ক্রাইমবার্তা ডেস্করিপোট: ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশু তোফা ও তহুরার শারীরিক অবস্থা ভালো আছে। অস্ত্রোপচারের ধকল গেলেও শনিবার সকাল পর্যন্ত শারীরিকভাবে তাদের বড় ধরনের কোনো জটিলতা দেখা দেয়নি। তাদের শরীরে সংক্রমণের যে আশংকা ছিল তা ঘটেনি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আশরাফ উল হক বলেন, তোফা-তহুরাকে জোড়া লাগানো অবস্থা থেকে দেহ আলাদা করার পর এ পর্যন্ত তাদের জটিল কোনো সমস্যা দেখা দেয়নি।
তহুরার চেয়ে তোফা মোটামুটি বেশি ভালো আছে জানিয়ে শিশু সার্জারি বিভাগের এই চিকিৎসক বলেন, তহুরার ড্রেসিংয়ের জায়গা বারবার ড্রেসিং করতে হচ্ছে। কারণ ড্রেসিংয়ের জায়গাটি ভিজে যাচ্ছে। তবে এতে এখন পর্যন্ত কোনো সংক্রমণ দেখা দেয়নি।
তিনি বলেন, তোফা-তহুরা স্বাভাবিকভাবেই খাওয়াদাওয়া করছে। মুখে বুকের দুধসহ অন্যান্য খাবার খাচ্ছে।
পিঠের কিছুটা নীচ থেকে কোমর পর্যন্ত জোড়া লাগানো অবস্থায় জন্ম নেয়া যমজ শিশু তোফা ও তহুরাকে জটিল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আলাদা করেছেন চিকিৎসকরা।
গত মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের এক দল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ৯ ঘণ্টা ধরে চলে এ অস্ত্রোপচার।
১০ মাস বয়সী গাইবান্ধার এই শিশুদের অস্ত্রোপচারের পর প্রথমে আইসিইউতে রাখলেও এখন পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে।
ঢামেক হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাহনূর ইসলাম জানান, শিশু দুটির বয়স ১০ মাস। তাদের স্পাইনাল কর্ড, মেরুদণ্ড, পায়খানার রাস্তা ও প্রস্রাবের রাস্তা একটাই ছিল। তবে মাথা-হাত-পা ছিল আলাদা। ১৬ জন সার্জন মিলে এ অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেন। তোফা-তহুরা যেভাবে জোড়া লাগানো ছিল, চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় ‘পাইগোপেগাস’। দেশে ‘পাইগোপেগাস’ শিশু আলাদা করার ঘটনা এটাই প্রথম। এর আগে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে তিন জোড়া শিশুকে আলাদা করা হয়েছে। তবে যেসব শিশুকে আলাদা করা হয়েছিল, তাদের ধরন আলাদা ছিল।
২০১৬ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার রাজ মিয়ার স্ত্রী সাহিদা আক্তার এ জোড়া শিশুর জন্ম দেন। ৭ অক্টোবর ৯ দিন বয়সে জোড়া শিশু দুটিকে চিকিৎসার জন্য ঢামেক হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে মেডিকেল বোর্ড গঠন করে জোড়া শিশু দুটির প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করা হয়। তখন ছোট একটি অপারেশনের মাধ্যমে তাদের পায়খানার রাস্তা আলাদা করে দেয়া হয়। এরপর তাদের শুধু প্রাথমিক চিকিৎসা ও পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল।
দীর্ঘ ১০ মাস প্রাথমিক চিকিৎসা ও পর্যবেক্ষণে রাখার পর তোফা ও তহুরার অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসকরা।
অন্যদিকে
বিরল রোগে আক্রান্ত সাতক্ষীরার মুক্তামনির ডান হাতের বায়োপসির পর ওই হাতের ক্ষত স্থান থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে।
শনিবার সকালে বায়োপসির পর নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) থেকে মুক্তাকে কেবিনে দেয়া হয়েছিল। তবে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে আবারও তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়েছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, এখন তার চার ব্যাগের মতো রক্ত লাগবে। মুক্তার রক্তের গ্রুপ এ-পজেটিভ।
মুক্তার বাবা ইব্রাহীম হোসেন এসব তথ্য জানিয়েছেন।
সকালে মুক্তার বায়োপসি সম্পন্ন হওয়ার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামকে) বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন জাগো নিউজকে বলেছিলেন, মুক্তার বায়োপসি সম্পন্ন হয়েছে। ৪৮ ঘণ্টা পর রিপোর্ট দেয়া হবে। মুক্তা এখন ভালো আছে।
তবে তার কয়েক ঘণ্টা পরই মুক্তার ডান হাতের ক্ষতস্থান থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হওয়ার পর তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিরল চর্মরোগে আক্রান্ত সাতক্ষীরার শিশু মুক্তাকে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। গত ৯ জুলাই ‘লুকিয়ে রাখতে হয় মুক্তাকে’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর মুক্তার চিকিৎসা দেয়ার দায়িত্ব নেন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তার যাবতীয় চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনের দায়িত্ব নেন।
এরইমধ্যে মুক্তার চিকিৎসার জন্য একটি বোর্ড গঠনসহ সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে ঢামেক কর্তৃপক্ষ।