দেশের প্রতিটি সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ন্যূনতম একটি সংসদীয় আসন রাখার বিষয়ে করা খসড়া আইনে বিধান রাখায় সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণে জটিলতার আশঙ্কা করছেন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা।
তাদের মতে, বর্তমানে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নিয়ে একটি সংসদীয় আসন রয়েছে। বাকি ১০টি সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে ইউনিয়ন যুক্ত হয়ে সংসদীয় আসন গঠিত হয়েছে। এছাড়া সিটি কর্পোরেশন এলাকাগুলোর ভোটার সংখ্যার দিক থেকেও ব্যাপক তারতম্য রয়েছে।
দেশের ১১টি সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে কুমিল্লা ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ভোটার সংখ্যা অনেক কম। এমন অবস্থায় প্রতিটি সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ন্যূনতম একটি আসন রাখার বিধান যুক্ত করার ক্ষেত্রে যেন জটিলতা দেখা না দেয় সেজন্য উদ্যোগ নিয়েছে ইসি। বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত আইন ও বিধিমালা খসড়া তৈরি করতে মতামত দিয়েছে এ সংক্রান্ত ইসি কমিটি।
বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনে এ কমিটির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বৈঠকের আলোচনার বিষয়ে নাম গোপন রাখার শর্তে একাধিক নির্বাচন কর্মকর্তা জানান, এ কমিটির প্রথমবারের বৈঠকে কর্মপন্থা কী হবে তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। কমিটির কাজের সুবিধার্থে পরিসংখ্যান ব্যুরো ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একজন করে প্রতিনিধি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি সারা দেশে সব আসনের সীমানা নির্ধারণে জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেমস (জিআইএস) সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
তারা আরও জানান, সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত খসড়া আইনের অনুচ্ছেদ-৭ এ বলা হয়েছে, ‘প্রতিটি জেলায় ন্যূনপক্ষে একটি আসন নির্ধারণ করিতে হইবে। প্রতিটি সিটি কর্পোরেশনে ন্যূনপক্ষে একটি আসন নির্ধারণ করা যাইবে’। এ বিধান যুক্ত করার ফলে সিটি কর্পোরেশনে ন্যূনতম একটি সংসদীয় আসন সংরক্ষণ করা হলে সীমানা নির্ধারণে জটিলতা দেখা দিতে পারে বলে বৈঠকে জানানো হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বৃহস্পতিবার রাতে যুগান্তরকে বলেন, সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত আইন ও বিধিমালা করছে এ সংক্রান্ত একটি কমিটি। ওই কমিটি যাতে দ্রুত এসব কাজ শেষ করে সে বিষয়ে মতামত দেয়া হয়েছে।
সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ন্যূনতম একটি সংসদীয় আসন করার ক্ষেত্রে জটিলতা হতে পারে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নতুন আইনি কাঠামো পর্যালোচনা করে দ্রুত তা চূড়ান্ত করতে ওই কমিটিকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। আইন ও বিধিমালা তৈরি না হওয়া পর্যন্ত সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ কাজ শুরু করা সম্ভব হবে না।
বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে তিনি জানান, স্থানীয় সরকারভুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উপনির্বাচন করার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সিটি কর্পোরেশন, জেলা পরিষদ বা অন্য কোনো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কোনো আসন শূন্য হলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তা যেন দ্রুত কমিশনকে জানায় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শূন্য হওয়ার পর দ্রুত তা ইসিকে জানানো হলে সেখানে তফসিল ঘোষণাসহ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো বড় সিটি কর্পোরেশনগুলোতে আসন সংখ্যা নির্ধারণ করার বিষয়ে কমিটির সদস্যরা মোটামুটি একমত হয়েছেন। তবে কোন সিটিতে কত আসন হবে সে বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। বৈঠকে কুমিল্লা ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশনকে একেকটি সংসদীয় আসন হিসেবে নির্ধারণের ক্ষেত্রে জটিলতা হতে পারে বলে মত দেন কেউ কেউ।
তাদের মতে, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনে ভোটার সংখ্যা তিন লাখের অনেক কম। বর্তমানে কুমিল্লা ৬ ও ১০ আসনের আংশিক এলাকায় নিয়ে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন। এ সিটি কর্পোরেশন এলাকার এত কম সংখ্যক ভোটার নিয়ে একটি সংসদীয় আসন করা হলে ওই জেলার অন্য আসনগুলোতে ভোটার সংখ্যা বেড়ে যাবে।
একই অবস্থা বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ক্ষেত্রেও। সিটি কর্পোরেশন ও ১০টি ইউনিয়ন পরিষদ নিয়ে বরিশাল-৫ আসনে গঠিত। নতুন বিধান অনুযায়ী শুধু বরিশাল সিটি কর্পোরেশনকে একটি সংসদীয় আসন করা হলে ভোটার সংখ্যা কম হবে। পাশাপাশি ওই দশটি ইউনিয়নকে অন্য আসনের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।
আরও জানা গেছে, সিলেট-১ আসনের অংশবিশেষ এলাকা নিয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশন গঠিত। এছাড়া আসনের অন্তর্র্ভুক্ত সিলেট সদর এলাকা সিটি কর্পোরেশনের বাইরে রয়েছে। নতুন বিধান কার্যকর হলে সদর এলাকা অন্য আসনের সঙ্গে যুক্ত হবে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় দুটি সংসদীয় আসনের আংশিক এলাকা রয়েছে। সিটি কর্পোরেশন নিয়ে একটি আসন করা হলে নারায়ণগঞ্জের আসনগুলোতে পরিবর্তন দরকার হবে।
একইভাবে রাজশাহী ছাড়া সবক’টি সিটিতে পরিবর্তন আনতে হবে। বৈঠকে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় আসন নির্ধারণের ক্ষেত্রে জটিলতা যেন দেখা না দেয় সে বিষয়টি বিবেচনায় রেখে আইন ও বিধিমালা তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেন কমিটির সদস্যরা।