তৌফা-তহুরা আলাদা #তৌফা-তহুরাকে আলাদা করলেন যারা#তৌফা-তহুরার মা-বাবার চোখে আনন্দ অশ্রু#

অপারেশন থিয়েটারে চলছে জোড়া শিশু তৌফা-তহুরার দেহে কাটাছেড়া। তারাই রাজু মিয়া ও সাহিদা বেগমের প্রাণের ধন। অপারেশন থিয়েটারের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি তারা। তাদের কান্নায় আছে উদ্বেগ আর শঙ্কা। দু’জনই ভাবছেন, কখন সামনে আসবে একদেহে আটকে থাকা কোলের দুটি সন্তান। আবার এলেও স্বাভাবিক থাকবে তো।

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দহবন্দ ইউনিয়নের ঝিনিয়া গ্রামের জোড়া শিশু তৌফা ও তহুরা শারীরিকভাবে পৃথক হবে, মনের কোণে এই চিত্র ভাবতেই কান্নার মাঝেও হাসি ছড়িয়েছে তাদের মা-বাবার মুখে।

.মায়ের কোলে তৌফা-তহুরা, (ডানে) রাজু মিয়ামঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের তৃতীয় তলায় নিউরোসার্জারি বিভাগের অস্ত্রোপচার কক্ষের সামনে দেখা গেছে এমন চিত্র। এখানে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে কথা বলছিলেন রাজু মিয়া। তবে অনেকটা ভেঙে পড়েছেন সাহিদা বেগম। দু’একটি কথা ছাড়া উৎকণ্ঠায় কিছুই বের হচ্ছে না তার মুখ থেকে। শুধু এদিক সেদিক তাকান। আর মাঝে মধ্যে ওপরের দিকে দু’হাত তুলে সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া চাইছেন।

তৌফা ও তহুরার বাবা রাজু মিয়া  বলেন, ‘আমাদের বেশিকিছু বলার নেই। আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে আমার সন্তানদের জন্য দোয়া চাই। সবার দোয়া থাকলে ওরা সুস্থভাবে আমাদের কোলে ফিরে আসতে পারে। এখন পর্যন্ত ওরা সুস্থ ও স্বাভাবিক আছে। ঢামেকের চিকিৎসক ও সরকারের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। তারা আমাদের সন্তানের দায়িত্ব নিয়েছেন। আমার কোনও টাকা-পয়সা খরচ করতে হচ্ছে না।’
জোড়া শিশুর মা সাহিদা বেগম বলেছেন, ‘চিকিৎসক ও সরকারের ঋণ আমরা শোধ করতে পারবো না। আপনারা দোয়া করবেন, আমার সন্তান যেন অন্য শিশুদের মতো চলাফেরা করতে পারে।’

মঙ্গলবার সকাল থেকে দীর্ঘ সাড়ে ছয় ঘণ্টার অস্ত্রোপচারের পর সফলভাবে জোড়া শিশুকে পৃথক করেছেন ঢামেকের চিকিৎসকরা। অস্ত্রোপচার শেষে থিয়েটার থেকে যখন শিশু দুটিকে বের করে আইসিইউ’র দিকে নিয়ে যাওয়া হয় তখনও আনন্দ অশ্রু দেখা গেছে শিশু দুটির মা-বাবার চোখেমুখে।

জ্ঞান ফিরেছে তৌফা-তহুরার

গাইবান্ধায় কোমরে জোড়া লাগানো অবস্থায় জন্ম নেয়া শিশু তৌফা ও তহুরার সফল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে। আজ (মঙ্গলবার) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক দল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সার্বিক তত্ত্বাবধানে সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাদের আলাদা করা হয়েছে।

শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. আবদুল হানিফ টাবলু বিকেল সাড়ে ৪টায় এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে জানান, তৌফা-তহুরার দেহে সফল অস্ত্রোপচার হয়েছে। অস্ত্রোপচার শেষে দুজনের জ্ঞান ফিরেছে। জ্ঞান ফেরার পর কান্নাকাটিও করেছে

তিনি জানান, অস্ত্রোপচার শেষে দুজনকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। আইসিইউতে রেখে তাদের শারীরিক অবস্থার নিবিড় মনিটরিং করা হবে।

জানা গেছে, দুই দফায় এ জোড়া শিশুর অস্ত্রোপচার হয়। সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা ও পরবর্তীতে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত অস্ত্রোপচার চলে।

প্রথম দফায় অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হওয়ার পর শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক কানিজ হাসিনা শিউলি সাংবাদিকদের জানান, সকাল ৮টায় জরুরি বিভাগের তৃতীয় তলার অপারেশন থিয়েটারে অস্ত্রোপচার শুরুর পর বেলা আড়াইটায় শেষ হয়। ওরা দুজন এখন আলাদা। দুজনের অবস্থাই স্থিতিশীল। এখনও কিছু রিপেয়ারের কাজ বাকি আছে। আরও দুই-তিন ঘণ্টা সময় আমাদের লাগবে।

তিনি বলেন, তৌফা ও তহুরার স্পাইনাল কর্ড ও মেরুদণ্ড আলাদা করতে পেরেছি। এ পর্যন্ত যতটুকু সম্পন্ন হয়েছে, তা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। শিশু দুটি ভালো আছে। দুই শিশুকে আলাদা করার পর দুপুরে চিকিৎসকদের অন্য দলটি শুরু করেন দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ।

Dhaka

এর আগে ঢামেক বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন সকালে জানিয়েছিলেন শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আশরাফুল হক কাজলের নেতৃত্বে একদল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সার্বিক তত্ত্বাবধানে অস্ত্রোপচার চলছে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দহবন্দ ইউনিয়নের ঝিনিয়া গ্রামের রাজু মিয়ার স্ত্রী সাহিদা বেগম নিজ বাড়িতে জোড়া লাগানো অবস্থায় দুই কন্যাসন্তানের জন্ম দেন।

কোমরের কাছে জোড়া লাগানো শিশু দুটির সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গই রয়েছে, তবে তাদের প্রস্রাব-পায়খানার রাস্তা একটি। গত বছরের অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে প্রথমবার ঢামেক হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে তাদের পায়ুপথের রাস্তা পৃথক করা হয়। সাহিদা বেগম ও রাজু মিয়া দম্পতির পাঁচ বছর বয়সী একটি ছেলেও রয়েছে।জাগো নিউজ।

Check Also

আশাশুনিতে টঙ্গী ইজতেমায় হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।ঢাকার টঙ্গীত ইজতেমা-মাঠে নিরীহ মুসল্লিদের উপর উগ্রবাদী সন্ত্রাসী সাদ পন্থীদের বর্বরোচিত হামলা ও পরিকল্পিত …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।