সাতক্ষীরায় ট্রাফিক পুলিশের বেপরোয়া চাঁদাবাজি !

সাতক্ষীরা সংবাদদাতাঃ সাতক্ষীরায় বেপরোয়া ট্রাফিক পুলিশ। চাঁদাবাজিতে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে গাড়ির মালিক সহ সাধারণ মানুষ। রাস্তায় গাড়ি বের করলেই মাসিক চাঁদা দিতে হয় ট্রাফিকের। বৈধ কাগজপত্র থাকলেও ট্রাফিকের মাসিক চাঁদা থেকে যেন রক্ষা নেই। নিয়মিত চাঁদার টাকা না দিলে রিক্যুইজেশনের পাশাপাশি মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয় চালক ও মালিকদের। এভাবে প্রতিমাসে জেলার বিভিন্ন ধরনের যানবাহন থেকে আদায় করা হয় কয়েক লক্ষ টাকার চাঁদা। আর এই চাঁদা কালেকশনের কাজে নিয়জিত রয়েছেন সাতক্ষীরা ট্রাফিক পুলিশের চার কন্সটেবল। সাতক্ষীরা শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে দাঁড়িয়ে তারা এই চাঁদার টাকা আদায় করে থাকেন বলে অভিযোগ।53
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাতক্ষীরা ট্রাফিক পুলিশে দীর্ঘদন ধরে চাকুরি করছেন কন্সটেবল হেলাল, কন্সটেবল মকবুল, কন্সটেবল নজরুল, কন্সটেবল রুহুল ও বকশি শিশির। জেলা ট্রাফিক পুলিশের বড় কর্তাদের হয়ে এরা চারজন জেলা শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে দাঁড়িয়ে যানবাহন থেকে মাসিক চাঁদা আদায় করে থাকেন। এদের মধ্যে বিভিন্ন কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের গাড়িও রয়েছে। বৈধ কাগজপত্র থাকলেও ট্রাফিকের মাসিক চাঁদা দিতে হবে এটা যেন জেলায় ট্রাফিক পুলিশের কাছে রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। চাঁদা না দিলে নানা ভাবে তাদেরকে হয়রানি করা হয়। এক পর্যায় বাধ্য হয়ে মালিক পক্ষ ট্রাফিক পুলিশের সাথে মাসিক চুক্তিতে বাধ্য হন।

একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ট্রাফিক কন্সটেবল হেলাল শহরে চলাচলকারি নছিমন, করিমন, আলম সাধু ও ইঞ্জিনভ্যান থেকে মাসিক চাঁদা আদায় করে থাকেন। এছাড়া বিভিন্ন কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শহরের আয়শা ষ্টোরের ইসলাম এর কাছ থেকে ৫০০ টাকা, পালপাড়ার এনবোর্ড থেকে ৩০০ টাকা, হামকো ব্যাটারি কোম্পানি থেকে ২০০ টাকা, ফুয়াং এর বাবলু’র কাছ থেকে ৩০০ টাকা, খুলনা রোডমোড়ের গোপাল বিড়ি থেকে ২০০ টাকা, বিনেরপোতা আব্দুল্যাহ ফুডস থেকে ৫০০ টাকা, বড়বাজারের এসিআই এর ডিলার প্রদীপের কাছ থেকে ৩০০ টাকা, ভাই ভাই ইলেকট্রনিক্স থেকে ৫’শ টাকা, পুরাতন সাতক্ষীরার রাজু প্রাণ জুস থেকে ৩০০ টাকা, আল আমিন ফার্নিসার থেকে ৫০০ টাকা, নেভি কোম্পানি থেকে এক হাজার টাকা, ফ্রেস পানি থেকে ৫০০ টাকা ও পালপাড়ার কুয়াশা পানি’র গাড়ি থেকে ৩’শ টাকা করে আদায় কওে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। একই সাথে সাতক্ষীরার ভোমরা, পাটকেলঘাটা, নলতা, কালিগঞ্জ ও শ্যামনগরের বিভিন্ন ট্রাক থেকে মাসিক ৫০০ টাকা হারে চাঁদা আদায় করেন ট্রাফিক কন্সটেবল হেলাল।
যশোর উপশহর এলাকার সব গাড়ি, দড়াটানা মোড়, নওয়াপাড়া, বসুন্দিয়া, রাজারহাট, মনিরামপুর ও কেশবপুর এলাকা থেকে আগত সব গাড়ি থেকে ৫০০ টাকা হারে মাসিক চাঁদা আদায় করেন কন্সটেবল মকবুল। খুলনা জেলার সকল গাড়ি থেকে ৫০০ টাকা করে মাসিক চাঁদা আদায় করেন কন্সটেবল নজরুল এবং যশোর, খুলনা ও সাতক্ষীরা, মাগুরা ও ঝিনাইদহা এলাকার বিভিন্ন গাড়ির শোরুম এর গাড়ি থেকে মাসিক ৭০০ টাকা চাঁদা আদায় করেন কন্সটেবল রুহুল। চাঁদার বাইরে নেই জেলার সকল এলাকার দ্রুতগামী রুগী বহনকারি এ্যাম্বুলেন্সও।

পাশাপাশি সাতক্ষীরার খুলনা রোড মোড়ের সকল ইজিবাইক ও মহেন্দ্র ও মোটর সাইকেল থেকে ২০০/৩০০ টাকা এবং ঢাকাগামি সকল পরিবহন থেকে মাসে ৫০০ টাকা করে চাঁদ আদায় করেন বকসি শিশির। আরও রয়েছে, শহরের তালা ও পাটকেলঘাটা অঞ্চল থেকে আসা বাজারের কাচামাল বহনকারি ইনজিন ভ্যান চালক মোসলেম, আবু তালেব, ফারুক, জব্বার, কওছার ও রাজু’র কাছ থেকে প্রতি সপ্তাহে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা করে আদায় করা হয়। আর এটাকা আদায়ের দায়িত্বে রয়েছেন টিএসআই মিজানসহ তার নির্দেশিত সঙ্গীরা।
সূত্র আরো জানায়, মালিকদের উপর চাপ প্রয়োগ করে যানবাহন থেকে আদায় করা এসব চাঁদার টাকা থেকে বড়কর্তাদের হিস্যা দেয়ার পর কন্সটেবল হেলাল এক লাখ, মকবুল এক লাখ, নজরুল ৩০ হাজার, রুহুল ৩০ হাজার ও বকসি শিশির ২০ হাজার টাকা ভাগ পেয়ে থাকেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন গাড়ির মালিক বলেন, বৈধ সবধরনের কাগজপত্র থাকার পরও ট্রাফিক পুলিশকে মাসিক চাঁদা দিতে হয়। চাঁদার টাকা না দিলে রাস্তায় সিগনাল না মানা, ওভারটেকিং, ওভারলডিং ইত্যাদি বিভিন্ন ধরেনর মিথ্যে মামলা দিয়ে কখনো বা রিক্যুইজেশন স্লিপ হাতে ধরিয়ে দিয়ে অযথা আমাদেরকে হয়রানি করা হয়। ফলে গাড়ির মালিকরা ট্রাফিক পুলিশের কাছে একরকম জিম্মি হয়ে পড়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, রাস্তায় গাড়ি নামালে আগে তাদের মাসিক চাঁদা পরিশোধ করতে হয়। মাসিক চাঁদা দিলে গাড়ির কোন কাগজপত্র লাগেনা। ট্রাফিক পুলিশের এই চাঁদাবাজির কারনে অনেক আনফিট ও রেজিস্ট্রেশন বিহীন গাড়ি রাস্তায় চলাচল করার সুযোগ পাচ্ছে। এতে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা, ঘটছে প্রাণহানি। তিনি ট্রাফিক পুলিশের এই অবৈধ চাঁদাবাজি বন্ধের দাবি জানান।
অপরদিকে বেশ কয়েকমাস শহরে অভিযান হচ্ছে ব্যাটারি ভ্যানের বিরুদ্ধে যা জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের নির্দেশে মাসিক আইনশৃঙ্খলা মিটিং এর সিদ্ধান্তনুযায়ী এই অভিযান অব্যহত আছে। অভিযোগ রয়েছে, এসব গাড়ি আটক করে পুলিশ লাইনের মধ্যে নিয়ে মোটর খুলে নেয়ার পাশাপাশি গাড়ি ছেড়ে দেয়ার জন্য নেয়া হচ্ছে বাড়তি টাকা। অভিযানে এসমস্ত দরিদ্র শ্রেণির মানুষ নাকাল হলেও ট্রাফিক পুলিশের এই অত্যাচার থেকে তাদের রক্ষা নেই।
এসব বিষয়ে সাতক্ষীরা ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর (টিআই) তপন কুমার তার াঅধীনস্থ চার কন্সটেবল ও বকসিকে দিয়ে যানবাহন থেকে মাসিক চাঁদা আদায়রে ঘটনা অস্বীকার করে বলেন, কেউ আপনাদেরকে ভূল তথ্য দিয়েছে। আমার লোক চাঁদা আদায় করলে আমি জানতে পারতাম। কিন্তু আমি এবিষয়ে কিছুই জানিনা। ট্রাপিক পুলিশ কর্তৃক যানবাহন থেকে মাসিক চাঁদা আদায়ের ঘটনা সঠিক নয় বলেও দাবি করেন তিনি। এমন সংবাদ তুলে ধরেছেন সাতক্ষীরার একটি অনলাইন দৈনিক ভয়েস অফ সাতক্ষীরা ডট কম।

Check Also

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করেননি সমাজী

জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার সাবেক ৯ মন্ত্রীসহ ১৩ জনকে আন্তর্জাতিক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।