সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করছে ভারতীয় গরু #দাম নিয়ে বিপাকে দেশী খামারীরা #ক্ষতির সম্মুখিন ৫০ হাজার খামারি

আবু সাইদ বিশ্বাসঃসাতক্ষীরাঃ গরু বিক্রি নিয়ে বিপাকে সাতক্ষীরার খামারিরা। ভারতীয় গরু প্রবেশ করায় গরুর দাম পড়তে শুরু করেছে। এতে ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে অর্ধলক্ষাধিক খামারি। জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সুত্রে জানা যায়, জেলায় এবার ৩২ হাজার গরুসহ ৫৩ হাজার বিভিন্ন ধরনের পশু কোরবানির জন্য প্রস্তত করা হয়েছে। যা দিয়ে কোরবানির চাহিদা পুরণ হবে জেলা বাসির। খামারিরা জানান, জেলায় এবার যে পরিমান গরু মোটাতাজা করা হয়েছে তা জেলার চাহিদা মিটিয়ে বাইরে রপ্তানি করা যাবে।26
এদিকে সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে বৈধ ও অবৈধ পথে ভারত থেকে গরু আসছে। অবৈধ পথে বা চোরাচালানের মাধ্যমে কী পরিমাণ গরু আসছে তার হিসাব না থাকলেও বৈধ পথের একটি হিসাব রয়েছে কাস্টমসও ভ্যাট অফিসে। সাতক্ষীরা চারটি সীমান্ত দিয়ে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে গরু এসেছে ১ লাখ১৪ হাজার ৩৯৮ টি।
সাতক্ষীরা রজাস্ব কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ জানান, সাতক্ষীরা কুলিয়া, সোনাবাড়িয়া, সাতানি ও বসন্তপুর সীমান্ত দিয়ে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে এ পর্যন্ত গরু এসেছে ১ লাখ১৪ হাজার ৩৯৮ টি। এরমধ্যে ২০১৭ সালে জানুয়ারি মাসে এসেছে ২৫ হাজার ১ শত ৭৩ টি। ফেব্রুয়ারি মাসে এসেছে ১৫ হাজার ৫ শত ৪৭ টি। মার্চ মাসে ৩ হাজার ৫ শত ৯৯ টি। এপ্রিল মাসে ২৭৫ টি। মে মাসে ১ হাজার ৩ শত ৮২ টি জুন মাসে ২ হাজার ৫ শত ৭২ টি জুলাই মাসে ৩ হাজার ২ শত দুইটি ও আগষ্ট মাসে ৩ হাজার ৮ শত ৩৪ টি গরু সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
তিনি আর বলেন এছাড়া ২০১৬ অর্থবছরে জুলাই মাসে কুলিয়া সীমান্ত দিয়ে ১৮১১টি, সোনাবাড়িয়া সীমান্ত দিয়ে ৫৪৭ টি, সাতানি সীমান্ত দিয়ে ২০৮ টি ও বসন্তপুর সীমান্ত দিয়ে ১২৫৪ টি গরু এসেছে। সেপ্টেস্বর মাসে ৪৬৫০টি, অক্টোবর মাসে ১৫৪৮১টি, নভেম্বরে ১৬০৫৭টি ও ডিসেম্বরে ২০২০৭ টি গরু এসেছে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে দুই থেকে তিন শত গরু আসছে। এসব গরু কাষ্টম করিডোর করে বৈধ করা হয়। তাতে খরচ হয় ৫১০ টাকা। এরপর এসব গরু রাজধানি সহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে কিনে নিয়ে যায় ব্যাপারিরা।
এ হিসাবে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে এক হাজার ৬৭০টি গরু ও ৩২০টি ছাগল এসেছে। এ সংখ্যা ক্রমেই বাড়বে বলে কাস্টম ও গরু ব্যবসায়ীদের ধারণা।
তালা উপজেলার নগরঘাটা গ্রামের খামার মালিক ইবাদুল ইসলাম বলেন, ছয় মাস ধরে ৫২ টি গরু মোটাতাজা করেছেন। গড় প্রত্যয় তিনি প্রতিটি গরু কিনেছিলেন ৮৮ হাজার টাকা করে। তখন গরুর গায়ে মাংস ছিল ৫ মন করে। বর্তমানে প্রতিটি গরু বেড়ে ওজন হয়েছে ৮ মন করে। এসব গরু কুরবানির জন্য প্রস্তুত করেছিলেন খামার মালিক ইবাদুল ইসলাম। সম্প্রতি ভারত থেকে গরু আসায় জেলায় দেশি গরুর চাহিদা কমেছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন গরু ব্যাবসায়িরা খামারে এসে যে দাম বলছে তা ছয় মাস আগে কেনা দামের চেয়ে কম।
তিনি আরও বলেন ধীর্ঘদিন সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে গরু আসা বন্ধ ছিল। হঠাত করে গরু আসা শুরু করেছে। এভাবে যদি কুরবানি পর্যন্ত গরু আসে তাহলে দেশি খামার মালিকরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হবে।
সাতক্ষীরা শহরের মুনজিতপুর গ্রামের খামার মালিক জাহাঙ্গির হোসেন জানান, তার খামারে ১০ টি গরু কোরবানির জন্য মোটাতাজাকরন করেছেন। ইতিমধ্যে দুই একজন ব্যাবসায়ি খামারে এসে গরু দেখে গেছেন। তারা যে দাম বলেছেন সেটা খুবই কম। যদি উপযুক্ত দাম না পান তাহলে গরু বিক্রি করবেন না বলে তিনি জানান।
তিনি আরও বলেন, খামারের এসব গরুগুলোকে মোটাতাজা করতে ক্ষতিকর কোন ওষুধ ব্যবহার করা হয়না। বিচালি, জাওভাত ও পালিশ খাওয়ানো হয় গরুগুলোকে। নিয়মিত গোসল করানো হয়।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সমরেশ চন্দ্র দাশ বলেন, জেলায় ৩২ হাজার গরুসহ ৫৩ হাজার বিভিন্ন ধরনের পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যা দিয়ে কোরবানির চাহিদা পুরণ হবে জেলাবাসির। তবে ভারত থেকে যে পরিমান গরু আসছে তাতে জেলা খামার মালিকরা ক্ষতির সম্মুখিন হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সম্প্রতি ভারত থেকে গরু আসায় জেলায় খামর মালিকরা ক্ষতি গ্রস্ত হবে। পশুর যে পরিমান দাম পাওয়ার কথা হয়তো সে পরিমান তার নায্য মুল্যে পাবে না। খামার মালিকরা সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে তিনি স্বীকার করেন।
এবারের ঈদে কোরবানির পশুর দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হলেও কিছুদিন ধরে এ অঞ্চলের পশুর হাটগুলোতে ভারতীয় গরু আসা বেড়ে যাওয়ায় দাম ক্রেতাদের নাগালের আসতে শুরু করেছে। এতে অনেকটা খুশি পশু ক্রেতারা।
আবু সাইদ বিশ্বাসঃসাতক্ষীরা ঃ ১৯.৮.১৭

Check Also

সাতক্ষীরা শহর শখার ২ নং ওয়ার্ডের উদ্যোগে সভা অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি সাতক্ষীরা শহর শখার ২ নং ওয়ার্ড (রাজারবাগান ও সরকারপাড়া ইউনিট) এর উদ্যোগে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।