ডেস্ক :পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে অযোগ্য ঘোষণা করে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট শুক্রবার যে রায় দিয়েছেন তা স্বভাবতই রীতিবিরুদ্ধ। তবে নওয়াজ ঠিক কতদিনের জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবেন সে বিষয়ে এখনও পরিষ্কার কোনো তথ্য নেই। যদিও অনেক আইন বিশেষজ্ঞ বলছেন, নওয়াজ প্রধানমন্ত্রী পদে আজীবনের জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবেন।
স্বাভাবিকভাবে কোনো সাংসদের জমা দেয়া মিথ্যা তথ্য অথবা ভুল ঘোষণার বিচার হয় পাকিস্তানের গণপ্রতিনিধিত্ব আইন (আরওপিএ)-১৯৭৬’র ৭৮ ধারা অনুযায়ী।
একই আইনের ৮২ ধারায় দুর্নীতির অভিযোগে দণ্ড দেয়া হয়। এ ধারা অনুযায়ী, অভিযুক্ত ব্যক্তি তিন বছরের কারাদণ্ড অথবা পাঁচ হাজার রুপি জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে আরওপিএ’র ৯৯(এফ) ধারা এবং সংবিধানের ৬২(১)(এফ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অযোগ্য ঘোষণা করেন দেশটির শীর্ষ আদালত।
২০১৩ সালে দেশটির সাধারণ নির্বাচনে দেয়া হলফনামায় সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ক্যাপিটাল এফজেডই’র চেয়ারম্যান পদে থাকার তথ্য গোপন করেন নওয়াজ। এ অভিযোগে পাক সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ তাকে দেশটির সরকারি কোনো অফিসের দায়িত্বে অযোগ্য হিসেবে ঘোষণা দেন।
সুপ্রিম কোর্টের আদেশে বলা হয়, আদালতের কাছে প্রশ্ন হচ্ছে; নওয়াজ শরিফ ‘ক্যাপিটাল এফজেডই’র পর্ষদ চেয়ারম্যান হিসেবে বেতন নিয়ছিলেন কি না। এছাড়া বেতন না নেয়া হলে তা ‘পাওনা’ সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হবে কি না, যা ১৯৭৬ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব আইনের (আরওপিএ) ১২(২) ধারা অনুযায়ী ঘোষণা দেয়া বাধ্যতামূলক। এ ঘোষণা দিতে না পারাটা প্রধানমন্ত্রীর অযোগ্যতা।
আদেশে আরও বলা হয়, ১৯৭৬ সালের আরওপিএ’র ৯৯(১)(এফ) ধারা ও পাকিস্তানের ইসলামী প্রজাতন্ত্রের ১৯৭৩ সালের সংবিধানের ৬২(১)(এফ) ধারা মোতাবেক নওয়াজ অসৎ। অতএব তিনি মজলিস-ই-শূরা (সংসদ) সদস্য পদে থাকার অযোগ্য।
এদিকে নওয়াজের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দেয়া রায়ে ঠিক কতদিনের জন্য তাকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে সে বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। পাকিস্তানের ২০০৮-২০১৩ সালের জাতীয় পরিষদের বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দাখিল ও সার্টিফিকেট জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া যায়। পরে ওই সংসদ সদস্যদের পদচ্যুত করা হয়। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।
জালিয়াতি ও মিথ্যা তথ্য দেয়ার অভিযোগে অতীতে দেশটির বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্যকে কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়েছে। এ ধরনের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় পাঁচ বছরের জন্য সংসদ সদস্য পদের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। কারাবাসের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে অযোগ্যতার সময় গণনা শুরু হয়। একই ধরনের সাজার মুখোমুখি হতে পারেন সদ্য পদচ্যুত পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ।
তবে আদালতের সিদ্ধান্ত নিয়েও সমালোচনা শুরু হয়েছে। দেশটির আইন বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাস, মামলার এ উদাহরণ অনেকেই প্রতারণা অথবা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানি করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারেন। এর মাধ্যমে একটি নতুন প্যান্ডোরা বক্স চালু হতে পারে। বিদ্যমান আইনে পাকিস্তানে কেউ যদি খুনের দায়ে অভিযুক্ত হন এবং শাস্তি ভোগ করে তাহলেও নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন।
দেশটির আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার মাশরুফ শাহ বলেন, কেউ যদি কোনো ইসলামী আদেশের লঙ্ঘনকারী হিসেবে প্রমাণিত হন; তাহলে তিনি আজীবনের জন্য অযোগ্য হিসেবে ঘোষিত হবেন।
এর আগে পাকিস্তান পিপলস পার্টি দেশটির সংবিধানের ১৮তম সংশোধনীর সময় ৬২ ও ৬৩তম অনুচ্ছেদে সংশোধনী আনার প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু ওই সংশোধনীর কঠোর বিরোধিতা করেছিল যে কয়েকটি দল তাদের মধ্যে নওয়াজের পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ ছিল অন্যতম। শেষ পর্যন্ত প্রস্তাবটি স্থগিত হয়ে যায়। কিন্তু সংবিধানের সেই ধারাতেই প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে বিদায় নিতে হলো নওয়াজ শরিফকে।সুত্র: এক্সপ্রেস ট্রিবিউন, ডন, এএফপি।
Check Also
ঢাকা প্রসঙ্গে বদলাতে পারে ভারতের পররাষ্ট্রনীতি
পাঁচ দশকের বিরতির পর গত মাসে বাংলাদেশের বন্দর নগরী চট্টগ্রামে একটি পাকিস্তানি পণ্যবাহী জাহাজ ডক …