজিবর। এসব ঘটনা নিয়ে পুরো এলাকাজুড়ে তোলপাড় চললেও বাস্তবিক পক্ষে প্রশাসন কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি। যদিও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ইউএনও। অভিযুক্ত সদর ইউপি চেয়ারম্যান আ’লীগের সহ সভাপতি আনোয়ার হোসেন মজিবর মৃধার মতামত জন্য মোবাইলে (০১৭১৬৩৫৮৩৮৭) যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া গেছে। জানা গেছে, শারিরীক চিকিৎসার জন্য কয়েকদিন ধরে ভারতে অবস্থান করছেন তিনি। ইউএনও আফরোজা বেগম পারুল জানান, বাজার এলাকার খাল দখলের স্থান পরিদর্শন করে সদর চেয়ারম্যানকে তাৎক্ষনিক দখলমুক্ত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে আইনগতব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতোমধ্যে দখলমুক্ত করার লক্ষে চেয়ারম্যানের লোকজন কিছু সামগ্রী সরিয়েছে বলে ইউএনও জানালেও ২৩ জুলাই রোববার সন্ধ্যায় বাজারের খাল দখেলের স্থানে সরেজমিনে দেখা গেছে, দখল করতে যেসব সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে, তা সবই এখনও রয়েছে, মোটওে সরায়নি এবং ওখানে পাকা স্থাপনা করার পরিকল্পনাও চলছে বলে স্থানীয়রা জানান। ইউএনও আরও জানান, মন্দির-জেলখানার সামনের এলাকার খাল ভরাট ও পানিবন্দির বিষয়ে, ওই এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মোঃ আঃ রহিম রেজা
রাজাপুর, ঝালকাঠি।
০১৭১৮৫৫১৬৮১

Check Also

আশাশুনিতে টঙ্গী ইজতেমায় হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।ঢাকার টঙ্গীত ইজতেমা-মাঠে নিরীহ মুসল্লিদের উপর উগ্রবাদী সন্ত্রাসী সাদ পন্থীদের বর্বরোচিত হামলা ও পরিকল্পিত …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।