গাজীপুর সংবাদদাতাঃ গাজীপুরের শ্রীপুরে অষ্টম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে শ্লীলতাহানীর চেষ্টার অভিযোগে গার্মেন্টস কর্মী এক যুবককে জুতোর মালা গলায় পরিয়ে বেত্রাঘাত করে গ্রাম প্রদক্ষিণ করার পর তার কাছ থেকে জমি লিখে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে গ্রাম্য সালিশীতে যুবককে ওই সাজা দেওয়া হয়। এদিকে শ্লীলতাহানীর চেষ্টার অভিযোগে ওই যুবকের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেছে স্কুল ছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে।
এলাকাবাসী ও স্কুল ছাত্রীর মামা জানান, শ্রীপুরের এসকিউ গ্রুপের এসকিউ ষ্টেশন (কালার মাষ্টার) সোয়েটার কারখানায় অপারেটর আনোয়ার হোসেন (২৫) গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের আব্দুল বারেক মিয়ার ছেলে। স্থানীয় স্কুলের ৮ম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে স্কুলে যাওয়া আসার পথে বিভিন্ন সময় উত্যক্ত করতো আনোয়ার হোসেন। গত রবিবার সন্ধ্যায় প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফেরার পথে আনোয়ার হোসেন ওই ছাত্রীর পথরোধ করে এবং তার হাত ধরে টানাটানি করে শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করে। এসময় ছাত্রীটি চিৎকার শুরু করলে এলাকাবাসী এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে। পরে মেয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে ঘটনাটি স্থানীয় গাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য মিজানুর রহমান ও ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলামকে জানানো হয়। এ ঘটনায় গ্রাম্য সালিশ অনুষ্ঠিত হয়। পরদিন সোমবার রাতে এঘটনায় ছাত্রীর নানা আফাজ উদ্দিন বাদী হয়ে আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে শ্রীপুর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
আনোয়ারের ভাই সানোয়ার হোসেন জানায়, শ্লীলতাহানীর চেষ্টার মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে রবিবার রাতে আনোয়ারকে দুইজন গ্রাম পুলিশ ও দফাদার আটক করে নয়াপাড়া বাজারের একটি দোকানের পাশে রশি দিয়ে বেঁধে রাখে। এসময় তাকে কয়েক দফায় মারধর করা হয়। পরদিন সোমবার বেলা ১১টায় ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নয়াপাড়া বাজারে গ্রাম্য সালিশের আয়োজন করেন। সালিশীতে ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম, ৩নং ওয়ার্ড সদস্য মিজানুর রহমান, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ, স্থানীয় মাতাব্বর আব্দুল আওয়ালসহ গ্রামে বেশ কয়েজন উপস্থিত ছিলেন। ওই সালিশী বৈঠকে দোষী সাব্যস্থ করে আনোয়ার হোসেনকে কোমরে রশি বেঁধে, গলায় জুতার মালা পরিয়ে ও কান ধরে বেত্রাঘাত করতে করতে পুরো গ্রামে ঘুরানোর সিদ্ধান্ত দেন তারা। এসময় একটি স্ট্যাম্পের মাধ্যমে আনোয়ার হোসেন, তার ভাই সানোয়ার হোসেন ও তার মা চাঁন বানুর নিকট থেকে তাদের দখলে থাকা একমাত্র সম্বল ৫কাঠা সরকারী খাস জমি ওই স্কুল ছাত্রীর নামে লিখে নেওয়া হয়। আনোয়ারকে মারধরের ফলে সে এখন গুরুতর অসুস্থ্য হয়ে বিছানায় পড়ে আছে। মিথ্যা অভিযোগে গ্রাম্য সালিশীতে নির্যাতনের ও জমি লিখে নেওয়ার পরও আনোয়ারের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করে হয়রানী করা হচ্ছে।
শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বুলবুল বলেন, স্কুল ছাত্রীকে শ্লীলতাহানীর বিচার গ্রাম্য সালিশে হতে পারে না, এটা আপোষ অযোগ্য অপরাধ। এ ব্যাপারে পুলিশকে অবহিত করে অভিযুক্তকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা উচিত ছিলো।
ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও এলাকার অন্যান্য গন্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে সালিশে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে সেই মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আনোয়ারকে পুলিশের কাছে সোপর্দ না করে নিজেরাই বিচার করা সঠিক হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এলাকার চেয়ারম্যান যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তাই করা হয়েছে। আমরা তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাইনি।
গাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম ওই যুবককে জুতার মালা পরিয়ে গ্রাম ঘুরানোর কথা স্বীকার করে বলেন, তাকে শাস্তি হিসেবে জুতার মালা পরানো হয়েছে, তবে মারধর করা হয়নি। ভিক্টিম মেয়েটির বাবা-মা অন্যত্র বিয়ে করে ঘর সংসার করছে। ফলে মেয়েটি তার নানার আশ্রয়ে লেখাপড়া করে বড় হচ্ছে। আমি স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে ওই দরিদ্র মেয়ের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে সালিশ বৈঠকে উভয়পক্ষের সম্মতিতে আনোয়ারদের দখলীয় ৫কাঠা খাস জমি মেয়ের নামে স্ট্যাম্পের মাধ্যমে লিখে দিতে সাহায্য করেছি।
এব্যাপারে শ্রীপুর মডেল থানার এসআই খন্দকার আমিনুর রহমান বলেন, শ্লীলতাহানীর চেষ্টার ঘটনায় সোমবার রাতে ছাত্রীর নানা আফাজ উদ্দিন বাদী হয়ে শ্রীপুর মডেল থানায় আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে। তবে গ্রাম্য সালিশ ও জমি লিখে নেওয়ার কথা জানা নেই।
###