গাজীপুর সংবাদদাতাঃ গাজীপুরের শ্রীপুরে ফুটবল খেলা নিয়ে বিরোধের জেরে বৃহস্পতিবার রাতে সন্ত্রাসীরা ফুটবল খেলোয়াড় মাছ ব্যবসায়ী এক যুবককে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করেছে। নিহতের নাম আরিফুল ইসলাম (২২)। সে শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ (কালীবাড়ি) গ্রামের মৃত আবদুল করিমের ছেলে। আরিফ স্থানীয় কাওরাইদ বাজারের মাছ ব্যবসায়ী ছিলেন। ব্যবসার পাশাপাশি তিনি ফুটবল খেলতেন। এছাড়াও গাজীপুর মহানগরে অপর এক ঘটনায় একই রাতে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রকে হত্যা করেছে তারই খালাতো ভাই নবম শ্রেণীর এক ছাত্র।
শ্রীপুর মডেল থানার ওসি আসাদুজ্জামান ও স্থানীয়রা জানান, গত মঙ্গলবার বিকেলে কাওরাইদ কালী নারায়ণ (কে.এন.) উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত হয়। আরিফুল একটি পক্ষের খেলোয়াড় হিসেবে ওই খেলায় অংশ নেন। ওই সময় আরিফুলের সঙ্গে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড় নয়ন ওরফে বুলেট নয়নের বাকবিতন্ডা হয়। বাকবিতন্ডার একপর্যায়ে আরিফুলকে হত্যার হুমকি দেয় সন্ত্রাসী নয়ন ও তার সহযোগীরা। এর জের ধরে বৃহষ্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে স্থানীয় বেলদিয়া পূর্ব পাড়া গ্রামের মৃত আবুল শেখের ছেলে সন্ত্রাসী নয়ন কাওরাইদ বাজার এলাকা থেকে আরিফুলকে ডেকে পার্শ্ববর্তী কাওরাইদ কালী নারায়ণ (কে.এন.) উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নিয়ে যায়। সেখানে নয়ন ও তার সহযোগী সৌরভ, নিশাত ও পাপেলসহ কয়েক সন্ত্রাসী দা’ দিয়ে আরিফুলকে এলোপাতাড়ি কোপায় এবং রড ও লাঠিসোটা দিয়ে বেধড়ক মারধর করে। এসময় গুরুতর আহত আরিফুল আত্মরক্ষার জন্য সেখান থেকে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে সন্ত্রাসীরা তাকে কাওরাইদ রেল ষ্টেশনের পাশে ধরে ফেলে এবং জনসম্মূখে দ্বিতীয় দফায় মারধর করে ও কোপায়। এতে আরিফুল নিস্তেজ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে সন্ত্রাসীরা ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। পরে এলাকাবাসি তাঁকে উদ্ধার করে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে। খবর পেয়ে পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ইসরাত জাহান বলেন, আরিফুলকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। তার মাথা ও কপালসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ও ঘাড়ের হাড় ভাঙ্গাসহ মারধরের চিহ্ন রয়েছে।
শ্রীপুর মডেল থানার এসআই মুজিবুল হক বলেন, হত্যাকান্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
অপর ঘটনায় জয়দেবপুর থানার কোনাবাড়ী পুলিশ ক্যাম্পের এএসআই আকরাম হোসেন জানান, জামালপুর সদর উপজেলার রামনগর এলাকার সুজন মিয়া স্ত্রী সন্তান নিয়ে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের জরুন এলাকায় জুলহাসের বাসায় ভাড়া থাকে। সুজন ও তার স্ত্রী স্থানীয় পোশাক কারখানায় চাকুরী করেন। তাদের ছেলে মাজেদুল (১১) স্থানীয় একটি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র। একই এলাকায় পাশের বাসায় মাজেদুলের খালাতো ভাই নূরনবী (১৫) বাবা-মা’র সঙ্গে ভাড়া থাকে। নূরনবী জামালপুর সদর উপজেলার রশিদপুর এলাকার আলাল মিয়ার ছেলে এবং স্থানীয় একটি স্কুলের ৯ম শ্রেণীর ছাত্র। প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবার মাজেদুলের বাবা-মা তাদের চাকুরীস্থলে যায়। বাবা-মায়ের অনুপস্থিতির সুযোগে রাতে মাজেদুলকে বাসায় ডেকে নেয় নূরনবী। এসময় মাজেদুলকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায় তার খালাতো ভাই নুরনবী। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। কি কারনে এ হত্যাকান্ড ঘটেছে তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায় নি। তবে ঘটনার পর থেকে নূরনবী পলাতক রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে
গাজীপুরে এক চিকিৎসক তার পরিবারের নিরাপত্তা চেয়েছেন ॥
গাজীপুর সংবাদদাতাঃ গাজীপুরে হত্যা চেষ্টার মামলা প্রত্যাহার না করায় আসামীদের ভয়ে এক চিকিৎসক ও গার্মেন্টস কর্মী দম্পতি তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। স্বামী-সন্তানসহ পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে ওই চিকিৎসক শুক্রবার গাজীপুুর সিটি প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে।
চিকিৎসক রাশিদা আক্তার সংবাদ সম্মেলনে জানান, গাজীপুর জেলার সদর উপজেলার বানিয়ারচালা ভবানীপুর মোশারফ টেক্সটাইল গেইট এলাকার মোতাহার মিয়ার বাড়িতে স্বামী এসএমএ আল মাহমুদ ও দু’সন্তানকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকেন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক রাশিদা। তার স্বামী স্থানীয় মোশারফ টেক্সটাইল ফ্যাক্টরীতে চাকুরী করেন এবং তিনি এলাকায় হোমিওপ্যাথির চিকিৎসা করেন। গত কিছুদিন আগে মোবাইলে ফ্ল্যাক্সিলোড করাকে কেন্দ্র করে পার্শ্ববর্তী ব্যবসায়ী মাজাহারুল ইসলামের বাকবিতন্ডা হয়। এসময় রাশিদার ছেলেকে মারধর করে ওই ব্যবসায়ী। এ ঘটনার জেরে মাজহারুল ইসলাম লোকজন নিয়ে রাশিদার বাসায় হামলা চালিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা, শ্লীলতাহানী এবং পরিবারের সদস্যদের মারধর করে। এসময় হামলাকারীরা বাসা থেকে বিভিন্ন মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় ফ্ল্যাক্সি লোড ব্যবসায়ী মাজাহারুল ইসলাম সহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে জয়দেবপুর থাানায় মামলা দায়ের করেন রাশিদা। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই মোঃ আব্দুল মোমিন তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এ ঘটনায় আসামীপক্ষ ক্ষিপ্ত হয়ে মামলা প্রত্যাহারের জন্য বাদীকে নানা হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাতে থাকে। কিন্তু মামলা প্রত্যাহারে অস্বীকৃতি জানালে আসামীরা মামলার বাদী ও তার পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে হয়রানী এবং হত্যা ও গুম করাসহ নানা হুমকী দেয়। এতে আসামীদের ভয়ে ওই দম্পতি ও পরিবারের সদস্যরা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরী করা হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা চেয়ে ওই চিকিৎসক প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের হস্তক্ষেপ করেছেন। সম্মেলনে রাশিদার স্বামী ও দু’সন্তান উপস্থিত ছিলেন।
কালিয়াকৈরে মোটর সাইকেল থেকে পড়ে
পুলিশের এক এসআইয়ের মৃত্যু
গাজীপুর সংবাদদাতাঃ গাজীপুরের কালিয়াকৈরে শুক্রবার পুলিশের এক এসআই চলন্ত মোটর সাইকেল থেকে পড়ে মারা গেছেন। তবে পুলিশের দাবী, মোটর সাইকেল চালানোর সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাটিতে পড়ে তিনি মারা যান। তার নাম- মোঃ দবির উদ্দিন (৫৫)। তিনি গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানায় কর্মরত ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি ঢাকা জেলার ধামরাই এলাকায়।
কালিয়াকৈর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার সকালে নিজের মোটরসাইকেল চালিয়ে একটি মামলার তদন্তের কাজে কালিয়াকৈরের বেনুপুর এলাকায় যাচ্ছিলেন থানার এসআই দবির উদ্দিন। পথে বলিয়াদী-বেনুপুর সড়কের বেনুপুর এলাকায় পৌছলে চলন্ত মোটর সাইকেলের উপর তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। এসময় তিনি মোটর সাইকেলসহ মাটিতে পড়ে যান। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার পুলিশের ওই এসআই’কে মৃত ঘোষনা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য শহীদ তাজ উদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। তবে হৃদরোগ না-কি সড়ক দূর্ঘটনার কারনে তার মৃত্যু হয়েছে ময়না তদন্তের পর তা নিশ্চিত হওয়া যাবে।