ভারতে গরু নিয়ে বাড়াবাড়ি, চামড়া শিল্পে ধস

হিন্দু ধর্মে গরুকে দেবতা হিসেবে দেখা হয়। তাই ভারতের অনেক রাজ্যে গরু জবাই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গো-রক্ষকরা রাস্তাঘাটেও পাহারা দেন যাতে কেউ গরু, এমনকি গরুর চামড়াও বহন করতে না পারে। এমনকি, গরু-মহিষ নির্বিশেষে চামড়া দেখলেই তাদের নির্বিচার হামলার কারণে এখন পরিবহন কোম্পানিগুলোও আর চামড়া বহন করতে চাইছে না।

এর জের এসে পড়ছে দেশটির বৃহৎ চামড়া শিল্পের ওপর। এ খবর দিয়েছে বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, এখনো কিছু চামড়া ব্যবসায়ী ক্রেতাদের কাছে নিজেদের তৈরি পণ্য তুলে ধরছেন। যেমনটা করছেন চামড়া ব্যবসায়ী ইমরান আহমেদ খান। যদিও এ ধরনের ঘটনা এখন খুবই কম ঘটছে ভারতে।

কারণ গরু নিয়ে ভারতে যে তুলকালাম চলছে, তার মারাত্মক প্রভাব পড়েছে দেশটির অন্যতম বড় এই শিল্পখাতে। ফলে এখন ব্যবসা ভিয়েতনামে সরিয়ে নেয়ার কথা ভাবছেন ইমরান।

“লাখ লাখ মানুষ চাকরি হারানোর ভয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। আমাদেরও ছাঁটাই করতে হবে, কর্মীদের সংখ্যা কমাতে হবে। কারণ আমরা আর ব্যবসা চালাতে পারছি না। সরকারের যে নীতি, তা এই শিল্পের জন্য ক্ষতিকর। তারা যেন এই শিল্পকে মৃত্যুসনদ দিয়ে দিয়েছে। যেখানে লাখ লাখ মানুষের রুটিরুজি রয়েছে”- বলছিলেন ইমরান আহমেদ খান।

কলকাতার যেসব বড় চামড়া কারখানা রয়েছে সেখানে এখনো কাজ চললেও আগের তুলনায় মেশিনগুলো এখন খুবই কম ব্যবহৃত হয়।

কারণ ভারতের অনেক রাজ্যে গরু জবাই নিষিদ্ধ করা হয়েছে আর চামড়া নিয়ে যেসব ট্রাক এখানে আসছে, তার উপরেও ঘটছে হামলার ঘটনা।

কলকাতা ট্যানার্স অ্যাসেসিয়েশনের কর্মকর্তা জিয়ে নাফিস বলছিলেন, “প্রতিদিনই সড়কে চামড়াবাহী গাড়ির ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে। তাই গাড়িমালিকরা আর চামড়া পরিবহন করতে চায় না।”

“মানুষ বুঝতে চায় না এখানে কি গরু, নাকি মহিষ না কিসের চামড়া আছে। চামড়া দেখলেই তারা সেগুলো ছুঁড়ে ফেলে, গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। তারা মনে করে, সবই গরুর চামড়া” -বলেন নাফিস।

ফলে রুটি রোজগার কমে যাওয়ার আশংকায় প্রতিদিনই বিক্ষোভ চলছে। এদের বেশিরভাগই চামড়া কারখানার শ্রমিক বা নিম্নপদের কর্মচারী।

একজন বিক্ষোভকারী নিরেজ কুমার বলছেন তার মতো হাজার হাজার লোক তাদের চাকরি হারাচ্ছে।

“আমরা এখন বেকার বসে আছি, কিছুই করার নেই। আমরা কীভাবে আমাদের পরিবারকে খাওয়াবো? আমরা কি এখন চু্রি করবো?” -বলেন নিরেজ কুমার।

গরু জবাইয়ের বিষয়টি নিয়ে ভারতের পার্লামেন্টেও উত্তপ্ত বিতর্ক হয়েছে।

বিরোধীদের অভিযোগ, সাধারণ মানুষদের ওপর এসব হামলার ব্যাপারে চোখ অন্ধ করে রেখেছে নরেন্দ্র মোদির সরকার। তবে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি তা নাকচ করে দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, “এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান একেবারেই পরিষ্কার, কারো এ ধরনের কর্মকাণ্ড বরদাস্ত করা হবে না। সরকার নিশ্চয়তা দিচ্ছে, যারাই এ জন্য দায়ী, তাদের প্রতি কোনো সহানুভূতি দেখানো হবে না।”

ভারতে এখন স্বাধীনতার ৭০ বছর পালন করা হচ্ছে। কিন্তু গরু নিয়ে বিতর্ক যেন সবকিছু ছাড়িয়ে গেছে।

গরু এখন যেন ভারতের পথ নির্দেশক হয়ে উঠেছে। দেশটি কোন পথে যাচ্ছে, একটি উদার দেশ নাকি হিন্দু দেশ?

রাজনৈতিক বিশ্লেষক সন্দীপ রয় বলছেন, “আমি মনে করি, ভারতে গরু যেন অন্যদের সঙ্গে আমাদের পরিচয়ের ভিন্নতার একটি বিষয় হয়ে উঠেছে। কেউ যথেষ্ট দেশপ্রেমিক কিনা, সেটা যাচাইয়ে এটা যেন খুব সহজ একটি লিটমাস টেস্ট। সত্যিকারের ভারতীয় মানে বোঝানো হচ্ছে হিন্দু ভারতীয়।”

ভারতের অনেক ব্যস্ত সড়কে গরু এখন প্রধান আলোচনার বিষয়। তবে এটি গণতান্ত্রিক দেশটির চরিত্র বদলে দেবে কিনা, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

Check Also

ঢাকা প্রসঙ্গে বদলাতে পারে ভারতের পররাষ্ট্রনীতি

পাঁচ দশকের বিরতির পর গত মাসে বাংলাদেশের বন্দর নগরী চট্টগ্রামে একটি পাকিস্তানি পণ্যবাহী জাহাজ ডক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।