রায়ে সংসদকে হেয় করা হয়েছে, পর্যবেক্ষণের যুক্তিগুলো অগ্রহণযোগ্য: আইনমন্ত্রী

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচার বিভাগ ও সংসদ ‘পাওয়ার কনটেস্টে’ (ক্ষমতার প্রতিযোগিতা) নামেনি। এ সংশোধনীতে কোনো পাওয়ার কনটেস্ট ছিল না। বরং সংশোধনীর মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আরও সুসংহত ও সুপ্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের ৯ দিন পর আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো প্রতিক্রিয়ায় আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

দুপুর সোয়া ১২টার দিকে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।

এসময় মন্ত্রী বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে কিভাবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব হয়েছে সে বিষয়ে আমি বোধগম্য নই। আমরা মনে করি এর মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, রায়ের সঙ্গে দ্বিমত থাকলও রায়ের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। তবে যে যুক্তিতে সংশোধনী বাতিল করা হয়েছে তা গ্রহণযোগ্য নয়।

তিনি এসময় আরও বলেন, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল মিলিটারি ডিটেক্টরশিপ থেকেই প্রাপ্ত। ৭৭ সালে সামরিক সরকার বিচারপতিদের অপসারণ করে। আমরা মনে করি, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে বিচারপতিদের স্বাধীনতা খর্ব হয়েছিল।

এ রায়ে সরকার সংক্ষুব্ধ এবং রায়ের খুঁটিনাটি নিয়ে কাজ চলছে। এ নিয়ে রিভিউয়ের চিন্তা ভাবনা রয়েছে বলে জানান আইনমন্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, স্বাধীনতা কোনো একক ব্যক্তির দ্বারা অর্জিত হয়নি। এ বক্তব্যে আমরা মর্মাহত। কারণ ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ সময় বঙ্গবন্ধু এককভাবে বাঙালির জন্য আন্দোলন করেছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন। আর কোনো নেতাকে স্বাধীকার আন্দোলনের জন্য ১৩ বছরের বেশি সময় কারাবরণ করতে হয়নি। ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী থাকলেও মূলত তারই আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে, তারই নেতৃত্বে স্বাধীনতা অর্জিত হয়। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জনগণের দেয়া ক্ষমতায় তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। ৪৭ বছর পর পুনরায় এ বিষয়টি আমাকে বর্ণনা করা লাগছে এটা আমার জন্য খুবই লজ্জাজনক এবং কষ্টকর।

‘এজন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি রায়ের পর্যবেক্ষণে যেসব অপ্রাসঙ্গিক ও অপ্রয়োজনীয় বক্তব্য দেয়া হয়েছে তা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করা হবে।’

মন্ত্রী এসময় প্রধান বিচারপতির বক্তব্য আবেগ ও বিদ্বেষ তাড়িত বলেও মন্তব্য করেন।

উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রস্তাব সংসদে পাস হয়, যা ষোড়শ সংশোধনী হিসেবে পরিচিত। ৯ জন আইনজীবীর এক রিট আবেদনে হাইকোর্ট ২০১৬ সালে সংবিধানের ওই সংশোধনী ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে রায় দেন।

গত ৩ জুলাই আপিল বিভাগেও ওই রায় বহাল থাকে। যার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ পায় ১ আগস্ট। সর্বোচ্চ আদালতের ওই রায়ের ফলে সুপ্রিমকোর্টের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা আবারও জাতীয় সংসদ থেকে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে যাচ্ছে।

Check Also

আশাশুনিতে টঙ্গী ইজতেমায় হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।ঢাকার টঙ্গীত ইজতেমা-মাঠে নিরীহ মুসল্লিদের উপর উগ্রবাদী সন্ত্রাসী সাদ পন্থীদের বর্বরোচিত হামলা ও পরিকল্পিত …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।