আলিফ হোসেন, তানোর
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ‘বিএনপি’র সাম্প্রতিক ঘোষিত কেন্দ্রীয় কমিটিতে মিজানুর রহমান মিনুকে পদাবনিত করে যুগ্ম-মহসচিব থেকে সরিয়ে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা করা হয়েছে। এদে রাজশাহী বিএনপিতে মিনুর প্রায় দীর্ঘ দু’দশকের একচ্ছত্র আধিপত্যর অবসান হতে চলেছে। সম্প্রতি রাজশাহীতে বিএনপির দলীয় কর্মীসভায় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর রায় এর উপস্থিতিতে হামলা-ভাংচুরের ঘটনায় মিনু ও তার অনুগত ৪ জন নেতাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এসব কারণে হাইকমান্ড মিনুর ওপর অনেকটা ক্সুব্ধ হয়ে উঠেছে। ফলে রাজশাহী অঞ্চলে বিএনপির রাজনীতিতে মিজানুর রহমান মিনুর দীর্ঘ প্রায় দু’দশকের একচ্ছত্র আধিপত্যর অবসান হতে চলেছে। এদিকে রাজশাহী মহানগর বিএনপির সম্পাদক এ্যাডঃ শফিকুল হক মিলন এবং সভাপতি ও রাজশাহী সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে ঘিরেই এখানে বিএনপির রাজনীতি আবর্তিত হচ্ছে। এতে সাধারণ নেতাকর্মীদের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তবে কি রাজশাহীর বিএনপিতে মিনুর প্রয়োজন ফুরিয়ে যাচ্ছে ? রাজশাহী অঞ্চলে বিএনপির রাজনীতিতে মিজানুর রহমান মিনু একটি সুপরিচিত নাম। তিনি একাধিকবার রাজশাহী সিটিকর্পোরেশনের মেয়র, সদর আসনের সাংসদ, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও রাজশাহী মহানগর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। রাজশাহী অঞ্চলে বিএনপির রাজনীতিতে তাঁর অনেক ইতিবাচক দিক রয়েছে, তবে নেতিবাচক দিকও কম নয়। দীর্ঘ প্রায় দু’দশক রাজশাহী অঞ্চলে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মধ্যে তিনি অন্যতম ছিলেন। এ সময় তিনি নিজের একক ক্ষমতা প্রয়োগ এবং প্রভাব বিস্তার করে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য, কমিটি গঠনে পদ বাণিজ্য, সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে গা বাচিয়ে চলা, রাজপথে নেতাকর্মীদের রেখে নিজে আতœগোপণ ও কমিটি গঠনে তার অনুগতদের প্রাধান্য দিয়েছেন বলে অভিযোগ তৃণমূল নেতাকর্মীদের। বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ও রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি থাকায় মিনু রাজশাহী অঞ্চলের বিএনপিতে একক আধিপত্য বজায় রাখতে পরিক্ষীত ও ত্যাগী নেতা রাজশাহী জেলা বিএনপির সভাপতি এ্যাডঃ নাদিম মোস্তফা ও তার অনুসারিদের কোনঠাসা করে রাখেন। রাজশাহী মহানগরীতে নাদিম অনুসারিদের বিনা বাধায় কোনো সভা-সমাবেশ করতে দেয়া হয়নি। এমনকি তেমন কোনো সরকারবিরোধী কর্মসূচী পালন না করে নাদিম মোস্তফা ও তার অনুসারীদের ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠে মিনু অনুসারীরা। অনেকক্ষেত্রে মিনু অনুসারিদের বাধার কারণে নাদিম অনুসারিরা সরকারবিরোধী কর্মসূচিতে তেমন ভূমিকা রাখতে পারেননি। এসব কারণে একই দলে ও একই এলাকায় থেকেও তাদের বৈরিতা ছিল চোখে পড়ার মতো। রাজশাহী অঞ্চলে শুধু বিএনপির নেতাকর্মীই নয় সাধারণ মানুষের মধ্যে বিএনপির হেভিওয়েট এই দুই নেতার বৈরিতা ও বিপরিতমূখী অবস্থান আলোচনা-সমালোচনার বিষয় ছিল। কিšত্ত সম্প্রতি বিএনপির ঘোষিত কেন্দ্রীয় কমিটিতে মিজানুর রহমান মিনুকে যুগ্ম-মহাসচিব থেকে সরিয়ে চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা করা হয়। আর জেলার সভাপতি ও কেন্দ্রের বিশেষ সম্পাদক থেকে সরিয়ে নাদিম মোস্তফাকে নির্বাহী কমিটির সদস্য করা হয়। হেভিওয়েট ও পরিক্ষীত দুই নেতাকে পদাবনতি করে বির্তকিত নেতা ব্যারিস্টার আমিনুল হককে পদোন্নতি দিয়ে দলের ভাইস-চেয়ারম্যান করা হয়েছে যেটা সহজভাবে মেনে নিতে পারেনি তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত মিজানুর রহমান মিনুর অনুসারি, তৃণমূলে নেতা ও কর্মী-সমর্থকরা মিনুর বিকল্প নেতৃত্ব হিসেবে রাজশাহী সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও ্এ্যাডঃ শফিকুল হক মিলনের দিকে ঝুকছেন। ফলে বিএনপিতে মিনুর অবস্থান ক্রমেই মিয়ম্রাণ হয়ে উঠছে। এসব কারণে মিনু রাজশাহী বিএনপিতে নিজের অস্থিত্ব ও অধিপত্য টিকিয়ে রাখতে এ্যাডঃ নাদিম মোস্তফাকে কাছে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। রাজশাহীতে এখন বুলবুল-মিলন বলয় ঘিরেই বিএনপির রাজনীতি আর্বতিত হচ্ছে বলে বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র এই খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছে।
এদিকে মিজানুর রহমান মিনু বিএনপিতে তার হরানো নিজের ক্ষমতা ও আধিপত্য ফিরে পেতে এবার নাদিম মোস্তফার শরনাপন্ন হয়েছেন। মিনু একদিন যেই নাদিম মোস্তাকে ঠেকাতে মরিয়া হয়ে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপকৌশল গ্রহণ করেছিলন, আজ সেই নাদিম মোস্তফাকে কাছে পেতে ফের নানা অপকৌশল গ্রহণ করেছেন। কারণ তিনি দেরিতে হলেও বুঝতে সক্ষম হয়েছেন বিএনপিতে তার এই দূর্দীনে নাদিম মোস্তফাকে ছাড়া রাজশাহীর বিএনপির রাজনীতির মাঠে তার টিকে থাকায় কঠিন হয়ে পড়বে। তবে নাদিম মোস্তফার অনুসারীরা বিষয়টি সহজভাবে মেনে নিতে পারছেন না বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজশাহী জেলা বিএনপির এক জৈষ্ঠ নেতা বলেন, বিপদে পড়ে মিনু ভাই এখন নাদিম ভাইকে কাছে টানতে মরিয়া হয়ে উঠেছে, যখন তার সুদিন আসবে তখন তিনি আবার তাকে ছুড়ে ফেলে দিবেন কাজেই মিনু ভাইয়ের বিষয়ে সতর্ক থাকায় হবে বুদ্ধিমানের কাজ। এব্যাপারে একাধিকবার যোগাযোগের চেস্টা করা হলেও মুঠোফোন বন্ধ থাকায় মিজানুর রহমান মিনুর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। #
তানোর প্রতিনিধি
Check Also
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই তত্ত্বাবধায়ক সরকারে রূপান্তরিত হতে পারে : অ্যাটর্নি জেনারেল
র্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারে রূপান্তরিত হতে পারে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল …