নওয়াজ শরীফকে অযোগ্য ঘোষণা ‘পাকিস্তানের এ রায় থেকে বাংলাদেশের শেখা উচিত’ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের মতামত

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকার অযোগ্য ঘোষণা করে রায় দিয়েছে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। এ রায়ের পর ফলে ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন নওয়াজ।

২০১৬ সালের পানামা পেপারস কেলেংকারির ঘটনায় শুক্রবার পাকিস্তানের সুপ্রিমকোর্ট এ রায় দেন।

পাকিস্তানের সুপ্রিমকোর্টের দেয়া এ রায়ের পর দেশের খ্যাতনামা কয়েকজন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক দৈনিক যুগান্তরের কাছে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তাদের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হলো-


অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমান:
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমান মনে করেন, পাকিস্তানের সবোর্চ্চ আদালতের রায়ের ফলে নওয়াজ শরীফকে ক্ষমতা ছাড়তে হবে। কিন্তু তাকে গ্রেফতার করা হবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে।

তিনি বলেন, নওয়াজ শরীফের পরিবর্তে পাঞ্জাব প্রদেশের মূখ্যমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিতে পারেন।

পাকিস্তানের এ ঘটনায় বাংলাদেশের জন্য তেমন উল্লেখ করার মতো কিছু নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘পানামা পেপারসে নওয়াজের ছেলে এবং মেয়ের দুর্নীতির অকাট্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনদের সম্পর্কে দুর্নীতির এমন অকাট্য প্রমাণ এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‌’উল্লেখ করার মতো বিষয় হচ্ছে, পাকিস্তান সম্পর্কে যাই বলা হোক, সেখানে বিচার বিভাগ যে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তা প্রমাণ হলো। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এমনটি হবে বলে মনে হয় না।’


অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করেন, পাকিস্তানের এ ঘটনায় শুধু বাংলাদেশ না, দক্ষিণ এশিয়ার জন্যই শিক্ষণীয় আছে।

‘এত দাঙ্গা-হাঙ্গামার পরেও সেখানে বিচার বিভাগ যে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে এটা তার উদাহরণ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর এটা থেকে শেখার আছে।’

আর পাকিস্তানে এখন কী ঘটবে তা অনুমান করা কঠিন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানে বিভিন্ন শক্তি কাজ করে। তাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সব ঘটতে নাও পারে। তবে নওয়াজ শরীফ চাইবে তার ভাই পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বা দলের অন্যকারো হাতে ক্ষমতা রেখে দিতে। তবে গুরুত্বপূর্ণ আগামী নির্বাচন। নির্বাচনের জনগণই আসলে ঠিক করবে ভবিষ্যত কি হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পাকিস্তান এমনিতেই নানা সমস্যায় আছে। এ রায়ের ফলে আরেকটা সমস্যা বৃদ্ধি পেল। তবে সেখানে গণতান্ত্রিক কাঠামো অব্যাহত থাকুক আমরা সেই কামনা করি।’,


সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবির:
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবির পাকিস্তানের এ রায় থেকে বাংলাদেশের ২টি বিষয় শেখার আছে বলে মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‌’নওয়াজ শরীফকে অযোগ্য ঘোষণার মাধ্য দিয়ে আমাদের শেখার আছে। রাজনীতিবিদ বা যারা রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনা করেন তাদের প্রতি জনগণের যে বিশ্বাস তা রক্ষা করতে হবে। সেই বিশ্বাস ভঙ্গ করে অনৈতিক কর্মকাণ্ড করলে ফলাফল এমনই হওয়া উচিৎ।’

হুমায়ূন কবির আরও বলেন, ‘আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, দেশের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো শক্তিশালী করা। পাকিস্তানের সুপ্রিমকোর্ট স্বাধীন ও শক্তিশালী না হলে দেশের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে রায় দিতে পারতো না। সুতরাং জনগণের আশা আকাঙ্খার রক্ষাকবজ হিসেবে আদালত বা অনুরুপ প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী ও পেশাদারী হতে হবে।’যুগান্তর।

Check Also

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই তত্ত্বাবধায়ক সরকারে রূপান্তরিত হতে পারে : অ্যাটর্নি জেনারেল

র্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারে রূপান্তরিত হতে পারে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।