সাত সদস্যের কমিটি দিয়েই চলছে শ্যামনগর উপজেলা
তিন বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি
কমিটি গঠন নিয়ে সভাপতি-সম্পাদকের পাল্টপাল্টি অভিযোগ
অচিরেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের ঘোষণা সভাপতি-সম্পাদকের
নিজস্ব প্রতিবেদক: দীর্ঘ দু’বছর ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও আভ্যন্তরিন কোন্দলের কারণে শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি। তবে কমিটি গঠন না হলেও সভাপতি-সম্পাদকের যৌথ উদ্যোগে সকল রাজনৈতিক কর্মসূচী পালন হচ্ছে দায়সারা গোছের। সর্বশেষ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সভাপতি-সম্পাদক ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পদাকসহ ত্যাগী কর্মীদের নিয়ে একত্রে বসার ব্যাপারেও একমত পোষণ করেছেন। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২০ ডিসেম্বর শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন হয়। সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালিন খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক এম.পি। সম্মেলনে শান্তিপূর্ণভাবে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত হন এস.এম জগলুল হায়দার এম.পি। অপরদিকে সম্পাদক পদে কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে ১৪৩ ভোট পেয়ে সম্পাদক নির্বাচিত হন, ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারের সাবেক এম.পি এ.কে ফজলুল হকের পুত্র আতাউল হক দোলন। ১৪০ ভোট পান সম্পাদক পক্ষে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা আনিসুজ্জামান আনিস। কাউন্সিলর অধিবেশন শেষে সহ-সভাপতি পদে ৪ জনের এবং যুগ্ম সম্পাদক পদে ১ জনের নাম ঘোষণা করেন সম্মেলনের প্রধান অতিথি। চারজন সহ-সভাপতি হলেন, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান অসীম কুমার জোয়াদ্দার, গাবুরা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জি.এম শফিউল আযম লেলিন, মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান অসীম কুমার জোয়াদ্দার, কাশিমাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনিছুজ্জামান আনিছ। যুগ্ম-সম্পাদক পদে এড. জহুরুল হক হায়দারের নাম ঘোষণা করা হয়। সম্মেলন স্থান ত্যাগ করার সময় প্রধান অতিথি বি.এম মোজাম্মেল হক এম.পি এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য সভাপতি ও সম্পাদককে দায়িত্ব দিয়ে আসেন। তারা যৌথভাবে বসে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে তা জেলা কমিটির কাছে প্রেরণ করবেন।
পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন নিয়ে পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ : সরাসরি কাউন্সিলরদের ভোটে নির্বাচিত সম্পাদক আতাউল হক দোলন বলেন, সম্মেলনের পর থেকেই তিনি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। বরাবরই বিষয়টি সভাপতি এস.এম জগলুল হায়দার এম.পি এড়িয়ে গেছেন। কখনও সংসদ অধিবেশন, কখনো বা রাজনৈতিক কর্মসূচী নিয়ে ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে তিনি কালক্ষেপণ করেছেন। ফলে দীর্ঘ ২ বছর ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি।
আতাউল হক দোলন আরও বলেন, সম্মেলনের পর পরই তিনি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত এস.এম জগলুল হায়দার এম.পিকে প্রস্তাব দেন যৌথভাবে বসে ত্যাগী নেতাকর্মীদের নিয়ে পুর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের। কিন্তু তা না মেনে সভাপতি পাল্টা প্রস্তাব দেন ৬৭ সদস্যের কমিটির ৪০ জনের তালিকা তিনি নিজে (সভাপতি) দেবেন এবং বাকী ২৭ জনের তালিকা আমাকে (সম্পাদক) দেয়ার জন্য। এ প্রস্তাবে সাড়া না দিয়ে সম্পাদক আতাউল হক দোলন বলেন ভাগা-ভাগি হবে কেন ? আমরা দু’জন অন্যান্য ত্যাগী নেতাকর্মীদের নিয়ে দলের জন্য অধিকতর কল্যাণকর হয় এমন একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করবো।
আতাউল হক দোলন আরও বলেন, সভাপতিকে বুঝাতে ব্যর্থ হয়ে বিষয়টি তিনি জেলা কমিটির সভাপতি-সম্পাদক ও খুলনা বিভাগের দায়িত্ব প্রাপ্ত বর্তমান বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনকে জানাই। পরে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি খুলনা বিভাগের এক প্রতিনিধি সভায় দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ বলেন, যে সব উপজেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই সেই সব উপজেলার সভাপতি-সম্পাদক যৌথভাবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে জেলা কমিটির কাছে জমা দিতে হবে। আর তা না হলে সভাপতি-সম্পাদক আলাদা-আলাদা ভাবে জেলা কমিটির কাছে পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দিবে।
খুলনা বিভাগীয় প্রতিনিধি সম্মেলন থেকে ফিরে কমিটি গঠনের বিষয়ে পুনরায় তাগিদ দিয়েও কোন সাড়া না পেয়ে সম্পাদক আতাউল হক দোলন বিষয়টি খুলনা বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ এম.পিকে জানান। তিনি নির্দেশনা দেন পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে সভাপতি এস.এম জগলুল হায়দার এম.পিকে একটি পত্র দিতে। পরে সম্পাদক আতাউল হক দোলন সভাপতি এস.এম জগলুল হায়দার এম.পিকে পত্র দেন নির্দিষ্ট তারিখে পূর্ণাঙ্গ উপজেলা কমিটি গঠনের জন্য। এতেও কোন সাড়া পেয়ে তিনি গত ১৪ ফেব্রুয়ারি জেলা কমিটির কাছে একক স্বাক্ষরে ৭১ সদস্যের একটি কমিটি জমা দেন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি। পাশাপাশি সভাপতি এস.এম জগলুল হায়দার এম.পিও গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ৭১ সদস্যের একটা পূর্ণাঙ্গ কমিটি জেলা কমিটি কাছে জমা দেন।
সম্পাদক আতাউল হক দোলন আরও বলেন, গত ২২ জুলাই জেলা কমিটির বর্ধিত সভায় আমি বিষয়টি তুলেছি। কিন্তু কোন আলোচনা হয়নি। কমিটির পরবর্তী সভায় আলোচনাসহ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তিনি এও বলেন ওই সভায় উপস্থিত হয়ে সভাপতি এস.এম জগলুল হায়দার এম.পি তাকে বলেছেন, আমরা দু’জন মিলে এবার কমিটি করে ফেলবো খুব শিঘ্রই।
কমিটি গঠন নিয়ে এস.এম জগলুল হায়দার এম.পি বলেন, তিনি বরাবরই চেয়েছেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে কিন্তু সম্পাদক আতাউল হক দোলনের একগুয়েমির কারণে তা হয়ে ওঠেনি। তিনি দল থেকে বহিস্কৃত গোলাম মোস্তফা মুকুলকে কমিটির যুগ্ম সম্পাদক করতে চান যা আদৌ সম্ভব না। এই মুকুল বিগত দুটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোট করে দল থেকে বহিস্কার হয়। দল থেকে এ বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হলেও তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদে দেয়ার কোন সুযোগ নেই। এটা অনুধাবন না করেই সম্পাদক আতাউল হক দোলন পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় গত দু’বছরেরও অধীককাল ধরে। তবে বর্তমানে তিনি তার অবস্থান পরিবর্তন করায় খুব দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে বলে আশা করছি।
পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন না হওয়ায় দলের যে সব ক্ষতি : সম্পাদক আতাউল হক দোলন বলেছেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হলে দলীয় কর্মসূচী পালন আরও জোরালো হতো। প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন কর্মসূচীর প্রচার দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো। ইউনিয়ন কমিটিগুলোর আমরা মনিটরিং করতে পারিনা। পূর্ণাঙ্গ কমিটি থাকলে আমরা দলের অন্যান্য সহযোগিসংগঠনগুলোকে বেশী বেশী করে শক্তিশালী করা সহ ইউনিয়ন কমিটিগুলোকে পুরোপুরি সক্রিয় করতে পারতাম। দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে আসতে না পেরে অনেকটা পরিচয়হীন অবস্থায় আছে। ফলে তারা দলীয় কর্মকান্ডে ওইভাবে সক্রিয় নেই। বলা যায় কিছুটা নিস্ক্রিয় অবস্থায় আছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি হলে এ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে।