ঢাকা: জোড়া লাগা যমজ শিশু তোফা ও তহুরাকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আলাদা করার পর এখন তাদের জ্ঞান ফিরেছে। তাদের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিই) রাখা হয়েছে। দুই শিশু সুস্থ আছে।
মঙ্গলবার বিকেলে শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল হানিফ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, বিকেল সাড়ে চারটার দিকে তোফা ও তহুরার জ্ঞান ফিরেছে। তাদের সফল অস্ত্রোপচার হয়েছে। তবে এখনো ঝুঁকিমুক্ত বলা যাবে না। তাদের যে কোনো সময় সংক্রমণের ঝুঁকি আছে। তাই তাদের হাসপাতালে দেখতে গিয়ে অযথা ভিড় না করতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সকাল ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে তোফা-তহুরার অস্ত্রোপচার শুরু হয়। তাদের আলাদা করার পর দুটো অপারেশন থিয়েটারে রেখে দুই দলে ভাগ হয়ে কাজ করেছেন সার্জনেরা।
চিকিৎসক রাজিউল হাসান, এস এম শফিকুল আলম, অসীত চন্দ্র সরকার, আশরাফুল হক, আব্দুল হানিফ ও কানিজ হাসিনা সাংবাদিকদের জানান, দুই শিশুর স্পাইনাল কর্ড, মেরুদণ্ড, পায়খানার রাস্তা ও প্রস্রাবের রাস্তা আলাদা করা হয়েছে।
জন্মের পর থেকে ১০ মাস তোফা ও তহুরা একসঙ্গে বড় হয়েছে। পিঠের কাছ থেকে কোমরের নিচ পর্যন্ত তারা পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। দুজনের পায়খানার রাস্তা ছিল একটি। তবে মাথা-হাত-পা ছিল আলাদা।
তোফা-তহুরা যেভাবে জোড়া লাগানো ছিল, চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় ‘পাইগোপেগাস’। শিশু দুটোর অস্ত্রোপচারে বিভিন্ন বিভাগের ১৬ জন সার্জন যুক্ত ছিলেন।
শিশু সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকেরা জানান, বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘পাইগোপেগাস’ শিশু আলাদা করার ঘটনা এটি প্রথম। এর আগে অন্যান্য হাসপাতালে তিন জোড়া শিশুকে অস্ত্রোপচার করে আলাদা করা হয়েছে, তাদের ধরন ছিল আলাদা।
তোফা-তহুরার মায়ের নাম শাহিদা ও বাবার নাম রাজু মিয়া। তাঁদের বাড়ি গাইবান্ধায়।
গাইবান্ধায় কোমরে জোড়া লাগানো অবস্থায় জন্ম নেয়া শিশু তৌফা ও তহুরাকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আলাদা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে অপারেশন শেষে এ কথা জানান ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান আশরাফুল হক কাজল।
তবে তাদের শারীরিক অবস্থা কেমন এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানাননি তিনি।
বুধবার সকাল ৮টার দিকে তাদের অস্ত্রোপচার শুরু হয়।
ঢামেক বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্তলাল সেন সকালে জানিয়েছিলেন শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আশরাফুল হক কাজলের নেতৃত্বে একদল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সার্বিক তত্ত্বাবধানে অস্ত্রোপচার চলছে।
উলেখ্য, গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দহবন্দ ইউনিয়নের ঝিনিয়া গ্রামের রাজু মিয়ার স্ত্রী সাহিদা বেগম নিজ বাড়িতে জোড়া লাগানো অবস্থায় দুই কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। কোমরের কাছে জোড়া লাগানো শিশু দুটির সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গই রয়েছে, তবে তাদের প্রস্রাব-পায়খানার রাস্তা একটি। গত বছরের অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে প্রথমবার ঢামেক হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে তাদের পায়ুপথের রাস্তা পৃথক করা হয়। সাহিদা বেগম ও রাজু মিয়া দম্পতির পাঁচ বছর বয়সী একটি ছেলেও রয়েছে