জেল-পাতুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনার জীবন শুরু তার। শরীরের অবস্থা ভালো হলে হয়তো আরও ভালোভাবে পড়াশুনা করতে পারত সে। বেশিক্ষণ পড়লে ঘাড়ের বাম দিকসহ সমস্ত বাম পাশে প্রচন্ড যন্ত্রনা করতে থাকে। রাজিবের মা মমতা গাইন জানান, জন্মের পর থেকেই তার ছেলের এরকম অবস্থা। প্রথমে তার বাম হাতটা অস্বাভাবিক ছিল। খুব নরম ছিল তার বাম হাত। সে সময় সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালে নেওয়া হলে বেশ কিছু পরিক্ষা শেষে ডাক্তারা বলেন রাজিবের সু চিকিৎসার ব্যবস্থা সাতক্ষীরাতে নাই। তার যখন বয়স ৪বছর তখন অনেক কষ্টে কিছু টাকা সংগ্রহ করে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে নেওয়া হয়। ভারতের কলকাতার বেলভূমি নার্সিং হোমের ডাঃ আশিষ মুর্খজীর কাছে একটানা ৬মাস চিকিৎসা শেষে তার শরীরের অবস্থার উন্নতি হয়। দেশে ফিরে আসার সময় ডাক্তার জানান ১৫ বছর বয়সে তার একটা অপারেশন করতে হবে। কিন্তু অভাবের সংসারে টাকার অভাবে ছেলেকে আর ভারতে নেওয়া সম্ভব হয়নি। কয়েক বছর ভালো থাকার পর তার সমস্ত বাম পাশে টিউমারের মত হয়ে ফুলতে থাকে। সাথে প্রচ- যন্ত্রণা। তিন বছ আগে তার হাতের ফোলা অংশ ফেঁটে রক্ত বের হতে শুরু করলে খুলনা বাদশা মেমোরিয়াল হাসপাতাল ও সার্জিকালে চিকিৎসা নেওয়া হয়। সেখানে ১মাস চিকিৎসা শেষে কোন উন্নতি না হওয়ায় বাড়ি ফিরে আসে। খুলনা থেকে ফিরে সর্বশেষ ঢাকা জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতাল, ইউনাইটেড হাসপাতালসহ ঢাকা পিজি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া হয়। সেখানেও অবস্থার কোন উন্নতি না হওয়ায় নিরাশ হয়ে বাড়িতে বসে যস্ত্রনা ভোগ করে যাচ্ছে। তার বারা ঢাকাতে ফেরী করে মাদুর বিক্রি করে যে টাকা আয় করেন সেটা দিয়ে সংসার চালাতেই কষ্ট হয়। তার উপর ছোট ছেলের পড়ার খরজ। এত কিছুর পর তার এ বিরল রোগের চিকিৎসা করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। বাধ্য হয়েই চোখের সামনে ছেলের যন্ত্রনায় ছটফট করার দৃশ্য দেখতে হয়। বাবা মায়ের জন্য এর চেয়ে কষ্ট আর কি হতে পারে ? রাজিবের আকুতি সরকার, স্বাস্থ মন্ত্রণালয়, কোন বে-সরকারি প্রতিষ্ঠান বা কোন স্বহৃদয় ব্যক্তি যেন তার প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে এ কঠিন যন্ত্রণার হাত থেকে তাকে মুক্তি দেয়ার জন্য চেষ্টা করেন। রাজিবের মোবাইল ফোন নম্বর : ০১৭৫০/৮০৬৬৫১
সংবাদটি প্রকাশ হওয়ার পর বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি আবুল কালাম আজাদ টেলিফোনে কথা বলেন সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন মো. তাওহিদুর রহমানের সঙ্গে। রাজীব গাইনের চিকিৎসা সেবার জন্য সিভিল সার্জনকে নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন মো. তাওহিদুর রহমান জানান, সংবাদ প্রকাশের পর সেটি দেখেই বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি আবুল কালাম আজাদ আমাকে ফোনে রাজীবের চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, রাজীব গাইনের বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ নিন। আগামী ২৩ তারিখের মধ্যেই রাজীব গাইনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। আমি ইতোমধ্যে রাজীব গাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করে কথা বলেছি। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে আসতে বলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এখানে আসার পর মেডিকেল বোর্ড গঠন করে রাজীব গাইনের চিকিৎসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে আমরা তাকে চেষ্টা করবো ২/৩ দিনের মধ্যেই ঢাকাতে পাঠানোর।
এ ব্যাপারে তার পরিবারের সঙ্গেও বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
এদিকে, টাকার অভাবে ১৯টি বছর চিকিৎসা না হওয়া রাজীব গাইন সাতক্ষীরা সিভিল সার্জনের যোগাযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সিভিল সার্জন স্যার আমাকে ফোন দিয়েছেন। আমাকে যেতে বলেছেন। এবার হয়তো আমার চিকিৎসার একটা উপায় হবে। আপনারা সকলে দোয়া করবেন আমার জন্য। আমি যেন আর দশজন সাধারণ মানুষের মতো সুস্থ স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারি।
রাজীব গাইন (১৯) সাতক্ষীরা আশাশুনি উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা বড়দল ইউনিয়নের মাদিয়া গ্রামের কার্ত্তিক চন্দ্র গাইনের ছেলে। জন্ম থেকেই বিরল ও জটিল রোগে আক্রান্ত। যে রোগের কোনো সঠিক নামই তারা আজো জানেন না। তার বাম হাতটি অস্বাভাবিকভাবে ফুলে ফেপে উঠেছে। সেই সঙ্গে ফুলে ফেপে উঠেছে পিঠও।