আমার চোখের আলোর বিনিময়ে এ দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য লেখাপড়ার পরিবেশ স্বাভাবিক হোক। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার আবেদন, অন্ধ বলে যেন সমাজে আমাকে কোনোদিন হেয় হতে না হয়। আমি নিয়মিত লেখাপড়া করতে ও সম্মানজনক অবস্থান চাই। কারও প্রতি আমার কোনও ব্যক্তিগত আক্রোশ কিংবা ক্ষোভ নেই। তবে তদন্তে যদি কিছু বেরিয়ে আসে তাহলে সেটা রাষ্ট্রীয় ব্যাপার’— বলছিলেন সিদ্দিকুর রহমান। শুক্রবার (১১ আগস্ট) বিকালে ঢাকায় নেমে সাংবাদিকদের এসব বলেন তিনি।
ভারতের চেন্নাইয়ের শংকর নেত্রালয়ে চিকিৎসা শেষে ঢাকায় ফিরেছেন তিতুমীর কলেজের ছাত্র সিদ্দিকুর রহমান। শুক্রবার (১১ আগস্ট) বিকাল ৪টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান তিনি। এদিন বিকাল পৌনে ৫টায় সাংবাদিকদের সামনে আসেন দৃষ্টিশক্তি হারানো এই তরুণ।
সিদ্দিকুর পৌঁছানোর আগে তার বন্ধুরা জড়ো হন বিমানবন্দরের টার্মিনাল-১-এর নিচে ক্যানোপি-১-এর সামনে। তারা সবাই চোখ বেঁধেছিলেন কালো কাপড়ে। বন্ধুদের মধ্যে শাহ আলী, শেখ ফরিদসহ অন্যরা বলেন, ‘আমাদের এই কালো কাপড় শিক্ষাব্যবস্থার অন্ধত্বের প্রতীক। কেবল সিদ্দিকুর নয়, আমরা পুরো জাতি আজ অন্ধ, শিক্ষাব্যবস্থাও অন্ধ। আমরা আমাদের দাবি পূরণ করতে এসে অন্ধত্বকে বরণ করে নিলাম। আমাদের চোখে কালো কাপড় বাঁধা প্রতীকী অন্ধত্ব। এর মাধ্যমে আমরা বোঝাতে চাই, রাষ্ট্রও অন্ধ। শিক্ষাব্যবস্থা অন্ধ।’
পরীক্ষার রুটিন ও তারিখ ঘোষণাসহ কয়েকটি দাবিতে গত ২০ জুলাই শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়া নতুন সাতটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হন তিতুমীর কলেজের ছাত্র সিদ্দিকুর রহমান।
শুক্রবার বিমানবন্দরের সামনে সিদ্দিকুরের বন্ধুরা বলেন, ‘ইতোমধ্যে এ ঘটনায় সাত জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। কিন্তু কাউকে শাস্তি দেওয়া হয়নি। সিদ্দিকুর কি তার চোখের বিনিময়ে কারও শাস্তি দাবি করতে পারে না? এ প্রশ্ন রইলো রাষ্ট্রের কাছে।’
এদিকে বিমানবন্দর থেকে সিদ্দিকুর যাচ্ছেন জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে। আহত হওয়ার পর এখানেই ভর্তি করা হয়েছিল তাকে। তখন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সিদ্দিকুরের ডান চোখে আলো ফেরার সম্ভাবনা নেই এবং বাঁ-চোখের অবস্থাও ভালো না বলে জানান দেশের চিকিৎসকরা।
পরে এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নির্দেশে ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের তত্ত্বাবধানে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসরা তাকে চেন্নাইয়ের শংকর নেত্রালয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠান। যদিও চেন্নাইয়ের চিকিৎসকরা বলেছিলেন, চোখে আলো ফেরার কোনও সম্ভাবনা নাই। তারপরও সিদ্দিকুরের চাওয়া অনুযায়ী স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অনুরোধে অস্ত্রোপচার করানো হয় চেন্নাইয়ে।