বিশ্বজিৎ হত্যা: ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ছাত্রলীগের দুইজনের শাস্তি বহাল, খালাস ২

ঢাকা: বহুল আলোচিত পুরান ঢাকার দর্জি দোকানি বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলায় নিম্ন আদালতের দেয়া ৮ ছাত্রলীগ কর্মীর মৃত্যুদণ্ডের মধ্যে দু’জনের দণ্ড বহাল রেখেছে হাইকোর্ট। মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা দুই আসামি হলেন- রফিকুল ইসলাম ওরফে চাপাতি শাকিল ও রাজন তালুকদার (পলাতক)।32

ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আট আসামির ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শেষে রোববার বিকেলে ঘোষিত রায়ে নিম্ন আদালতের দেয়া আটজনের মধ্যে দু’জনের দণ্ড বহাল, চারজনকে যাবজ্জীবন ও দু’জনকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এছাড়া নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ১৩ আসিমর মধ্যে হাইকোর্টে দু’জন আপিল করেন। আদালত তাদেরকে খালাস দিয়েছেন। বাকি ১১ জনের বিষয়ে হাইকোর্ট কোনও মন্তব্য করেননি।

বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

একইসঙ্গে সঠিক রিপোর্ট প্রদানে ব্যর্থতায় সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশ দেন আদালত।

মৃত্যুদণ্ড থেকে যাবজ্জীবন পাওয়া চার আসামি হলেন- মাহফুজুর রহমান নাহিদ, ইমদাদুল হক এমদাদ, জিএম রাশেদুজ্জামান শাওন ও মীর মো. নূরে আলম লিমন (পলাতক)।

মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস পাওয়া দুই আসামি হলেন- সাইফুল ইসলাম, কাইয়ুম মিঞা টিপু।

এছাড়া যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে এএইচএম কিবরিয়া ও গোলাম মোস্তফাকে খালাস দেয়া হয়।

এর আগে এ মামলার রায়ে ছাত্রলীগের আটজনকে মৃত্যুদণ্ড ও ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় ঢাকার একটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল।

নিম্ন আদালতের দেয়া মৃত্যুদণ্ডের অনুমোদন (ডেথ রেফারেন্স) ও আসামিদের করা আপিলের শুনানি শেষে গত ১৭ জুলাই রায় ঘোষণার এ দিন ঠিক করে দেন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শুরু হয় গত ১৬ মে।

১৫ কার্য দিবস শুনানি শেষে গত ১৭ জুলাই হাইকোর্ট রায়ের জন্য এ দিন ধার্য করেন।

এদিকে নৃশংস ওই হত্যাকাণ্ডের পর সাড়ে চার বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো গ্রেফতার করা যায়নি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি রাজন তালুকদার ও মীর মো. নূরে আলম লিমনসহ ১৪ আসামিকে।

অভিযোগ রয়েছে, পলাতকরা সাজা পরোয়ানা নিয়ে দেশ ও বিদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু তাদের গ্রেফতার করতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে এই মামলায় নিম্ন আদালতে পাঁচজন মৃত্যুদণ্ড ও দুজন যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কারাগারে রয়েছেন।

২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিএনপির ডাকা সকাল-সন্ধ্যা অবরোধের সময় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ভেবে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে ছাত্রলীগের একদল কর্মী বিশ্বজিতকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে।

নিরীহ ওই যুবককে দিন-দুপুরে নৃশংসভাবে হত্যার দৃশ্য টেলিভিশনে দেখে আঁতকে উঠেছিল দেশের জনগণ।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ২০১৩ সালের মার্চ মাসে আদালতে এই হত্যা মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ২১ নেতাকর্মীকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

ওই বছরের ১৮ ডিসেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক নিজামুল হক আটজনকে ফাঁসি ও ১৩ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।

নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- রফিকুল ইসলাম ওরফে চাপাতি শাকিল, মাহফুজুর রহমান নাহিদ, ইমদাদুল হক এমদাদ, জিএম রাশেদুজ্জামান শাওন, সাইফুল ইসলাম, কাইয়ুম মিয়া টিপু, রাজন তালুকদার (পলাতক) ও মীর মো. নূরে আলম লিমন (পলাতক)।

যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে এএইচএম কিবরিয়া ও গোলাম মোস্তফা গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন।

পলাতকরা হলেন- খন্দকার ইউনুছ আলী, তারিক বিন জোহর ওরফে তমাল, আলাউদ্দিন, ওবায়দুল কাদের তাহসিন, ইমরান হোসেন, আজিজুর রহমান, আল আমিন, রফিকুল ইসলাম, মনিরুল হক পাভেল, কামরুল হাসান ও মোশারফ হোসেন।

আসামিদের সবাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ছিলেন।

রায়ের পর বিচারিক আদালতের ফাঁসির রায় অনুমোদনের জন্য নথি ডেথ রেফারেন্স আকারে হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি দণ্ডপ্রাপ্ত কারাবন্দি আসামিরা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে।

Check Also

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করেননি সমাজী

জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার সাবেক ৯ মন্ত্রীসহ ১৩ জনকে আন্তর্জাতিক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।