বগুড়ায় ছাত্রী ধর্ষণের পর সালিশের নামে মা-মেয়েকে মাথা ন্যাড়ার ঘটনায় শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকারসহ গ্রেফতার তিনজনকে তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
তবে এখনও ধরা পড়েননি নির্যাতনকারী নারী কাউন্সিলর ও অন্যরা। ধর্ষণের শিকার ওই তরুণী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
রোববার দুপুরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানা পুলিশের (ওসি-অপারেশন) আবুল কালাম আজাদ তাদের আদালতে নিয়ে সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করেন।
শুনানি শেষে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শ্যামসুন্দর রায় প্রত্যেকের তিনদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ডে নেয়া আসামিরা হলেন বগুড়া শহরের চকসূত্রাপুর এলাকার মজিবর রহমানের ছেলে শহর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক ও তুফান বাহিনীর প্রধান তুফান সরকার (২৮), তার বাহিনীর সদস্য কসাইপাড়ার দুলু আকন্দের ছেলে আলী আজম দিপু (২৫) ও কালিতলার জহুরুল হকের ছেলে রূপম (২৪)।
এদিকে শ্রমিক লীগ নেতা তুফান বাহিনীর সদস্য গ্রেফতার আতিক শনিবার রাতে ১৬৪ ধারা জবানবন্দিতে মা-মেয়েকে নির্যাতন ও তাদের মাথা ন্যাড়া করার ঘটনার স্বীকারোক্তি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী।
বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান আব্দুল মোত্তালেব হোসেন বলেন, মেয়েটির শরীরে লোহা বা রডজাতীয় বস্তু দিয়ে সাত থেকে আট জায়গায় আঘাত করা হয়েছে। ফোলা ও জখম আছে।
জেলা প্রশাসক নূরে আলম সিদ্দিকী বেলা ১১টার দিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মা-মেয়েকে দেখতে যান। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিনি মেয়েটিকে চিকিৎসা ও আইনি সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দেন। মেয়েটির ফলাফলের ভিত্তিতে তার কলেজে ভর্তির ব্যবস্থাও করবেন বলে জানান।
তিনি আরও জানান, এ ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুস সামাদ প্রধানের নেতৃত্বে কমিটিতে আছেন, জেলা সমাজসেবা অধিদফতরের উপপরিচালক শহীদুল ইসলাম খান ও জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম।
জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম জানান, এই ঘটনা খুবই জঘন্যতম। কাউকে মুখ দেখানো যাচ্ছে না। দলীয়ভাবে তিনি লজ্জিত বলে জানান। বগুড়া শহর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক তুফান সরকারের ব্যাপারে তিনি আরও বলেন, এমন কোনো অপকর্ম নেই যে এই নেতা করেন না। তার অভিযোগ, শ্রমিক লীগের এক নেতার ছত্রছায়ায় আছেন তুফান।
গত শুক্রবার বিকেলে কলেজে ভর্তি-ইচ্ছুক ছাত্রীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেন বগুড়ার শহর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক তুফান সরকার। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে তিনি ও তার সহযোগীরা দলীয় ক্যাডার ও এক নারী কাউন্সিলরকে ধর্ষণের শিকার মেয়েটির পেছনে লেলিয়ে দেন। চার ঘণ্টা ধরে তারা ছাত্রী ও তার মায়ের ওপর নির্যাতন চালান। এরপর দুজনেরই মাথা ন্যাড়া করে দেন।
এ ঘটনায় কিশোরীর মা বাদী হয়ে শুক্রবার রাতে শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকার, তার স্ত্রী আশা সরকার, আশা সরকারের বড় বোন বগুড়া পৌরসভার সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর মার্জিয়া আক্তারসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগে দুটি মামলা করেন।