সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা সহকারি কমিশনার ভূমির (এসিল্যান্ড) বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আদালত অবমাননার মামলা করায় এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে মোবাইল কোর্টে সাজা দেয়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শনিবার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন ভেটখালী গ্রামের মৃত কার্ত্তিক মন্ডলের ছেলে বিষ্টুপদ মন্ডল।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, শ্যামনগর উপজেলার হরিনগর গ্রামের ফটিক গাজীর ছেলে যুদ্ধাপোরাধী রাজাকার আব্দুল জলিল ১৯৭১ নির্যাতন করে আমাদেরকে তাড়িয়ে দেয়ার পর বাপ দাদার ভিটা ও ২২ বিঘা জমিসহ হরিনগর মৌজার ৪১ ও ৪২ দাগের জিম ভিপি তালিকা ভূক্ত করে। দীর্ঘ বছর অপেক্ষার পর বঙ্গবন্ধু কন্যা ক্ষমতায় অসার পর অমাদের জমি ভিপি তালিকা থেকে মুক্ত করে ওই জমিতে নামপত্তন করে খাজনা নেয়ার আদেশ প্রদান করেন। কিন্তু হরিনগর ভূমি অফিসে গিয়ে দেখি আমাদের পৈত্রিক ভিটা ও জমি ওই রাজাকারদের নামে নামপত্তন করা হয়েছে। ওই নামপত্তন বাতিলের জন্য শ্যামনগর এসিল্যান্ড আদালতে ১৫০ ধারা মোতাবেক আবেদন করলে এসিল্যান্ড আদেশে বলেন, খাজনার দায়ে ১৯৭১ সালে আমাদের সম্পত্তি নিলামে বিক্রি হয়েছে। অথচ ১৯৬৫ সালের আমাদের ওই সম্পত্তি ভিপি তালিকাভূক্ত করা হয়েছে এবং ভিপি তালিকাভূক্ত জমির খাজনা নেয়া হয় না। এঅবস্থায় ৭১ সালে খাজনার দায়ে জমি নিলাম হতে পারে না জানালে এসিল্যান্ড অমাদের কেচটি নামঞ্জুর করেন। আমি ওই রায়ে ক্ষুব্দ হয়ে হাই কোর্টে ১৪৪১৭/১৬ নয় রিট মামলা দায়ের করলে আদালত রুল ইস্যু করেন এবং ওই রুলের উপর আমি আরেকটি আবেদন দিয়ে শ্যামনগর ভূমি অফিসের ৩১৪ ও ৩১৫/৬৩-৬৪ নিলাম আদেশ ০১/০১/৭১ বাতিল চাই। হাইকোর্ট গত ২০১৭ সালের ২৮ ফেব্র“য়ারী আমার নিলাম রদের দরখাস্তটি আইনানুগ ভাবে একমাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করার জন্য শ্যামনগর এসিল্যান্ডকে নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু এসিল্যান্ড ওই রাজাকারদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে হাই কোর্টের আদেশ না মেয়ে আমার নিলাম রদের দরখাস্তাটি পাঁচ মাস ধরে ফেলে রাখেন। অতঃপর হাই কোর্টের আদেশ অবমাননার জন্য এসিল্যান্ড শেখ আব্দুল্লাহ সাদিদের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আদালত অবমাননার অভিযোগ দায়ের করি। যা ২৫ জুলাই হাই কোর্টের কার্যতালিকায় ছিল।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ২৫ জুলাই বিকালে একটি মোবাইল থেকে ফোন করে আমাকে এসিল্যান্ড অফিসে ডাকা হয়। পরদিন ২৬ জুলাই সকাল ১০টায় আমি সেখানে গেলে সেলিম নামের একজন অফিস সহকারি স্যার অফিসে নেই জানিয়ে আমাকে একটি কাগজে স্বাক্ষর করতে বলেন। আমি দরখাস্ত শুনানি ছাড়া স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করলে সেলিম তার নিজের ফোন দিয়ে এসিল্যান্ড শেখ আব্দুল্লাহ সাদিদের সাথে আমার কথা বলিয়ে দেন। এসময় এসিল্যান্ড শেখ আব্দুল্লাহ সাদিদ মোবাইল ফোনে আমাকে হুমকি দিয়ে তার মনগড়া কাগজে স্বাক্ষর দিতে বলেন। এসময় তিনি আরো বলেন, আমার বাড়ি গোপালগঞ্জে, তার বিরুদ্ধে হাই কোর্টে মামলা করে কোন লাভ নেই, বেশি বাড়াবাড়ি করলে মোবাইল কোর্টে সাজা দিবেন। এর অফিস থেকে চলে আসলে অমাকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধামকি দেয়া হচ্ছে। হাই কোর্টে এসিল্যান্ডের বিরুদ্ধে দায়ের করা আদালত অবমাননার অভিযোগ তুলে না নিলে যে কোন সময়ে আমাকে গ্রেফতার করে মোবাইল কোর্টে সাজা দেয়া হতে পারে। তিনি বলেন রাজাকারদের দ্বারা বাপ দাদার ভিটা ও জমি হারিয়ে ৭১ সাল থেকে নানার বাড়িতে বসবাস করছি। সরকার আমাদের জমি ফিরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু রাজাকারদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এসিল্যান্ড আমাদের জমি ফেরত দিচ্ছে না। তিনি এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এসিল্যান্ড শেখ আব্দুল্লাহ সাদিদ বিষ্টুপদ মন্ডলকে গ্রেফতার করে মোবাইল কোর্টে সাজা দেয়ার হুমকি প্রদানের কথা অস্বীকার করে বলেন, তার কাগজ দেখেছি কিন্তু বিষ্টুপদ মন্ডলকে আমি ব্যক্তিগত ভাবে চিনি না। হাই কোর্টের একটি আদেশ ছিল যেটি আমি নির্দিষ্ট সময় একমাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করে কাগজ পাঠিয়ে দিয়েছি। বিষ্টুপদ মন্ডল নিজেও তার অফিস থেকে ওই কাজগের কপি নিতে পারেন।
২৯.০৮.১৭