ভারতে দু’জন এমবিএ ডিগ্রিধারীর একজন বেকার

কয়েকবছর আগেও উচ্চ শিক্ষিতদের মধ্যে এমবিএ ডিগ্রির প্রতি ঝোঁক ছিল চোখে পড়ার মতো। বাংলাদেশের মতো ভারতেও এমবিএ হয়ে উঠেছিল চাহিদার শীর্ষে থাকা ডিগ্রি।

একসময় ভারতে অনেকেরই এমবিএ প্রোগ্রাম সেরা পছন্দ ছিল। আকষর্ণীয় এ ডিগ্রির প্রতি কেবল ব্যবসা-বাণিজ্যে আগ্রহীরাই নয়, সরঞ্জাম ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্টদের চাহিদা ছিল। কিন্তু এমবিএ ডিগ্রি ও ভারতজুড়ে বিভিন্ন বিজনেস স্কুল দুইয়ের অবস্থাই এখন খারাপ।

বর্তমানে ভারতে এমবিএ ডিগ্রি অর্জনকারী প্রতি দুইজন স্নাতকের মধ্যে একজন বেকার। এমনকি, এমবিএ কোর্সে ভাটা পড়ায় বন্ধ হয়ে গেছে কিছু বিজনেস স্কুল। ভারতের অন্যতম গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক খবরে এমনটাই বলা হয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গত কয়েকবছরে এমবিএ ডিগ্রি, বিশেষ করে বিজনেস স্কুলগুলোর জন্য ফলপ্রসু হয়ে ওঠেনি। সমগ্র ভারত থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই কোর্সের আয় আশানুরুপ নয়। তার ওপরে অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রতি দুই এমবিএ স্নাতকদের একজন চাকরি পাচ্ছেন না। ফলে বাড়ছে বেকারত্ব।

২০১৬ সালের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সারা ভারতে মোট ৩ হাজার ৮০টি কলেজে ৭৫ হাজার ৬৫৮ জন ছাত্র এমবিএ ডিগ্রিতে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতের এদের অধিকাংশের ক্ষেত্রে কি ঘটে তার স্পষ্ট কোনো চিত্র নেই।

সর্বভারতীয় কারিগরি শিক্ষা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অনীল শ্রাস্ত্রবোধি বলেন, কিছু ছাত্র যারা ছোট কাজ পেয়ে কাজ নেয় না, আবার কিছু ছাত্র যারা স্নাতক শেষের দু’এক বছরের মধ্যেই কোনো কোম্পানিতে চাকরি নেয়। পড়াশোনার সময় শিক্ষার্থীদের কিছু প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে বাধ্যতামূলক ইন্টার্নশিপের সময়ে এ পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটবে বলে মনে হয়।

নিয়োগদাতাদের ভাষ্য, চাকরির ক্ষেত্রে ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টের শতভাগ সাফল্য দেখা গেলেও তিয়ার বিজনেস স্কুলের শিক্ষার্থীরা কাঙ্ক্ষিত মার্ক পাচ্ছে না। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী যখন সেরা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি না হতে পেরে, দ্বিতীয় সেরা প্রতিষ্ঠানেও ভর্থিতে ব্যর্থ হলেও পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে ওঠে। ভর্তিতে ব্যর্থতার বিপর্যয়ের কারণে ২৩৩টি বিজনেস স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে, যেগুলোর এমবিএ চালু রাখার মতো যথেষ্ট সামর্থ্য ও উপযোগিতা নেই।

গত বছরের এক পরিসংখ্যান থেকে দেখা গেছে, ভারতের সেরা ২০টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভারতীয় বিজনেস স্কুলগুলোর মাত্র ৭ ভাগ শিক্ষার্থী এমবিএ শেষ করেই চাকরি পাচ্ছেন।

বিজনেস স্কুলগুলোর এ দশার পেছনে রয়েছে, শিক্ষার মাত্র নিয়ন্ত্রণ অভাব ও অবকাঠামো সমস্যা, নিম্নমানের অনুষদ ও শিক্ষকদের কম বেতন। এসব স্কুলের বেশিরভাগে আধুনিক ও দক্ষতামূলক বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা অনুপস্থিত। এমনকি কোর্সেও অনাবশ্যক বিষয় জুড়ে দেয়া হয়েছে।

তবে এ অবস্থা থেকে উত্তরণে কিছু সুপারিশ করেছে সর্বভারতীয় কারিগরি শিক্ষা কাউন্সিল। এগুলো হলো, এসব বিজনেস স্কুলের পাঠ্যক্রম প্রতিবছর সংশোধন, তিনটি ইন্টার্নশিপ বাধ্যতামূলক করা, শিক্ষার্থীদের কারিগরি ও সাধারণ দক্ষতা শিক্ষাদান, উদ্ভাবনে উদ্বুদ্ধ করা, পরীক্ষা পদ্ধতির পুনর্বিন্যাস এবং দক্ষ শিক্ষকের ব্যবস্থা করা।

Check Also

‘পাকিস্তান দলে প্রত্যেক ক্রিকেটারই অধিনায়ক’

টি-টোয়েন্টি সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে পেরে ওঠেনি পাকিস্তান। তিন ম্যাচ সিরিজের শেষ ম্যাচ পণ্ড হয়, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।