মা-মেয়েকে ন্যাড়া করে দিলেন শ্রমিক লীগ নেতার স্ত্রী

মা-মেয়েকে ন্যাড়া করে দিলেন শ্রমিক লীগ নেতার স্ত্রী

ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে স্বামীর সঙ্গে পরকীয়ার অভিযোগ তুলে বগুড়ায় মা-মেয়ের মাথা ন্যাড়া করে দিলেন স্থানীয় শ্রমিক লীগ নেতার স্ত্রী। সেই সঙ্গে ধর্ষণের শিকার ওই তরুণীকে মারধর করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার রাতে এ ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত শ্রমিক লীগ নেতার স্ত্রী এবং মা-বোন পলাতক। পুলিশ রাতেই অভিযান চালিয়ে স্ত্রীকে না পেয়ে শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকারসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে।

শুক্রবার রাতে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) সনাতন চক্রবর্তী এ ঘটনাকে পরকীয়া বললেও শনিবার এ ঘটনায় ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগে সদর থানায় মামলা করেন নির্যাতিত তরুণী।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, বাসায় ডেকে নিয়ে ওই তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। সেই ধর্ষণের ঘটনা ধাপাচাপা দিতে তাকে মারধর করে মাথা ন্যাড়া করে দেয়া হয়েছে।

ধর্ষণ মামলার আসামিরা হলেন বগুড়া শহর শ্রমিক লীগের সভাপতি তুফান সরকার, স্ত্রী আশা খাতুন, আশার বড় বোন পৌরসভার সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর মারজিয়া হাসান রুমকি এবং তার মা রুমী বেগমসহ আরও ১০ জন।

ঘটনার পর শুক্রবার রাতে বগুড়া সদর থানা পুলিশ শহরের চকসূত্রাপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তদের মধ্যে চারজনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতাররা হলেন শহর শ্রমিক লীগের সভাপতি তুফান সরকার, তার সহযোগী আলী আজম দিপু, আতিকুর রহমান ও রুপম হোসেন।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ধর্ষণের শিকার ওই তরুণী শহরের জুবলী ইনস্টিটিউশন থেকে এবার এসএসসি পাস করে। কোথাও ভর্তি হতে না পারায় প্রতিবেশী আলী আজম দিপু ওই তরুণীকে শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকারের মাধ্যমে সরকারি কলেজে ভর্তি করে দেয়ার আশ্বাস দেয়।

পরে দিপু ওই তরুণীকে মোবাইল ফোনে তুফান সরকারের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেয়। এরপর তুফান সরকার দিপুর মাধ্যমে ওই তরুণীকে চার হাজার টাকা দিয়ে একটি কলেজে ভর্তির জন্য পাঠায়। কিন্তু সেই কলেজে ভর্তি হতে পারেনি তরুণী। বিষয়টি পরে তুফান সরকারকে জানানো হয়।

গত ১৭ জুলাই তুফান সরকার তার স্ত্রী-সন্তান বাসায় না থাকার সুযোগে ওই তরুণীকে কলেজে ভর্তি করিয়ে দেয়ার আশ্বাসে বাসায় ডেকে নেয়। সেখানে তরুণীকে আটকে রেখে দিনভর ধর্ষণ করে তুফান সরকার।

অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ওই তরুণী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়। পাশাপাশি বিষয়টি কাউকে না বলার জন্য তরুণীকে ভয়ভীতি দেখানো হয়। পরে ধর্ষণের ঘটনাটি তরুণীর মা জানতে পারেন এবং বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়।

পরে স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ লোকমুখে জানতে পারেন শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকারের স্ত্রী। শুক্রবার বিকেলে তুফান সরকারের স্ত্রী আশা খাতুন, তার বড় বোন নারী কাউন্সিলর মারজিয়া হাসান রুমকি এবং তার মা রুমী বেগম ওই তরুণীর বাড়ি যান।

তারা ধর্ষণের ঘটনার বিচার করে দেয়ার কথা বলে ওই তরুণী ও তার মাকে পৌর কাউন্সিলর রুমকির অফিস চকসূত্রাপুরে নিয়ে আসেন। সেখানে বিচারের নামে তরুণীকে খারাপ আখ্যায়িত করেন। পাশাপাশি মেয়েকে দিয়ে দেহব্যবসা করানোর উল্টো অভিযোগ আনা হয় তরুণীর মায়ের বিরুদ্ধে।

একপর্যায়ে তুফান সরকারের কয়েকজন সহযোগী ওই তরুণী ও তার মাকে বেধড়ক লাঠিপেটা করে। এতে তরুণী ও তার মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। এতেও তারা ক্ষ্যান্ত হয়নি। পরে নাপিত ডেকে মা-মেয়েকে প্রথমে মাথার চুল কেটে দেয়া হয়। সেই সঙ্গে তুফান সরকারের স্ত্রীর নির্দেশে মা-মেয়ের মাথা ন্যাড়া করে দেয়া হয়।

পরে অসুস্থ মা-মেয়েকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে স্থানীয়রা। রাত সাড়ে ১১টার দিকে সদর থানা পুলিশ বিষয়টি জানতে পেরে হাসপাতালে গিয়ে মা ও মেয়ের বক্তব্য শুনে রাতেই অভিযান চালায়।

রাত সাড়ে ১২টার দিকে তুফান সরকারকে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর তার তিন সহযোগীকেও গ্রেফতার করা হয়।

এদিকে ঘটনার পরপরই তুফানের স্ত্রী আশা খাতুন, স্ত্রীর বড় বোন পৌর কাউন্সিলর রুমকি এবং তুফানের শাশুড়ি রুমী বেগম আত্মগোপন করেন। পুলিশ এখনও তাদের খুঁজে বের করতে পারেনি।

শনিবার এ ঘটনায় নির্যাতিত তরুণীর মা বাদী হয়ে তুফান সরকারসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে অপহরণ ও ধর্ষণের মামলা করেন। ওই মামলায় আটক চারজনকে গ্রেফতার দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আমিনুল ইসলাম বলেন, মেয়েটির অবস্থা কিছুটা খারাপ। তবে তার মায়ের অবস্থা শঙ্কামুক্ত। তাদের চিকিৎসা চলছে।

জেলা প্রতিনিধি

Check Also

আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইল বাংলাদেশ

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরাতে ভারতকে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।