সুভাষ চৌধুরী:। কে নিয়েছে সোনা। গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে কেড়ে নেওয়া ২০০ ভরি সোনার হদিস মিলছে না কিছুতেই। তবে যাদের সোনা তারা বলেছেন গোয়েন্দা পুলিশের তিন কর্মকর্তার নাম। অথচ ওই তিন কর্মকর্তাকে তদন্তকারীদের সামনে হাজির করা হলে সোনার খোয়ানো মালিকরা বলেছেন ‘ এই তিন জন সোনা ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত ছিলেন না’।
শনিবার সোনা ছিনতাইয়ের বিষয়টি নিয়ে সাতক্ষীরায় তদন্ত হয়েছে। তদন্তে অভিযোগকারীরা তাদের কথা স্পষ্ট করেছেন। তদন্ত শেষে তারা এসেছিলেন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে। এ সময় সোনা ছিনতাইয়ের ঘটনা খুলে বলেন মানিকগঞ্জের সোনা ব্যবসায়ীরা। তাদের অভিযোগ সাতক্ষীরার প৪াইন জুয়েলার্সের মালিক প্রকাশ পাইন এর সাথে জড়িত।
তবে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন বলেন ‘ তারা অভিযোগ দিয়ে এক এক সময় এক রকম কথা বলছেন। তারা এমনিতেই সোনার অবৈধ ব্যবসা করেন । তার ওপর পুলিশের লোককে জড়িয়ে অভিযোগ দিয়েও পরে তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।
পুলিশ মহাপরিদর্শকের কাছে লিখিত অভিযোগকারী মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার গোবিন্দল গ্রামের জামালউদ্দিন বলেন তিনি একজন স্বর্ণ তেজাবি ব্যবসায়ী। সাতক্ষীরার মাতৃ জুয়েলার্স ও পাইন জুয়েলার্সের অর্ডার পেয়ে ঢাকার তাঁতীবাজার থেকে ২০০ ভরি দেশীয় পাকা সোনা ক্রয় করে আবদুল্লাহ ও ওমর আলি নামের দুই কর্মচারির মাধ্যমে তিনি তা সাতক্ষীরায় পাঠান গত ১৮ মার্চ রাতে। অভিযোগ করে তিনি বলেন পরদিন সাতক্ষীরা পলিটেকনিক কলেজের কাছে পরিবহন কোচটি পৌছালে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে তিন ব্যক্তি গাড়িতে উঠে পড়ে। তারা আবদুল্লাহ ও ওমরকে গাড়ি থেকে নামিয়ে করোলা গাড়িতে তুলে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে ক্রস ফায়ারের ভয় দেখায়। এ সময় তাদের দেহ তল্লাশি করে ২০০ ভরি সোনা নিয়ে নেয় তারা। পরে তাদেরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ঢাকাগামী আরেকটি পরিবহন কোচে তুলে দেওয়া হয়। অভিযোগে তিনি বলেন এ সময় ছিনতাইকারীদের কথা বার্তায় জানা যায় তাদের নাম নাসির , বোরহান ও আবুল কাসেম।
সোনা বিক্রেতা জামালউদ্দিন জানান সোনা খুইয়ে ওমর ও আবদুল্লাহ খালি হাতে তার কাছে ফিরে যান। তিনি বলেন এ সময় সোনা ক্রেতা সাতক্ষীরার প্রকাশ কুমার পাইনের সাথে যোগাযোগ করলে তাকে বলা হয় ‘ তোমাদের সব সোনা আমার পাইন জুয়েলার্সের কাছে নাসির গং বিক্রি করে দিয়েছে’। তিনি একটি ফোন নম্বর দিলে তা ‘নট রিসিভড’ হয়ে যায়। জামালউদ্দিন তার লিখিত বক্তব্যে বলেন সোনার খোঁজে বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করা হলে তার কাছে ফোনে জীবন নাশের হুমকি আসতে থাকে। এমনকি সাতক্ষীরায় সোনার জন্য এলে ক্রস ফায়ারেরও হুমকি দেওয়া হয়। এ নিয়ে তিনি সিংগাইর থানায় একটি জিডি করেছেন বলেও জানান।
তিনি বলেন তার দেওয়া অভিযোগ অনুযায়ী ঢাকায় মহাপুলিশ পরিদর্শকের নির্দেশে সম্প্রতি এক দফা তদন্ত হয়েছে। তদন্তকালে সাতক্ষীরা গোয়েন্দা পুলিশের তিন কর্মকর্তা মো. নাসিরউদ্দিন, মো. বোরহানউদ্দিন এবং আবুল কাসেম হাজির হন। সেখানে অভিযোগকারী আবদুল্লাহ ও ওমর আলি বলেন ‘ ছিনতাইয়ের সময় এই তিন ব্যক্তি ছিলেন না। আমরা তাদের দেখিনি’। এদিকে সাতক্ষীরায় আজ শনিবার একই বিষয়ে তদন্তকালে তারা একই কথা বলেছেন। অপরদিকে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এসে তারা বলেন সোনা ছিনতাইকারীরা গোয়েন্দা পুৃলিশ পচিয়দাতা হলেও এর সাথে পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর আবুল কাসেম, বোরহানউদ্দিন এবং মো. নাসির জড়িত নন।
তবে ছিনতাইয়ের সাথে কারা জড়িত জানতে চাইলে আবদুল্লাহ ও ওমর আলি বলেন ‘ এর সাথে সাতক্ষীরার পাইন জুয়েলার্সের প্রকাশ পাইন জড়িত রয়েছে। তার দেওয়া অর্ডার অনুযায়ী ঢাকা নিয়ে আসা সোনা প্রকাশ কুমার তার লোকজনকে সাথে নিয়ে ছিনতাই করে নিয়েছে’।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা গোয়েন্দা পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর আবুল কাসেম বলেন ‘ এ সম্পর্কে আমার কিছুই জানা নেই। ঘটনার একমাস পর আমার কাছে তারা টেলিফোন করে বিষয়টি জানিয়েছিল। পরে দেখি অভিযোগ দিয়েছেন আমার নামেও’। তিনি বলেন আমরা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের তিন অফিসার ঢাকায় তদন্ত কর্মকর্তার সামনে হাজির হই। এ সময় টিআই প্যারেড করলে অভিযোগকারীরা বলেন সোনা ছিনতাইয়ের সাথে এই তিন কর্মকর্তা জড়িত নন’।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা সাতক্ষীরার সহকারি পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির বলেন ‘আমি এখন বাইরে আছি। তবে তদন্ত করে সকল খুঁটিনাটি বিষয় দেখা হচ্ছে। এখনই এ বিষয়ে মন্তব্য না করাটাই সমীচিন’।
সোনা ক্রয়ের অর্ডারদাতা সাতক্ষীরার পাইন জুৃয়েলার্সের প্রকাশ পাইনের সাথে যোগাযোগের জন্য তার তিনটি ফোনে বারবার চেষ্টা করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে।
Check Also
তালায় ইউপি পরিষদ কক্ষে দুই সাংবাদিকের উপর হামলা, প্রতিবাদে মানববন্ধন
তালা প্রতিনিধি তালার ইসলামকাটি ইউনিয়ন পরিষদে সাংবাদিক আক্তারুল ইসলাম ও আতাউর রহমানের ওপর সন্ত্রাসী রমজান আলী …