পাবনা: পাবনার সুজানগরে দুই স্কুলছাত্রীকে অপহণের পর গণধর্ষণ ও ভিডিও ধারণ করে তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয় প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ পরিবারের ছয় যুবক। এ ঘটনায় ধর্ষণের শিকার দুই স্কুলছাত্রী বাদী হয়ে ক্ষমতাসীন দলের ৬ ক্যাডারকে আসামি করে আদালতে মামলা দায়ের করেছে।
রোববার দুপুরে পাবনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত বিচারক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো: ইমরান হোসেন চৌধূরী মামলা গ্রহণ করে আসামিদেরকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন। মামলা নম্বর ১২৫ ও ১২৬।
মামলার আসামিরা হচ্ছেন, ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডার হযরত আলী, আল আমিন, শাহিন, মিঠুন, পাংকু ও সোহেল রানা।
জানা গেছে, সুজানগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধাারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র আব্দুল ওয়াহাবসহ স্থানীয় প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ধর্ষিতাদের পরিবারকে নানা রকম হুমকি এবং দফায় দফায় সালিশ বৈঠকের নামে সময় ক্ষেপণ করার ১৯ দিন পর অসহায় পরিবার দু’টি আদালতের শরণাপন্ন হয়েছে সুবিচারের আশায়।
মামলর বাদী পক্ষের আইনজীবী রাজিউল্লাহ সরদার রঞ্জু শীর্ষনিউজকে বলেন, সুজানগর থানা পুলিশ মামলাগ্রহণ না করায় রোববার আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি গ্রহণ করায় আমরা ন্যায় বিচার পাব বলে আশা করছি।
মামলার বিবরণে উল্লেখ করা হয়েছে, সুজানগর পৌর এলাকার চর ভবানীপুর গ্রামের দরিদ্র পরিবারের সন্তান সুজানগর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ওই দুই ছাত্রী ১ আগস্ট বিকেলে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে ৬ বখাটে চর ভবনীপুর মাষ্টারপাড়ার হযরত আলী, আল আমিন, শাহিন, মিঠুন, পাংকু ও সোহেল রানা মিলে জোরপূর্বক অস্ত্রের মুখে তাদের অপহরণ করে পাশের নিকিরী পাড়ার একটি বাঁশ বাগানে নিয়ে যায়। সেখানে বখাটেরা জোরপূর্বক পালাক্রমে ওই দুই ছাত্রীকে গণধর্ষণ করে এবং মোবাইলে সেই ভিডিও চিত্র ধারণ করে রাখে। ঘটনাটি কাউকে জানানো হলে ধর্ষণের ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেয় ধর্ষকরা।
দুই ছাত্রী বিষয়টি ভয়ে প্রথম দিকে গোপন রাখে। ঘটনার কয়েক দিন পর ভিডিও চিত্র দেখিয়ে পুনঃরায় তাদের সাথে যাওয়ার প্রস্তাব দিলে তারা তা প্রত্যাখান করে। এরপর বখাটেরা ওই ভিডিও চিত্র ফেসবুকে আপলোড করলে মুহূর্তেই ভাইরাল হয় ওই ভিডিও।
বিষয়টি জানা জানি হলে, ওই দুই ছাত্রীর অভিভাবকরা থানায় বখাটেদের বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে সুজানগর থানার ওসি মামলা গ্রহণ না করে তাদের ফিরিয়ে দেন।
পরে বিষয়টি নিয়ে পৌর মেয়রের কাছে ওই দুই ছাত্রীর দরিদ্র পিতা-মাতা বিচার দাবি করলেও তিনি কৌশলে সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে সময় ক্ষেপণ করেন এবং আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ তাদেরকে হুমকি-ধামকী দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়েই তারা ঘটনার ১৯ দিন পর আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।
ঘটনার স্বীকার দুই ছাত্রী মামলায় উল্লেখ করেন, ওই ঘটনার পর থেকে বখাটেদের হুমকির মুখে আমরা বাড়ির বাইরে যেতে পারছি না এবং কাউকে মুখ দেখাতে পারছি না। সুষ্ঠু বিচার না পেলে আমাদের আত্মহত্যা করা ছাড়া কোনও উপায় নেই।
এ ব্যাপারে ওই দুই ছাত্রীর পিতা-মাতা জানান, আমরা গরিব মানুষ। বখাটেরা প্রভাবশালী আওয়ামী লীগের পরিবারের সন্তান ও আওয়ামী লীগ নেতা পৌর মেয়রের ক্যাডার। যে কারণে থানা পুলিশ ও মেয়রের নিকট আমরা কোনও বিচার পাইনি। এ ঘটনার পর থেকে আমারা সমাজে মুখ দেখাতে পারছি না।
আদালতের নিকট বখাটেদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান তারা।
সুজানগর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শাহিনুজ্জামান শাহিন শীর্ষনিউজকে বলেন, বখাটেরা পৌর মেয়রের ক্যাডার হওয়ার কারণে থানা মামলাটি গ্রহণ করেনি। আমরা কোর্টে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছি তাদের। এই ঘটনার পর থেকেই ওই দুই ছাত্রী বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। তারা চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হওয়া উচিৎ।
এ ব্যাপারে সুজানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওবায়দুল হক জানান, এ ধরনের কোনও অভিযোগ কেউ আমার নিকট নিয়ে আসে নায়।
সুজানগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধাারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র আব্দুল ওয়াহাব ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে শীর্ষনিউজকে বলেন, মেয়ে দু’টির অভিভাবকরা আমার নিকট এসেছিল। এটা নিয়ে কয়েক দফা সালিশ বৈঠকও হয়েছে। কিন্তু কোনও সমাধান হয়নি।
বখাটেরা তার কর্মী বা সমর্থকের বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, তারা আওয়ামী পরিবারের ছেলে হলেও আমার লোক নয়। এ ঘটনার সাথে আমাকে জড়িয়ে একটি মহল মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে।