জল্লাদ’
প্রকাশ : ২০ আগস্ট, ২০১৭ ০৭:০৩ অপরাহ্ন
শীর্ষনিউজ, ঢাকা: আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আপনি গণতন্ত্র হত্যার প্রধান জল্লাদ।
রোববার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন রিজভী।
রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা ও স্বায়ত্তশাসনে বিশ্বাস করে না, তারা শুধু আয়ত্বশাসনে বিশ্বাসী। অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো আয়ত্বে নিতে এখন উচ্চতর আদালতকে সম্পূর্ণরূপে আয়ত্বে নেয়ার জন্য তারা বেহুঁশ হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় প্রকাশের পর গদি হারানোর ভয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগ। তাই তারা বিচার বিভাগকে চাপে রাখতে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে। বেসামাল হয়ে আওয়ামী লীগের নেতা ও মন্ত্রীরা ক্রমাগতভাবে বিচার বিভাগকে আক্রমণ করে হুমকি দিয়ে নৈরাজ্যকর বক্তব্য দিচ্ছে।
রিজভী বলেন, নজিরবিহীনভাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রধান বিচারপতির বাসায় নৈশভোজের নামে বৈঠকের পর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, দলের সাধারণ সম্পাদক এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের বৈঠক হয়, বৈঠকে তারা প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে পদত্যাগে বাধ্য করার জন্য প্রচ- চাপ সৃষ্টি করেছেন বলে এখন চারদিকে মানুষের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
‘কারণ রায়ের পর্যবেক্ষণ এক্সপাঞ্জ চেয়ে আওয়ামী লীগ যে দাবি জানিয়েছে, সেটা আইনগতভাবে অসম্ভব। এটা এক্সপাঞ্জ করার সুযোগও নেই। সুপ্রিমকোর্ট যা বলবেন, সেটাই সংবিধান,’ বলেন রিজভী।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আরও বলেন, বিচারকদের কাজই হচ্ছে বিস্তারিত বর্ণনার মাধ্যমে সংবিধানের অর্থ পরিষ্কার করা। দেশে গণতন্ত্রের যে শূন্যতা বিরাজ করছে, যেভাবে বিনা ভোটে বিতর্কিত সংসদ গঠন করা হয়েছে, দেশজুড়ে যে ভয়াল দুঃশাসন চলছে, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর্যবেক্ষণে সুপ্রিমকোর্ট তা পরিষ্কার করেছেন।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘‘ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়কে বিতর্কিত করতে আওয়ামী লীগ ব্যর্থ হয়ে লবিস্ট নিয়োগ করছে। সাবেক বিচারপতি খায়াংল হকসহ আরো কিছু লোক তাদের দলীয় লবিস্ট হয়েই কাজ করছেন। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার কলঙ্ক তিলক হচ্ছেন খায়রুল হক।”
“এই (খায়রুল হক) ব্যক্তিটি অর্থের বিনিময়ে, চাকরির বিনিময়ে নীতি, ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচার ক্ষমতাসীনের পদতলে বিলিয়ে দিয়েছেন। এই ব্যক্তিটি নিজের মানসম্মান সম্পর্কে সচেতন নন,” বলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব।
তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হককে দিয়েই গণতন্ত্রকে হত্যা করেছেন। দেশকে বিশৃঙ্খল ও সংঘাতের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। সেই লোকটি আবারও নির্লজ্জের মতো গতকাল বলেছেন ‘ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় বিরাগ থেকে করা হয়েছে কি না বিবেচনা করুন, প্রধান বিচারপতির শপথ ভঙ হয়েছে কিনা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন’।’’
সাবেক প্রধান বিচারপতির উদ্দেশ্যে রিজভী বলেন, ‘খায়রুল হক সাহেব আপনি নিজেকে নিজে খতিয়ে দেখুন, আপনি কী সর্বনাশ করেছেন এ দেশের। আপনি গণতন্ত্র হত্যার প্রধান জল্লাদ। অবসরের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায়ে স্বাক্ষর করে আপনি দেশকে এক নিষ্ঠুর কর্তৃত্ববাদী শাসনের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। গণতন্ত্রের সকল প্রতিষ্ঠান ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে। শুধু একজন ব্যক্তির ইচ্ছাকে সন্তুষ্ট করতে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিজের বিবেককে কলুষিত করেছেন।
রিজভী বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের টাকা নিয়ে শপথ ভঙ করেছিলেন বলেই গতকাল আপনি বর্তমান বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। দেশের জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। এবারে আপনি কত টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগের লবিস্ট হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন, জনগণ তা জানতে চায়।” “বর্তমান প্রধান বিচারপতি ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন তা বিদ্যমান দুঃসময়ে লাখ লাখ কণ্ঠে কোটি কোটিবার উচ্চারিত অনুভূতিরই বহিঃপ্রকাশ,’ যোগ করেন রুহুল কবির রিজভী।