কোবিন্দকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত নয় বিএনপি

কোবিন্দকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত নয় বিএনপি

ভারতের নতুন রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দকে নিয়ে উচ্ছ্বাস নেই টানা এক দশকেরও বেশি ক্ষমতার বাইরে থাকা দেশের প্রধান বিরোধী শক্তি বিএনপি। অথচ ২০১৪ সালের মে মাসে নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর অনেকটাই উচ্ছ্বসিত ছিলেন দলটির নেতাকর্মীরা। এমন পরিস্থিতিতে আশাহত দলের নেতাকর্মীদের মাঝে কোবিন্দকে নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরও বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোনো পরিবর্তন আসেনি। তাই সেই সরকারেরই আরেক নেতা কোবিন্দ রাষ্ট্রপতি হওয়ায় নতুন কোনো স্বপ্ন দেখছেন না তারা।

এদিকে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ইতোমধ্যে মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে তাদের ‘সহায়ক সরকারের’ দাবি মেনে নেয়া না হলেও পরিস্থিতি বুঝে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেয়ার কাজ করছেন দলটির শীর্ষ নেতারা।

ভারতের নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোনো প্রভাব পড়বে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মধ্যমসারির দুই নেতা বলেন, ভারতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। এমন বাস্তবতা মেনে নিয়ে নতুন রাষ্ট্রপতির কাছে ইতিবাচক কোনো কিছু প্রত্যাশা করাটা কঠিন বিষয়।

তবে আরেক নেতার মতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ সহযোগিতা করবে। নিয়ম রক্ষার নির্বাচনের কথা বলে আওয়ামী লীগ অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে আছে- এটা বিশ্বের সবাই অবগত। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভারত যে ভূমিকা রেখেছিল তাদের সেই অবস্থান আসন্ন নির্বাচনে পরিবর্তন হবে বলে মনে করেন তিনি।

অবশ্য সমালোচকদের মতে, আন্দোলন করার মতো অনেকটাই অক্ষম বিএনপি এখন বহির্বিশ্বের সহযোগিতার ওপর নির্ভর হয়ে পড়ছে। পরবর্তী নির্বাচনে মোদী ও কোবিন্দের সহযোগিতা পেতে দলটি সর্বোচ্চ লবিং-তদবির অব্যাহত রাখবে, এটাই স্বাভাবিক।

দলটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ আহমেদ তালুকদার জাগো নিউজকে বলেন, ভারত একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নিজের দেশের গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার প্রতি যতটা সজাগ থাকবেন, প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সেদিকেও তিনি যথেষ্ট সজাগ থাকবেন। এটা বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের স্বাভাবিক প্রত্যাশা। আমি বিশ্বাস করি গণতন্ত্রের জন্য তিনি বাংলাদেশের মানুষের পাশে থাকবেন এবং মানুষকে উৎসাহিত করবেন।

দলটির ভাইস চেয়ারম্যান আহমদ আজম খান বলেন, ধারাবাহিকভাবে ভারত আওয়ামী লীগ সরকারকে সমর্থন করে যাচ্ছে। একটি অনির্বাচিত সরকারকে সমর্থন করা এদেশের জনগণের জন্য পছন্দের না। আশা করি নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে কোবিন্দ একদলীয় সরকারকে সমর্থন না দিয়ে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি বন্ধুত্ব তৈরির চেষ্টা করবেন।

বিএনপির আরেক ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, বাংলাদেশের সর্বশেষ যে দুর্গতি সেটি হচ্ছে ভারতের জন্য। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সময় কংগ্রেস ক্ষমতায় ছিল। কংগ্রেসের নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি ছিলেন প্রণব মুখার্জী। বিশ্বের কোনো দেশ ওই রকম দুর্যোগপূর্ণ একটি নির্বাচন সমর্থন করেনি, ভারত বাদে। সেই ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির মেয়াদ শেষ হয়েছে। বিজেপি এখন ক্ষমতাসীন। তাদেরই মনোনীত একজন রাষ্ট্রপতি হয়েছেন।

ছাত্রদলের সাবেক এ সভাপতি মনে করেন, আমাদের একটু অপেক্ষা করে দেখতে হবে আগামী দিনগুলোতে বিজেপি ও নতুন রাষ্ট্রপতি কী ভূমিকা রাখেন। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে, গণতন্ত্র সচল রাখার জন্য আমাদের প্রত্যাশা থাকবে দেশটি অতীতের ভুলগুলো শুধরে ১৯৭১ সালের মতো আমাদের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করবে।

এ প্রসঙ্গে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের প্রবীণ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন  বলেন, ভারতের নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আমাদের রাজনীতিতে প্রভাব কেন পড়বে? আমি মনে করি, ইন্ডিয়াতে কি হলো, কোন পদে কে আসল, এতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোনো প্রভাব পড়বে না।

এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. নুরুল আমীন বেপারী  বলেন, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে ভারতের রাষ্ট্রপতির প্রভাব নেই বললেই চলে। তবে অনেক সময় রাষ্ট্রপতি ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু ভূমিকা রাখতে পারেন। যেমন প্রণব মুখার্জি আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত বিষয়টি কাজে লাগিয়েছিলেন। সেই দিক থেকে বর্তমান রাষ্ট্রপতি এমন কোনো ভূমিকা পালন করবেন না। বিশেষ করে মোদী সরকার যে ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন, সেই দিকেই রাষ্ট্রপতি লক্ষ্য রাখবেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রবীণ এ অধ্যাপক আর্ও বলেন, কোনো কারণে যদি চীনের সঙ্গে ভারতের যুদ্ধ লেগে যায় সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতি ভারতের বৈদেশিক নীতিতে একধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। চীন এবার কিন্তু খুব এডাম্যান্ট (কঠোর)। কারণ চীন একটার পর একটা হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতি ভারতের আধিপত্যবাদের যে নীতি তা থেকে দূরে সরে যেতে পারে। দেশটির রাষ্ট্রপতি পরিবর্তনে কিছু যায় আসে না।জাগো নিউজ

Check Also

আশাশুনিতে সেনাবাহিনীর হাতে অস্ত্র ও গুলিসহ ৩ সন্ত্রাসী গ্রেফতার

আশাশুনি ব‍্যুরো: আশাশুনিতে সেনা বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালিয়ে অস্ত্র ও গুলিসহ ৩ সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করছে। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।