বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির খসড়ায় আপিল বিভাগের ক্ষোভ

বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির খসড়ায় আপিল বিভাগের ক্ষোভ
বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালার চূড়ান্ত খসড়া দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আপিল বিভাগ।

রোববার সকালে এ সংক্রান্ত শুনানিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

আপিল বিভাগ শুনানিতে বলেছেন, মন্ত্রীর সাক্ষাতের পরই বিষয়টি পুরোপুরি ইউটার্ন করেছে। এই বিধিমালা কিছুই হয়নি।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার সঙ্গে দেখা করে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালার চূড়ান্ত খসড়াটি তার হাতে তুলে দেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এ সময় দু’জন প্রায় আধাঘণ্টা একত্রে বৈঠকও করেন।

রোববার শুনানিতে আপিল বিভাগ বলেন, নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরি সংক্রান্তবিধিমালা নিয়ে সরকারের যে কোনো এক্সপার্ট (বিশেষজ্ঞ) আপিল বিভাগের সঙ্গে বসতে পারে।

শুনানিতে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা বলেন, রোববার থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত আমি এবং আপিল বিভাগের সকল বিচারপতিরা সময় দিতে পারব। এই বিধিমালা নিয়ে আর রশি টানাটানি নয়। আইনমন্ত্রীসহ সরকারের যে কোনো এক্সপার্ট আসবেন আমি বৈঠকে বসব।

শুনানিতে প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট যে সুপারিশ করেছিল সে অনুযায়ী হয় নাই। এটি সুপারিশের ঠিক উল্টো হয়েছে। এভাবে চলতে পারে না।’

নতুন বিধিমালা পর্যালোচনা করে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে প্রধান বিচারপতি বলেন, চলতি সপ্তাহে দুপুর ২টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত যে কোনো সময় আসলে এ নিয়ে আমরা বসতে পারব।

আইনমন্ত্রীসহ আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তা এতে থাকতে পারবেন, অ্যাটর্নি জেনারেলকে বলেন প্রধান বিচারপতি।

এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী রোববার দিন ধার্য করেছেন আদালত।

উল্লেখ্য, গত ২৭ জুলাই বৃহস্পতিবার বিকালে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরি শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালার চূড়ান্ত খসড়াটি হস্তান্তর করেছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, প্রধান বিচারপতির কাছে শৃঙ্খলা বিধির খসড়া হস্তান্তর করেছি। এটি এখন প্রধান বিচারপতি দেখবেন। এরপর খসড়া বিধিমালাটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে। রাষ্ট্রপতির চূড়ান্ত অনুমোদনের পর মন্ত্রণালয় থেকে গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে সরকারের প্রণীত খসড়া শৃঙ্খলাবিধি সুপ্রিমকোর্ট তাদের সুপারিশসহ আইন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে।

সেই থেকে ধারাবাহিকভাবে কয়েক দফা সময় নেয় সরকার।

আপিল বিভাগের নির্দেশনা বাস্তবায়ন না হওয়ায় ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দুই সচিবকে তলব করেছিলেন আদালত।

তবে ওই বছর ১১ ডিসেম্বর রাতে আইন মন্ত্রণালয় এক পরিপত্রের মাধ্যমে জানায়, নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির গেজেট প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা নেই বলে রাষ্ট্রপতি সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতির এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে পরদিন ১২ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ দ্বিমত পোষণ করেন। আদালত বলেন, রাষ্ট্রপতিকে ভুল বোঝানো হচ্ছে।

বিধি প্রণয়ন সম্পর্কে আপিল বিভাগ বলেন, এটা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রশ্ন। এখানে কোনো কম্প্রোমাইজ নেই।

উল্লেখ্য, মাসদার হোসেন মামলার রায়ের ৭ নম্বর নির্দেশনায় জুডিশিয়াল সার্ভিসের সদস্যদের জন্য পৃথক শৃঙ্খলাবিধি প্রণয়নের কথা বলা হয়েছিল।

Check Also

আ.লীগের পুনর্বাসন রুখে দিতে তৈরি হাসনাত-সারজিসরা

আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন রুখে দেওয়ার আভাস পাওয়া গেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের বক্তব্যে। জুলাই শহীদ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।