ইয়েমেন যুদ্ধ থেকে সৌদি আরব বের হওয়ার পথ খুঁজছে বলে ফাঁস হওয়া এক ইমেইল প্রকাশ পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের দুই সাবেক কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনার সময় এ ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান।
ইয়েমেনে শিয়াপন্থী হুতি বিদ্রোহী ও সুন্নিপন্থী সরকারের মধ্যে গৃহযুদ্ধ চলছে। এ যুদ্ধে দেশটির সুন্নি প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মনুসর হাদি সরকারের পক্ষ নেয় সৌদি আরব।
মিডল ইস্ট আইয়ে সোমবার প্রকাশিত ফাঁস হওয়া ইমেইলগুলোয় বিষয়টি উঠে এসেছে।
ইসরাইলে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত মার্টিন ইনডিক ও প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের আমলের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা স্টিভেন হ্যাডলির সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে আলোচনার সময় ইয়েমেন যুদ্ধের সমাপ্তির ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন সালমান। তিনিই ইয়েমেনে হামলার মূল পরিকল্পনাকারী বলে মনে করা হয়।
কাতারের সঙ্গে সৌদি আরব, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিসরের সম্পর্ক ছিন্নের অন্তত এক মাস আগে এ বিষয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছিল।
ওই আলোচনায় সৌদি রাজতন্ত্রের উত্তরাধিকারী প্রিন্স সালমান বলেছিলেন, তাদের চিরবৈরী ইরান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের নীতির সঙ্গেই থাকবে সৌদি আরব। সৌদি প্রিন্স ও মার্কিন কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনার বিষয়বস্তু ফাঁস হয় ইনডিক ও ওয়াশিংটন ডিসির সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ আল-ওতাইবার মধ্যে ইমেইল চালাচালির ফলে।
সালমানের ইচ্ছার বিষয়টি নিয়ে ইনডিক ও ওতাইবার মধ্যে ইমেইলে যোগাযোগ হয়। সেই ইমেইলগুলো গ্লোবাললিকস গ্রুপের হাতে আসে এবং মিডল ইস্ট আই তা প্রকাশ করেছে।
হাদির পক্ষে এবং হুতিদের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালে ইয়েমেন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে সৌদি আরব। সৌদি আরবের বিমান হামলায় বহু বেসামরিক লোক নিহতের ঘটনা ঘটছে। ইয়েমেনে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ১০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে এবং কয়েক লাখ মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে।
এদিকে জাতিসংঘ বলেছে, সৌদি আরব চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে ইয়েমেনে যে পরিমাণ বিমান হামলা চালিয়েছে, তা ২০১৬ সালের মোট বিমান হামলাকে ছাড়িয়ে গেছে। জাতিসংঘের ইয়েমেনবিষয়ক বিশেষ দফতর ‘প্রোটেকশন ক্লাস্টার ইয়েমেন’ জানিয়েছে, ইয়েমেনের বিভিন্ন প্রদেশে ২০১৭ সালে প্রতি মাসে গড়ে যে বিমান হামলা হয়েছে, তা ২০১৬ সালের তুলনায় তিনগুণ। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) অধীনে ‘প্রোটেকশন ক্লাস্টার ইয়েমেন’ পরিচালিত হয়।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, হুতি আন্দোলনের নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোয় সৌদি বিমান হামলা ভয়াবহ রকম বেড়ে গেছে। সৌদি আগ্রাসনের পাশাপাশি বর্তমানে মহামারী আকারে কলেরা ছড়িয়ে পড়ায় ইয়েমেনে বর্তমানে বিশ্বের সর্ববৃহৎ মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে। গত মাসে জাতিসংঘ জানিয়েছিল, ইয়েমেনের ১ কোটি ১৭ লাখ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এর মধ্যে ৬৮ লাখ মানুষের অবস্থা শোচনীয় হওয়ায় তাদের জন্য জরুরি খাদ্য সাহায্য প্রয়োজন। আলজাজিরা।